জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ দলের বাংলাদেশি সদস্য বিজ্ঞানী লামিয়া
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:২৩ পিএম, ১৩ জুলাই ২০২২ বুধবার | আপডেট: ০৬:০০ পিএম, ১৩ জুলাই ২০২২ বুধবার
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লামিয়া আশরাফ মওলা পেশায় একজন অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট। তিনি নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ দলের একজন গর্বিত সদস্য।
এই টেলিস্কোপের মাধ্যমেই ধারণকৃত মহাবিশ্বের সবচেয়ে সুস্পষ্ট ও রঙিন ছবি প্রকাশিত হয়েছে।
এক হাজার ৩০০ কোটি বছর আগে বহুদূরের গ্যালাক্সিগুলো দেখতে যেমন ছিল, সেই ছবি আমাদের মহাবিশ্বের সূচনালগ্ন সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা দেবে বলে ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।
হোয়াইট হাউসের এক অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই ছবিটি প্রকাশ করেন। তিনি এই ঘটনাকে একটি 'ঐতিহাসিক' মুহূর্ত হিসেবে অভিহিত করে বলেন, 'এটি আমাদের মহাজাগতিক ইতিহাসে একটি নতুন জানালা খুলে দিয়েছে।'
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি) প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার জ্যোতির্বিদ কাজ করছেন। লামিয়া তাদের একজন।
লামিয়া জেডব্লিউএসটির কানাডিয়ান দলের সঙ্গে ২০২০ সাল থেকে কাজ করছেন।
প্রকল্পে নিজের ভূমিকা সম্পর্কে লামিয়া বলেন, 'আমি গ্যালাক্সিগুলোর গঠন নিরীক্ষা করার জন্য বিশ্লেষণী পাইপলাইন তৈরি করেছি।'
ওয়েলসলি কলেজ থেকে অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন লামিয়া। এরপর তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালে একজন ফেলো হিসেবে কানাডার ডানল্যাপ ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে কাজ করেন তিনি।
এই তরুণ বিজ্ঞানী জানান, শুরুতে তিনি নিজের জন্য ভিন্ন ক্যারিয়ার গড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে একটি টেলিস্কোপ তার জীবনকে বদলে দেয়।
লামিয়া দেশের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ও এবং এ লেভেল পাস করে নিউরোসায়েন্সে মেজর করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান।
তিনি বলেন, 'আমি নিউরোসায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলাম। কারণ মানুষের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে, সে বিষয়ে আমি কৌতূহলী ছিলাম।'
'(কিন্তু) আমি সবসময় সব কিছুতে যুক্তি খুঁজতাম, আর পদার্থবিজ্ঞান মানেই যুক্তি।'
অন্য কোনো বাংলাদেশি এ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত আছেন কি না, জানতে চাইলে লামিয়া বলেন, 'কানাডার ১৫ সদস্যের দলে আমিই একমাত্র বাংলাদেশি। তবে (বিভিন্ন দেশের) ১ হাজার জ্যোতির্বিদ এ প্রকল্পে কাজ করছে। তাদের মাঝে আরও বাংলাদেশি খুঁজে না পেলে আমি খুবই অবাক হবো।'
একজন বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি জানান, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও ব্যবহারিক জ্ঞানের ওপর আরও জোর দেওয়া উচিত।
'আমরা মুখস্থ বিদ্যার ওপর বেশি জোর দেই, যেটি খুবই বিপদজনক। আমাদেরকে এই চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত গবেষণার ওপর জোর দেওয়া এবং এ ক্ষেত্রে সরকারের উচিত অগ্রগামী ভূমিকা নেওয়া', যোগ করেন তিনি।
'শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করতে উদ্বুদ্ধ করা উচিত। তারা যত বেশি প্রশ্ন করবেন, তত বেশি শিখতে পারবেন', যোগ করেন লামিয়া।
লামিয়া আরও বলেন, 'সরকারের উচিত বাংলাদেশে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যাতে এ ধরনের সহায়তা খুব সহজে দেওয়া যায়। যদি সরকার গবেষণা-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে পারে, তাহলে শিক্ষার্থীরা দেশ ছেড়ে যাবে না।'
বিজ্ঞানখাতে নারীদের অবস্থান নিয়ে লামিয়া জানান, বাংলাদেশি নারী শিক্ষার্থীরা যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় প্রস্তুত।
'আমি দেশের নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে খুবই গর্বিত। আমাদের দেশে এখন শুধু তাদেরকে বিকশিত হতে দেওয়ার মতো একটি উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন', যোগ করেন তিনি।
নিজের এই যাত্রায় প্রেরণা হিসেবে মায়ের কথা উল্লেখ করে উত্তর আমেরিকা প্রবাসী বিজ্ঞানী লামিয়া বলেন, 'আমার মা আমার অনুপ্রেরণা এবং তার সহায়তা ছাড়া আমি কিছুই অর্জন করতে পারতাম না।'
এসবি/