ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

উচ্চ আদালতে নিয়োগ পেলেন আরো এক নারী

শাকেরা আরজু

প্রকাশিত : ০৭:৫৬ পিএম, ১ আগস্ট ২০২২ সোমবার | আপডেট: ০৭:৫৭ পিএম, ১ আগস্ট ২০২২ সোমবার

তিন দশক ধরে অধঃস্তন আদালতে বিচার কাজ পরিচালনা করেছেন। যোগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে বিচার কাজ পরিচালনার স্বীকৃতিস্বরুপ এবার নিয়োগ পেলেন উচ্চ আদালতের বিচারপতি হিসাবে। নিয়োগের দিনই ফাহমিদা কাদের শপথ নিয়েছেন অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে। 

আজ সোমবার থেকে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে বিচার কাজ পরিচালনায় অংশ নেন তিনি। তার এই নিয়োগের মধ্য দিয়ে উচ্চ আদালতে নারী বিচারপতির সংখ্যা গিয়ে দাড়াল সাতজনে। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে মোট নারী বিচারপতি রয়েছেন আটজন। আপিল বিভাগে একমাত্র নারী বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন বিচারপতি কৃঞ্চা দেবনাথ।

রবিবার দুপুরে হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে ১১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ৫ জন জেলা জজ ও ৬ জন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রয়েছেন। আইনজীবীদের মধ্যে তিনজন সরকারি আইন কর্মকর্তা। আর জেলা জজদের মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত ফাহমিদা কাদের একমাত্র নারী বিচারপতি। হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে নিয়োগের আগে তিনি দাায়িত্ব পালন করেছেন টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ হিসাবে।

দেশ সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিবাহিত করেছেন শিক্ষাজীবন। ফাহমিদা কাদের কৃতিত্বের সঙ্গে ১৯৮১ সালে ঢাকার উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি. এবং ১৯৮৩ সালে হলিক্রস কলেজ থেকে এইচ.এস.সি. পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি. (সম্মান) ডিগ্রি নেন। তিনি আইন বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৯৯১ সালের ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসে সহকারী জজ (প্রবেশনার) হিসেবে যোগদান করেন। বিচারক নিয়োগের ওই পরীক্ষায় তিনি তৃতীয় স্থান অর্জন করে নিজ মেধার স্বাক্ষর রাখেন। জজিয়তি জীবনের সেই পথ চলার শুরু। সহকারি জজ হিসাবে দায়িত্ব পালনের পাঁচ বছর পরই ১৯৯৬ সালে প্রথম পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র সহকারী জজ হিসেবে কুমিল্লা জজশিপে যোগদান করেন।

২০০৩ সালে দ্বিতীয় পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে যুগ্ম জেলা জজ হিসেবে চাঁদপুরে যোগ দেন। ২০০৪ সালে অতিঃমহানগর দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০১৪ সালে সিলেটের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বিভাগীয় স্পেশাল জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তাকে ২০১৭ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের জুলাই মাসে টাঙ্গাইলের জেলা জজ ও দায়রা জজ দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে বিচারিক দায়িত্ব পালন করায় তাকে এবার নিয়োগ দেয়া হয়েছে উচ্চ আদালতের বিচারপতি হিসাবে। সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাকে এই নিয়োগ দেন। দুই বছর অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে ফাহমিদা কাদেরকে। তার এই নিয়োগে অধস্তন আদালতের নারী বিচারক উচ্ছ্বসিত। তিনি দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ ওমেন জাজেস এসোসিয়েশন-এর সহ-সভাপতি হিসাবে।

কর্মজীবনে তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা অধস্তন আদালতের একাধিক বিচারক বলেন, ফাহমিদা কাদের তাঁর বর্নাঢ্য চাকরি জীবনে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। তিনি সবসময় বিচারপ্রার্থী জনগনের ন্যায় বিচার নিশ্চিতে কাজ করে গেছেন। উচ্চ আদালতের বিচারপতি হিসাবে তিনি তার যোগ্যতা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রাখবেন।

ফাহমিদা কাদের এর স্বামী মকবুল আহসান টিটো ছিলেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ। এখন আছেন অবসরে।

এই দম্পতির তিন সন্তান। তারা পড়াশোনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি করছেন। ফাহমিদা কাদেরের নানা বৃটিশ শাসনামলে হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। তার বাবা আব্দুল কাদের তালুকদার ছিলেন জেলা জজ। ছিলেন তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব। ফাহমিদা কাদের ভারত, ইউএসএ, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সভা, সেমিনার এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

এসি