ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

রাসেলের জাদুঘরই বিশ্বব্যাপী পরিচিত করবে বাংলাদেশকে (ভিডিও)

শিউলি শবনব, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:২৮ পিএম, ৩০ জুলাই ২০২২ শনিবার

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও মানুষকে পরিবেশ সচেতন করতে লড়ে যাচ্ছেন শাহীন রেজা রাসেল নামে স্বপ্নবাজ এক অদম্য যুবক। যার হৃদযন্ত্র সচল আছে মাত্র ৩৬ শতাংশ। প্রতিদিন জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। মাগুরার প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে তুলেছেন দেশের প্রথম জলবায়ু জাদুঘর।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সামনের সারিতে। ফলে প্রায় বছরই ঘটছে আইলা, সিডরের মতো বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অন্যদিকে নদী দূষণ, নির্বিচারে বন্য প্রাণী হত্যা, বনাঞ্চল ধংসের ফলে যখন বিপন্ন প্রায় প্রকৃতি। তখন পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় মানুষকে সচেতন করতে এগিয়ে আসেন ৩৮ বছরের এই যুবক। 

২০২১ সালে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মদনপুরে ছায়াঘেরা, অনিন্দ্য প্রকৃতির মাঝে মাত্র এক শতক জায়গার উপর একক প্রচেষ্টায় গড়ে তোলেন পরিবেশ ও জলবায়ু জাদুঘর। যেখানে দেখা মেলে সারি সারি সাজানো ছোট-বড় নদ-নদীর পানি, বিলুপ্ত প্রায় গাছের পাতা, বাকল, মাটি, ধান, বীজ, পাখির বাসাসহ ভূগর্ভস্থ কঠিন শিলার মতো অন্তত ২০০ নমুনা। 

জাদুঘরের মাধ্যমে প্রকৃতিই মানুষের পরম বন্ধু এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে চান রাসেল। 

জলবায়ু জাদুঘর প্রতিষ্ঠাতা শাহীন রেজা রাসেল বলেন, “আমরা যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলবো না, আমরা নদী দূষণ করবো না, নদী দখল করবো না- এই ভাবনাগুলো একটা শিক্ষার্থীর শিশু বয়স থেকে তার ভেতরে ঢুকে যায় তাহলে সে বড় হয়ে এটা করবে না।”

স্বপ্ন দেখেন একদিন পৃথিবীর সব সাগর, মহাসাগর, নদ-নদীর পানির নমুনা ও পরিবেশ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রকাশনা স্থান পাবে তার জাদুঘরে। পরিণত হবে একটি সমৃদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রে। 

শাহীন রেজা রাসেল বলেন, “সারা পৃথিবী থেকে পরিবেশ এবং জলবায়ুর বিভিন্ন ধরনের নমুনা সংগ্রহ করছি। সম্প্রীতি যুক্তরাষ্ট্রের একজন বৃষ্টি নদীর পানির নমুনা দিতে চেয়েছেন। এইভাবে আস্তে আস্তে এই সংরক্ষণটা বাড়ানো হচ্ছে। বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা উভয়ের সম্পৃক্ততা জরুরি।”

জাদুঘর অনেকটা নিভৃতে আলো ছড়ালেও প্রায় নিভু নিভু রাসেলের জীবন প্রদীপ। বেকার মাসকুলার ডিসট্রফি নামে চিকিৎসার অযোগ্য এক বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৬ সাল থেকে হুইলচেয়ারের জীবন শুরু হয় তার। কিন্তু মরার আগে মৃত্যু নয়। অদম্য প্রাণশক্তি, তাই হার মানেননি। শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত প্রকৃতি বাঁচাতে কাজ করে যেতে চান রাসেল। 

রাসেল আরও বলেন, “মানুষের হাতে হয়তো বেশি সময় নেই। আমি জানি না, স্রষ্টা আমাকে কবে নিয়ে যাবেন। কিন্তু যতক্ষণ বেঁচে থাকি মানুষের জন্য, প্রকৃতির জন্য কাজ করতে চাই।”

এই জাদুঘরই একদিন বিশ্বব্যাপী ভিন্ন মাত্রায় পরিচিত করে তুলবে বাংলাদেশকে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এমন স্বপ্ন নিয়েই বাঁচতে চান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারি পরিচালক রাসেল।

এএইচ