ঢাকা, শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ১৮ ১৪৩১

কোলের সন্তান বিক্রি করতে বাজারে হতদরিদ্র বাবা!

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৬:৫৩ পিএম, ২৯ জুলাই ২০২২ শুক্রবার | আপডেট: ০৭:০৪ পিএম, ২৯ জুলাই ২০২২ শুক্রবার

শিশুকন্যা শাম্মীকে কোলে মা ও বাবা

শিশুকন্যা শাম্মীকে কোলে মা ও বাবা

ছয় মাস আগে শাম্মী নামে এক কন্যা শিশু জন্ম নেয় এক হতদরিদ্র পরিবারে। ছয় সদস্যের অভাবের সংসারে ছয় মাস বয়সী শিশুকন্যা শাম্মীকে দত্তক দিতে ও স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে গেলে এলাকাবাসীর পরামর্শে শিশুটিকে আবারও বাড়ি ফেরত নিয়ে আসেন হতভাগ্য বাবা। 

সম্প্রতি এমনই মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে। হতদরিদ্র বাবা মতিউর রহমান (৪৫) ওই উপজেলার বড় পলাশবাড়ি ইউনিয়নের জিয়াবাড়ি দক্ষিণ দুয়ারী গ্রামের বাসিন্দা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মতিউর রহমান একজন দিনমজুর। মাঠে কাজ করে যা উপার্জন করেন, তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চললেও তিন মেয়ের লেখাপড়ার খরচ ও শিশুকন্যার খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। তাই বাধ্য হয়ে তার শিশু কন্যাকে বিক্রি ও দত্তক দেয়ার উদ্দেশ্যে সম্প্রতি নিয়ে যান স্থানীয় এক বাজারে। পরে স্থানীয়রা তাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠান।

জানা যায়, ২৫ বছর আগে মতিউর রহমানের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় নাজমা বেগমের। বিয়ের পরে তাদের সংসারে জন্ম নেয় এক কন্যা সন্তান। পরে ছেলে সন্তানের আশায় তাদের সংসারে একে একে জন্ম নেয় চার কন্যা সন্তান। এখন সেই চার কন্যা সন্তানসহ মোট ছয় জনের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন হতদরিদ্র মতিউর। তাই বাধ্য হয়ে ছয় মাসের শিশু কন্যাকে বিক্রি ও দত্তক দেয়ার জন্য বাজারে নিয়ে যান তিনি। পরে এলাকাবাসী শিশুকন্যাসহ মতিউর রহমানকে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন।

প্রতিবেশীরা বলেন, মতি খুবই গরিব। চার সন্তানকে নিয়ে কষ্টে দিন পার করছেন। এক বেলা খেলে আরেক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। সারাদিন কাজ করে যা পায় তা দিয়ে সংসার চলে না। কোনো জমি-জায়গা নাই যে চাষাবাদ করে খাবে। ছোট মেয়েটার খাবারও ঠিক মতো কিনতে পারছে না। অনেক সময় তারা না খেয়ে থাকে। এমতাবস্থায় সরকারিভাবে যদি তারা সহযোগিতা পায় তাহলে হয়তো মতি তার মেয়েদের নিয়ে সংসার চালাতে পারবে, নয়তো তার সন্তানকে দত্তক দিতে বাধ্য হবে।

হতদরিদ্র মতিউর রহমান বলেন, দিনমজুরি করে যা আয় হয় সেটা দিয়ে তিন বেলার খাবারই জুটেনা। তাই আমার ছোট মেয়েকে বিক্রি ও দত্তক দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এলাকার লোকজন আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। সরকার থেকে যদি আমাকে কিছু সহযোগিতা করা হয়, তাহলে হয়তো আমি আমার চার কন্যা সন্তানকে নিয়ে সংসার চালিয়ে যেতে পারবো।

স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, আমার স্বামীর তেমন আয় রোজগার না থাকায় সংসার চালানো দায়। তার ওপর একটা মেয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ছে। কিছুদিন পর তাকে বিয়ে দিতে হবে। বিয়ে দিতেও টাকা পয়সা লাগবে। আমাদের কোনো সম্পদ নেই যে, সেগুলো বিক্রি করে মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে বিয়ে দিব। তাই আমার স্বামী আমাদের ছয় মাসের সন্তানকে মানুষের কাছে দত্তক দেয়ার জন্য বাজারে নিয়ে গিয়েছিল।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানান, দরিদ্র মতির সংসারের অভাব অনটনের কথা আমি জানি। শুনেছি সে অভাবের তাড়নায় সন্তানকে বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাকে সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় সহযোগিতা করা হবে।

এনএস//