ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

কিলার টিমের যৌথ মহড়া শুরু

শেখ সাদী  

প্রকাশিত : ১১:১৫ এএম, ৪ আগস্ট ২০২২ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:১৮ এএম, ৪ আগস্ট ২০২২ বৃহস্পতিবার

রহস্যজনকভাবে যৌথ মহড়ার অনুমতি পায় ফারুক-রশিদের ইউনিট

রহস্যজনকভাবে যৌথ মহড়ার অনুমতি পায় ফারুক-রশিদের ইউনিট

৪ আগস্ট, সোমবার। শুরু হয়েছে ফারুক-রশিদের সেনা ইউনিটের যৌথ ট্রেনিং। 

ফারুকের পরিকল্পনায় অন্তত আটশ সেনা দরকার। কারণ, একযোগে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ তিনটি বাড়িতে আক্রমণ চলবে। শেষ পর্যন্ত ফারুকের পরিকল্পনায় দাঁড়ায়, তিনশ সেনার পক্ষে আক্রমণ করা সম্ভব না।
  
রশিদ বলেন, “আমাদের দুজনের দলে এই পরিমাণ সোলজার আছে, কাজেই আপারেশনে সেনা চাহিদা থাকছে না।”

রশিদের ফিল্ড আর্টিলারিতে ছয়টি হাউইটজার আর যুগোশ্লোভিয়ার তৈরি ১২টি ১০৫ মিমি হাউইটজার। ফারুকের দলে আছে ৩০টি টি-ফিফটি ট্যাংক।
 
ফারুক চাইলেন দুজনের সেনা একসাথে মুভ করলে কোনো সন্দেহ থাকবে না। 

কয়েকদিন আগে রশিদকে বদলি করা হয়েছিল যশোরের গানারি স্কুলে। ভারতের গানারি স্টাফ কলেজ থেকে কোর্স করায় বদলির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যশোরে যেতে চান না রশিদ। নিয়ম রক্ষায় যোগ দিয়ে এক মাসের ছুটিতে যান। 

এরই মধ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে কর্নেল শাফায়াত জামিল তাকে ঢাকায় বদলি করে নিয়ে এলেন। এটি এপ্রিল মাসের ঘটনা।
 
এরপর হত্যা পরিকল্পনা পাকা হয় ১৩ জুলাই, রশিদ ঢাকায় বদলি হয়ে আসার পর।

প্রশ্নটা এখানেই যে, ফারুক-রশিদের দুই ইউনিটকে এক সাথে যৌথ মহড়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল কেন? আবার, নিয়ম ভেঙে রশিদকে যশোর থেকে ঢাকায় বদলি করে নিয়ে আসা হলো কোন কারণে?
নোট বইয়ের পাতায় বড় অক্ষরে ফারুক লিখেছেন, ‘কাজ শুরু’।
 
এই কাজ শুরু সম্পর্কে অ্যান্থনি মাসকারেনহাসকে ফারুক বলেন, “এরই মধ্যে আমি স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছিলাম, মুজিবের মৃত্যু অনিবার্য। আজ বা কাল কিংবা পরশু। এটা কোনো ব্যাপারই না। আমার রণকৌশল তৈরি শেষ। আমার সৈন্য-সামন্তও প্রস্তুত। যেকোনো পরিস্থতিতেই হোক, আমি ১৩ জুলাই থেকে চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত ছিলাম। আমার জীবন থেকে অতীত, বর্তমান সবই মুছে ফেলেছিলাম। আমার সামনে তখন একটাই উদ্দেশ্য, মুজিবকে খতম করতেই হবে এবং সেই কাজ ১৫ আগস্টের বেশি দেরি করতে পারব না বলে মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম।” 

৬১ জেলায় বাকশালের সম্পাদক, সহ-সম্পাদকের নাম ঘোষণা হলো আজ।

জেলা গভর্নরদের উদ্দেশে বাণিজ্য ও বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক বললেন, “চীনের সাথে 
বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করতে হবে।” 

সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন পাকিস্তান ফেরত মেজর জেনারেল মাজেদুল হক। ঢাকায় স্ক্রিনিং বোর্ড তাকে বাদ দেয়। তদবিরে সফল। সেনাবাহিনীর চাকরি ফিরে পান। পরে জিয়া-খালেদার মন্ত্রী হন। বিকেল সাড়ে ৫টায় মোয়াজ্জেম আহমদ চৌধুরী দেখা করেন। 

সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় কৃষক লীগ নেতা রহমত আলী এমপি সাক্ষাৎ করেন। তিনি মোশতাকের ‘স্বনির্ভর 
বাংলাদেশ’ কর্মসূচির কর্ণধার ছিলেন। সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট। মস্কোতে নিয়োগ পাওয়া বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত শামসুল হক সাক্ষাৎ করেন।

খন্দকার মোশতাকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন ফারুক-রশিদ। 

হত্যা ষড়যন্ত্রে আক্রমণের দায়িত্ব এই দুজনের। আর রাজনৈতিক এবং বিদেশি শক্তি সামলাবেন খন্দকার মোশতাক। তিনি এখন বঙ্গবন্ধু সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী। নবগঠিত বাকশালের তিন নম্বর সদস্য। কুমিল্লা দাউদকান্দি এলাকার পীর সাহেব নামে পরিচিত খন্দকার কবিরউদ্দিন আহমদের পুত্র মোশতাক বাংলাদেশের সরকার ও রাজনীতির আকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভিলেন পরিচয়ে পরিচিত।

লেখক: বঙ্গবন্ধু গবেষক, গণমাধ্যমকর্মী