ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

গৌরবের প্রতীক ইন্ডিয়ান ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ

স্মৃতি মণ্ডল, ভারতের তামিলনাড়ু থেকে ফিরে

প্রকাশিত : ০১:৩৬ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২২ সোমবার | আপডেট: ০৬:২৪ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২২ সোমবার

নীলগিরি পর্বতমালার কোলে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর উদাগামগুলম বা উটি মেঘ পাহাড়ে ঘেরা এক সমৃদ্ধ জনপদ। চা বাগান আর পাইনে মোড়া উটির গায়ে এখনো লেগে আছে ব্রিটিশ উপনিবেশের গন্ধ। 

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আড়াই হাজার মিটার উঁচুতে অবস্থান উটির। কখনো মেঘ, কখনো বৃষ্টি আবার কখনো ঝলমলে রোদের বাহারি রূপে সাজে এই পাহাড়ি উপত্যকা। এই পাহাড়েই ওয়েলিংটনে গড়ে উঠেছে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর স্টাফ কলেজ- ইন্ডিয়ান ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ। 

১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কলেজটি। সুবিন্যস্ত আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ইন্ডিয়ান ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজের বিভিন্ন ভবনের নামকরণ করা হয়েছে দেশের জন্য আত্মদানকারী বীর শহিদদের স্মরণে তাদের নামানুসারে। ১৯৭৪ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে প্রথম সেনা কর্মকর্তা হিসেবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ মতিন এই স্টাফ কলেজ থেকে প্রশিক্ষণ নেন। 

বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনীর তিনজন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ১৯৭৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত  ৯৬ জন বাংলাদেশি কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাহিনীতে নিয়োজিত মেধার যোগ্যতায় নির্বাচিত সুপার হিরোদের এই স্টাফ কলেজে পাঠানো হয় প্রশিক্ষণের জন্য। বছরে দুইবার প্রশিক্ষণের জন্য সেরাদের বেছে নেয় কলেজটি। প্রতি ব্যাচে ৫শ’ প্রশিক্ষণার্থী, যেখানে ৫০ জন বিদেশি কর্মকর্তা, প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। 

দশ বছর সার্ভিসে থাকার পর পরবর্তী ২০ বছরের জন্য প্রস্তুত করা হয় তাদের; প্রশিক্ষণ চলে টানা দশ মাস। টিকে থাকার লড়াইয়ে শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিমত্তা প্রতিটি মাপকাঠিতে সেরা হিসেবে গড়ে তোলা হয়। 

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে আটদিন সফরের অংশ হিসেবে গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ২০ জনের মিডিয়া প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করে ওয়েলিংটনের ইন্ডিয়ান ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ। উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর পাশাপাশি কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে বর্তমান অবস্থা স্লাইডের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় সাংবাদিকদের কাছে। 

জানা যায়, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ এই স্টাফ কলেজ। যেখানে একটি ভবনে সব ধর্মের প্রার্থনাস্থল রাখা হয়েছে। হিন্দু, মুসলিম, শিখ কিংবা খ্রিস্টান সবাই নিজ ধর্মের রীতি অনুযায়ী প্রার্থনা করেন। 

সমান সুযোগ এবং মর্যাদা নিয়ে এখানে প্রশিক্ষণে এগিয়ে নারী কর্মকর্তারাও। এই স্টাফ কলেজ থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া কর্মকর্তাদের অনেকেই  নিজ নিজ দেশে সর্বোচ্চ সম্মান অর্জন করে সফলতার শিখরে আরোহন করেছেন। বিষয়টি গর্বের সাথে স্মরণ করে স্টাফ কলেজ। 

প্রতিবেশী চীন কিংবা পাকিস্তান থেকে প্রশিক্ষণের জন্য এখানে আসে কিনা এমন প্রশ্নে কলেজটির এক প্রশিক্ষক বলেন, তারা আসতে চাইলে কোনো আপত্তি নেই। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ থেকেই সেনাবাহিনীর সদস্য এখানে প্রশিক্ষণের জন্য আসেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। জ্ঞানকে ধারণ করে যুদ্ধ এই শ্লোগানে সকলে মিলেমিশে কাজ করতে চায় ভারত, কোন বৈরিতা চায়না। 

স্টাফ কলেজের প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের ভারতের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং শিল্পসমৃদ্ধ ১৩টি স্থানে পাঠানো হয়। যাতে যেকোনো বিরূপ পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে পারে সেভাবে প্রস্তুত করা হয়। বিশ্বব্যাপী গৌরব আর মর্যাদার সাথে উচ্চারিত হয় পাহাড়ী উপত্যকা ওয়েলিংটনের ইন্ডিয়ান ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজের নাম।

এএইচএস