লঙ্কাকাণ্ড থামাতে পারবেন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:৫৫ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২২ বৃহস্পতিবার
এতো দ্রুত দৃশ্যপট পাল্টে যাবে, তা বোধ হয় রনিল বিক্রমাসিংহে নিজেও ভাবেননি। অর্থনৈতিক সঙ্কটে ধুঁকতে থাকা লঙ্কান জনগণের রোষের মুখে মাহিন্দা রাজাপাকসে দায়িত্ব ছাড়লে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
সম্প্রতি দ্বিতীয় দফা বিক্ষোভের মুখে সেই দায়িত্বও ছাড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা তো হলই না, উল্টো মাহিন্দার ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পলায়নের পর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও কাঁধে এসে পড়েছে রাজাপাকসের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রনিলের।
জটিল পরিস্থিতিতে এখন যে প্রশ্নটি ঘুরেফিরে আসছে সেটি হলো- ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট কি পারবেন লঙ্কা রাজ শান্ত করতে?
গোতাবায়া পদত্যাগ না দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে যেন রনিলের এই ভারপ্রাপ্ত ক্ষমতাকে আরো দুর্বল জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
বিরোধী এমপি ও ঝানু রাজনীতিবিদ রনিল বিক্রমাসিংহে ছয় ছয়বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকলেও কোনোবারই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। সবশেষ মাহিন্দা রাজাপাকসে ক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হলে প্রধানমন্ত্রীত্ব পান রনিল।
ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমেই তাকে করতে হয়েছে সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারি করার মতো তিক্ত একটি কাজ। কলম্বোতে নিজের বাসভবনে বিক্ষোভকারীদের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েই তাকে জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়। টেলিভিশন ভাষণে তিনি আন্দোলনকারীদের ‘ফ্যাসিস্ট’ বলেও উল্লেখ করেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা যেহেতু জানে যে, তিনি রাজাপাকসের ঘনিষ্ঠ, তাই তার পদত্যাগের দাবিও উঠেছে।
গত শনিবার তার বাসভবনে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা। তবে তখন তিনি সেখানে ছিলেন না।
এপ্রিলের শুরু থেকেই কলম্বোতে বিক্ষোভ দানা বাঁধছিল। পরে তা বাড়তে বাড়তে ছড়িয়ে যায় পুরো দেশজুড়ে। জনবিক্ষোভের মূলে ছিল বিদ্যুৎসহ জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সঙ্কট। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করার মতো বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভও ফুরিয়ে আসছিল দ্রুত।
অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য রাজাপাকসে সরকারের ওপর ক্ষোভ জমতে জমতে শেষ পর্যন্ত তা বিস্ফোরিত হয়, যার উত্তাপে প্রাণ যায় নয়জনের।
সেই বিস্ফোরণের অঅগুন কতটা নেভাতে পারবেন রনিল বিক্রমাসিংহে?
পেশায় আইনজীবী রনিলের পরিবারে রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীই বেশি। তিনি প্রথম এমপি হন ১৯৭৭ সালে এবং ১৯৮৯ সালে রানাসিংহে প্রেমাদাসা প্রেসিডেন্ট হলে দ্রুতই দলের সামনের সারিতে চলে আসেন। রনিল প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৩-৯৪ সালে।
সন্দেহভাজন তামিল টাইগারদের হাতে গামিনি দিশানায়েকে নিহত হওয়ার পর তিনি ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতৃত্বে আসেন ১৯৯৪ সালে।
বিদ্রোহীদের হিটলিটে ছিলেন তিনিও। একবার এপ্পাওয়ালা শহরে এক জনসভায় বোমার বিস্ফোরণ ঘটনানো হলে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
দুর্নীতিবাজ সদস্যদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করে দলের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করতে পেরেছিলেন রনিল। তৃণমূলে দলকে শক্তিশালী করতে গ্রামেগঞ্জেও ঘুরে বেরিয়েছেন।
গৃহযুদ্ধের পর নতুন শতকে তার প্রেসিডেন্ট পদে আসার উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হলেও একটি ঘটনা তাতে পানি ঢেলে দেয়। সেটি হলো ২০১৯ সালে ইস্টার সানডের বোমা হামলা। যে হামলায় প্রাণ হারিয়েছিল আড়াই মানুষ। রনিল তখন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেছিলেন, হামলার বিষয়ে গোয়েন্দা বার্তা সম্পর্কে তিনি সতর্ক ছিলেন না।
ফলাফল যা হওয়ার তাই হলো। সবশেষ নির্বাচনে তার ক্ষমতাসীন দল মাত্র একটি আসন পায় সংসদে, আর সেটি তার নিজের। তার প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে বিরোধিরা যে প্রশ্ন তুলেছল, নির্বাচনের ফলাফল যেন সেটিকেই উস্কে দিয়েছিল।
রনিলের ওপর জনগণের ক্ষোভের একটিই মূল কারণ, সেটি হচ্ছে রাজাপাকসে পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। লঙ্কানদের ধারণা, ২০১৫ সালে যখন তারা ক্ষমতা হারিয়েছিল, তখন রিনলই তাদেরকে সুরক্ষা দিয়েছিলেন।
নতুন করে দৃশ্যপটে আসার পরই রনিল বিক্রমাসিংহে যেকোনো মূল্যে বিক্ষোভ থামানোর নির্দেশ দিয়েছেন সেনা ও পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত নতুন একটি কমিটিকে।
কিন্তু পরিস্থিতি এখন এতটাই বড় আকার নিয়েছে যে সেটি সামাল দেওয়ার মতো ব্যবস্থা কী হতে পারে তা নিশ্চিত নয়, আর রনিল বিক্রমাসিংহে সেটি করার মতো ব্যক্তি কিনা তাও বোঝা যাচ্ছে না।
এএইচএস