ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

অধ্যক্ষকে পিটিয়ে আলোচনায় রাজশাহীর এমপি ওমর ফারুক

রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধি, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪২ এএম, ১৪ জুলাই ২০২২ বৃহস্পতিবার

কলেজের এক অধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগ ওঠার পর আলোচনায় উঠে এসেছেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী।

সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে তিনি সবার সামনেই পিটিয়েছেন। তবে অধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংসদ সদস্য ওমর ফারুক।  

এদিকে ঘটনা তদন্তে বুধবার তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ৭ জুলাই রাতে রাজশাহী নগরীর নিউমার্কেট সংলগ্ন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন ওমর থিম প্লাজার এমপির চেম্বারে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন কলেজের আরও সাতজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ১৫ মিনিট সময় ধরে সবার সামনে অধ্যক্ষকে পিটিয়ে জখম করলেও এমপির হুংকারে কেউ তাকে বাধা দিতে সাহস পায়নি।

ওই শিক্ষককে লাথি, কিল-ঘুসির পাশাপাশি হকিস্টিক দিয়ে পেটানো হয়। মারধরে তার তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালশিটেও পড়ে যায়। ঘটনার পর প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ওই অধ্যক্ষ রাজশাহী নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানা এলাকার রায়পাড়ায় তার নিজ বাসায় চলে যান। তবে তিনি লজ্জা ও আতঙ্কে কোথাও অভিযোগ করেননি। 

জানা যায়, গোদাগাড়ীর মাটিকাটা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুল আউয়াল রাজু ফোন করে বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের ৭ জুলাই রাত ৯টায় থিম ওমর প্লাজায় এমপির চেম্বারে উপস্থিত হতে বলেন। অধ্যক্ষ রাজু এমপি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তার ফোন পেয়ে রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাসহ আটজন অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ এমপি ফারুকের চেম্বারে হাজির হন।

এমপি ফারুক প্রথমেই অধ্যক্ষ সেলিম রেজার কাছে জানতে চান তার কলেজের কিছু শিক্ষক একজন অধ্যক্ষ ও দলীয় নেতার স্ত্রীকে নিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা বলেছেন। প্রিন্সিপাল হিসাবে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন।

জবাবে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বলেন, “যদি আপনার কাছে প্রমাণ থাকে আমি তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না।“

এরপর এমপি তার ফোনের রেকর্ড অন করে বিষয়টি অধ্যক্ষ সেলিমকে শুনতে বলেন। এরই মধ্যে এমপি ফারুক ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। সেলিম রেজাকে ধরে প্রথমেই তার বাম চোখের নিচে ঘুসি মারেন। এরপর চলতে থাকে কিল ঘুসি ও লাথি। 

এক পর্যায়ে অধ্যক্ষদের একজন সেলিমকে এমপির কব্জা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চেম্বার থেকে বের করে নিয়ে যায়। 

মঙ্গলবার বিকালে বিষয়টি জানাজানি হলে সন্ধ্যার পর অধ্যক্ষ সেলিম রেজার সঙ্গে কথা বলতে তার বাসায় যান সাংবাদিকরা। প্রথমে কথা বলতে অস্বীকার করলেও পরে আগাগোড়া ঘটনার বিবরণ দেন তিনি।

“সোমবার বিকালে এমপির ঘনিষ্ঠ গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক বেলাল উদ্দিন সোহেল আমার বাসায় আসেন। তিনি হোয়াটসঅ্যাপে এমপির সঙ্গে কথা বলেন। পরে আমাকে ফোন ধরিয়ে দেন। এ সময় এমপি সাহেব ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এমপি সাহেব সময় করে আমাকে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেছেন।”

তিনি বলেন, “যেহেতু তিনি (এমপি) দুঃখ প্রকাশ করেছেন তাই আমিও আর কিছু বলছি না। কোথায় অভিযোগও করিনি।”

রাজশাহী জেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, “একজন এমপির কলেজ শিক্ষককে এভাবে পেটানো ন্যাক্কারজনক ঘটনা। তার কোন অপরাধ থাকলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া যেত। কিন্তু সবার সামনে এমপি একজন অধ্যক্ষকে এভাবে পেটাতে পারেন না। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”

মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকরা যোগাযোগ করলে কলেজ অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে পেটানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। 

তিনি বলেন, “ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে আমার চেম্বারে তারা অনেকেই এসেছিলেন। নিজেরা মারামারি শুরু করলে আমি গিয়ে তাদেরকে থামাই।“

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি গঠন

রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। তিন সদস্যের এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেনকে।

বুধবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ দপ্তর) আতাউর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধরের ঘটনা জানার পরই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। কমিটিকে যত দ্রুত সম্ভব সরেজমিনে গিয়ে ঘটনা সবিস্তার জেনে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেন তিনি।

আরএমএ