ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

পাকিস্তানী মেয়ের বাঁকা ঘাড় সোজা হল ভারতে

একুশে টেলিভিশন  

প্রকাশিত : ১২:১৫ পিএম, ২৬ জুলাই ২০২২ মঙ্গলবার

পাকিস্তানের ১৩ বছরের শিশুর নাম আফসিন গুল। গুলের ছোট বেলায় তার বোনের কোল থেকে পড়ে ৯০ ডিগ্রি কোনে ঘাড় কাত হয়ে গিয়েছিল। গত ১২ বছরে সেই ঘাড় সোজা হয়নি। ফলে স্কুল যাওয়া বা পড়াশোনা করার মতো আর যা যা তার বয়সি মেয়েরা করে থাকে, তার কোনও কিছুই করা হয়নি আফসিনের। আর এবার সেই পাকিস্তানের মেয়ের ঘাড় বিনামূল্যে ঠিক করলেন ভারতীয় চিকিৎসক।

১৩ বছরের আফসিন গুল কতদিন বাঁচবে, বা আদৌ বাঁচবে কি না— তা তার পরিবার জানত না। তবে সম্প্রতি একটি ঘটনা রাতারাতি জীবন বদলে দিল বছর ১৩-র কিশোরীর।

বাঁকা ঘাড়ের যন্ত্রণা আর অন্যান্য নানা সমস্যা সহ্য করতে করতেই শিশু আফসিন বালিকা থেকে কিশোরী হয়েছে। বিরল রোগের বহু চিকিৎসা করিয়েছিল পরিবার। প্রতিকার হয়নি। আর্থিক অভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারটি মেয়ের চিকিৎসায় বেশি খরচ করতেও পারেনি আর।

শেষটায় সুস্থ হওয়ার আশা মেয়ের ভাগ্যের উপরেই ছেড়ে দেন বাবা-মা। তবে আফসিনের ভাগ্য সদয় হল। আর হল কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই। সম্প্রতি এক চিকিৎসক নিজে আফসিনকে সুস্থ করে তোলার প্রস্তাব দেন। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।

আফসিন পাকিস্তানের কন্যা। আর তাকে সারিয়ে তোলার প্রস্তাব যিনি দিয়েছিলেন তিনি ভারতীয় চিকিৎসক। নাম ডা. রাজাগোপালন কৃষ্ণণ। 

জানা যায়, আফসিনের বিষয়ে তিনি জানতে পারেন এক ব্রিটিশ সাংবাদিকের রিপোর্ট পড়ে। কৃষ্ণণ জানিয়েছেন, আফসিনের ওই দুর্ঘটনায় ঘাড় বেঁকে যাওয়ার পাশাপাশি সেরিব্রাল পালসিভও ছিল। যা তাকে ঠিক হতে দিচ্ছিল না। চিকিৎসা দুনিয়ায় এমন ঘটনা আগে কখনও হয়নি। তার পরও আফসিনকে ঠিক করার চ্যালেঞ্জ নেন কৃষ্ণণ।

আফসিনের পরিবার জানিয়েছে, তাদের শুধু পয়সা জুটিয়ে পাকিস্তান থেকে দিল্লিতে আসতে হয়েছিল। অবশ্য তার জন্যও একটি অনলাইন ফান্ডিংয়ের সাহায্য নিতে হয়েছিল আফসিনের পরিবাররে। ভারতে আসার অর্থ ব্যয় করার ক্ষমতাও ছিল না তাদের। 

এ প্রসঙ্গে আফসিনের ভাই বলেছেন, “চিকিৎসক আমাদের বলেছিলেন ঘাড়ের অস্ত্রোপচার হওয়ার আগে চারটি অস্ত্রোপচার হবে আফসিনের। সেগুলো হওয়ার পর মূল অস্ত্রোপচারটি হয় গত ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রায় ছ’ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে যে কোনও সময় আফসিনের হৃদযন্ত্র বা তার ফুসফুস কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসক। প্রতিটা মুহূর্ত উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে কাটছিল পরিবারটির। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা সফল হয়।”

আফসিনের ভাই ইয়াকুব কুম্বের চিকিৎসকের প্রশংসা করে আরও বলেছেন, উনি আমার বোনের জীবন বাঁচিয়েছেন, আমাদের কাছে উনি ঈশ্বরের দূত। এখন আফসিন ঘাড় উঁচু করে হাসতে পারছে, কথা বলতে পারছে, হয়তো আগামী দিনে পড়াশোনাও শুরু করবে।”

তবে চিকিৎসক জানিয়েছেন, আফসিনের এখনই চিকিৎসা না হলে সে বেশিদিন বাঁচত না। আপাতত তিনি নিয়মিত স্কাইপের মাধ্যমের আফসিনের খোঁজখবর নেন।

সূত্রঃ আনন্দবাজার অনলাইন
আরএমএ