ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ২০ ১৪৩১

সড়কে মৃত্যু শূন্যে নামাতে দৃশ্যমান উদ্যোগের পরামর্শ (ভিডিও)

মুহাম্মদ নূরন নবী

প্রকাশিত : ১১:২৬ এএম, ৫ আগস্ট ২০২২ শুক্রবার | আপডেট: ১১:৩১ এএম, ৫ আগস্ট ২০২২ শুক্রবার

সড়কের বিশৃঙ্খলায় প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে, মানুষ। সামাজিক সচেতনতা, কার্যকর উদ্যোগ আর সবার চেষ্টা ছাড়া এই অনর্থক প্রাণের ক্ষয় রোধ করা যাবে না, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। 

দেশের সড়ক-মহাসড়ক যেন সবার কাছেই বাড়ির আঙিনা। কি বাস, কি ট্রাকের মতো বড় বড় যানবাহন। মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার কিংবা হালকা থ্রি হুইলার বাহন। 

এক করিডোরে সবার অবাধ বিচরণ। পথচারী তো আছেই। কেউ-কাউকে তোয়াক্কাই করে না। কারো দিকে তাকায়ও না কেউ। সবাই চলছে, নিয়ম মাটিতে মিশিয়ে। এতে দুর্ঘটনা তো হবেই। 

ঢাকা থেকে যশোর-অভয়নগর রুটে দূরপাল্লার বাস চালান আনোয়ার। অকপটে স্বীকার করলেন, চালকরাও কম দায়ি নয়। 

তিনি বলেন, “দেখা যায় একটা ড্রাইভার গাড়িটা টান দিচ্ছে, আর ওই সময় হয়ত একটা মোটর সাইকেল সাইড থেকে সামনে…।” 

লক্কর ঝক্কর মার্কা আনফিট গাড়ি, একটানা গাড়ি চালানোর ক্লান্তি, পথে দীর্ঘ যানজট, ভাঙা চোড়া এবরো-খেবড়ো রাস্তা, বাসে বাসে প্রতিযোগিতা তো আছেই। এর চেয়েও বড় আতঙ্ক, ড্রাইভার হয়ে ওঠার আগেই স্টিয়ারিংয়ে হাত বেশিরভাগের। 

একজন চালক বলেন, “আমরা গাড়ি যখন ক্রসিং করি, তখন দুইটা গাড়ি প্রায় সেইম-সেইম। একটা গাড়ি যদি কোনোরকমে এক বিঘত সরে যায়, তাহলে কিন্তু দুইটা গাড়ি একসাথে হয়ে যাচ্ছে। অ্যাকসিডেন্টগুলো হচ্ছে রোডের জন্য।” 

সাভার-বাইপাইল সড়ক…প্রথমে একটি বাসের অনিয়ম দিয়ে শুরু। উল্টোদিকে হালকা যানের চলাচল। জট পাকাচ্ছে, আর পাকাচ্ছে। মুহূর্তেই ছাড়াল এক কিলোমিটারেও বেশি। ট্রাফিক আইন মানারও কোনো বালাই নাই। পথের পাশে হাট-বাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সড়ক আর বাহনের নেই, ফুটপাত নেই পথচারীর।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী একুশে টেলিভিশনকে বলেন, “যদি ফুটপাত পথচারীর হাতে ছেড়ে দিতে পারি, তাহলে কিন্তু আমাদের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশে প্রায় ২৫ হাজারের মতো মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়।”

এতোসবের ফাঁক-ফোঁকর গলিয়ে ছুটছে, পথের রাজা মোটরবাইক। দুই চাকার এ বাহনে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমপক্ষে ১৭ গুণ বেশি। বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল দায়ী ২৯ দশমিক শূন্য-তিন শতাংশ, ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি ঘটাচ্ছে ২৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। 

৩২ দশমিক নয়-এক শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪৬ দশমিক সাত-শূন্য শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে এবং ১৫ দশমিক তিন-ছয় শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে ফিডার রোডে। 

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সামসুল হক বলেন, “যোগাযোগের উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু ওইটা দুর্ঘটনা বাড়ার কিন্তু একটা নিয়ামক, কারণ গতি যত বাড়ে, ক্ষতি তত করে। দ্রুতগতির অবকাঠামো করছি, সেখানে ধরিগতির যানও চলে আসছে। তখন গতির পার্থক্য হচ্ছে। বিশৃঙ্খল সিস্টেমকে সুশৃঙ্খল করিনি। যে আসছে সেই রাস্তায় চলতে পারছে। এ ধরনের ঘটনাগুলোই কিন্তু দুর্ঘটনার উপকরণ।”

বিশ্বের আর কোথাও সড়কের নিরাপত্তা নিয়ে এতো উদাসীনতা দেখা যায় না যতটা বাংলাদেশে দেখা যায়। অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের পর বাংলাদেশে পরিবহন আইন কার্যকর করা হয়েছে। এলক্ষ্যে গঠিত টাস্ক ফোর্সের ১১১ দফা সুপারিশও পড়ে রয়েছে, কিন্তু দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি। প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনায় অনেক তাজাপ্রাণ ঝরে যাচ্ছে। কিন্তু সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্ব যাদের, তারা উদাসীনই থেকে যাচ্ছেন। 

এ প্রসঙ্গে সেভ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অ্যালাইন্সের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “সার্বিকভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে একটা উদাসীণতা আছে, এটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। তা নইলে কেন (দুর্ঘটনা) ঊর্ধ্বমুখী?”

তিনি বলেন, “সুপারিশ এক ধরনের ট্র্যাপও। একদিকে উদ্বেগ, উদ্যোগ, ফলাফল নেই। পরিবহন খাতে রাজনৈতিক আনুকূল্য পাওয়া গোষ্ঠীস্বার্থগুলো এতো প্রবল যে, জনস্বার্থ সেখানে দানা বাঁধতে পারছে না। 

এখন এসব কাগুজে কথা-প্রতিশ্রুতির কোনো দাম নেই। পথে মানুষের মৃত্যুর সারি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে, দৃশ্যমান ও বাস্তবায়নযোগ্য উদ্যোগের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। 

এএইচএস/এমএম