এশিয়া কাপে ক্রিকেটের চেয়েও যেসব ইস্যু বেশি গুরুত্ব পায়
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:৩৯ এএম, ৫ আগস্ট ২০২২ শুক্রবার | আপডেট: ১১:৪২ এএম, ৫ আগস্ট ২০২২ শুক্রবার
এশিয়া কাপের ১৫তম আসর শুরু হতে যাচ্ছে এই মাসের শেষে, ইতোমধ্যে সূচি চূড়ান্ত হয়েছে, পাকিস্তান এশিয়া কাপের জন্য দলও ঘোষণা করেছে। অগাস্টের ২৭ তারিখ থেকে শুরু হবে এশিয়া কাপ চলবে ১১ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
এশিয়া কাপের ভেন্যু নিয়ে প্রতি আসরের আগেই একটা দেন দরবার চলে, কখনো পাকিস্তানে এশিয়া কাপ হলে ভারত খেলতে যেতে চায়না, আবার কখনো ভারতে হলে পাকিস্তান।
এবারে এশিয়া কাপ আয়োজিত হওয়ার কথা ছিল শ্রীলঙ্কায়, কিন্তু বিপত্তি হয়ে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি।
গণমাধ্যমে ক্রিকেট শ্রীলঙ্কার সচিব মোহন ডি সিলভা বলেছেন, "শ্রীলঙ্কার যে পরিস্থিতি তা এর সাথে সম্পর্কিত সবার মনোপুত হয়নি।"
তিনি বলেছেন, "শুধু অংশগ্রহণকারী দেশই এখানে মুখ্য নয়। পেট্রোলের জন্য লাইন দিয়ে আছে মানুষ এবং আরও যত বিশৃঙ্খলা দেখানো হয়েছে শ্রীলঙ্কায় তা একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।"
সিলভার মতে, এই ধরনের টুর্নামেন্ট আয়োজনে ব্রডকাস্টার, স্পন্সররাও বড় ভূমিকা রাখেন, তাদের কাছেও নেতিবাচক প্রচারই বেশি ভূমিকা রেখেছে।"
'নেতিবাচক প্রচার' বলতে তিনি বুঝিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা।
উপমহাদেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা পৃথিবীর অনেক জায়গার চেয়েই বেশি, বলা বাহুল্য ক্রিকেট বাণিজ্যের জন্য উপমহাদেশের সমর্থকরা একটা বড় উদ্দীপক এবং এই উদ্দীপনার সিংহভাগ কৃতিত্ব ভারত ও পাকিস্তানের।
এই দুই দেশের ক্রিকেট ম্যাচ হলে উপমহাদেশ তো বটেই পশ্চিমেও যারা ক্রিকেট অনুসরণ করেন তারা টেলভিশন পর্দায় কিংবা স্কোরকার্ডে চোখ রাখেন।
এই সমর্থকদের জন্য দু:খের ব্যাপার, যে বিগত ১০ বছরে উপমহাদেশের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী কখনোই একে অপরের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে মুখোমুখি হয়নি।
আর ঠিক এই কারণে পাকিস্তান ও ভারতের ম্যাচ দেখতে দর্শকরা অপেক্ষা করেন বিশ্বকাপ বা এশিয়া কাপের মতো ইভেন্টের জন্য।
আবার মুখোমুখি ভারত ও পাকিস্তান
গত বছরের অক্টোবরে বিশ্বকাপে একটি ম্যাচের পর এবার এশিয়া কাপে, অগাস্টের ২৮ তারিখ আবারও মুখোমুখি হবে ভারত ও পাকিস্তান, এমন একটা ম্যাচের জন্য বাংলাদেশেও আগ্রহ কম থাকেনা।
বিবিসি উর্দুর আব্দুর রশিদ শাকুর লিখেছেন, এশিয়া কাপ নিয়ে সবসময়ই উন্মাদনা ছিল।
"এখানে সনথ জয়সুরিয়া, অজন্তা মেন্ডিসের মতো ক্রিকেটাররা এই টুর্নামেন্টে আলো ছড়িয়েছেন, শহীদ আফ্রিদি হরভজনরা পারফর্ম করেছেন। কিন্তু ভারত পাকিস্তান ম্যাচের মতো আবেদন কোথাও পাবেন না," তিনি বলেন।
আব্দুর রশিদ শাকুর দীর্ঘদিন ধরে উপমহাদেশের ক্রিকেট পর্যবেক্ষণ করছেন। তার মতে, এশিয়া কাপের কেন্দ্রে থাকবে ভারত ও পাকিস্তানের লড়াই।
দশ মাসে দুইবার মুখোমুখি হচ্ছে এশিয়ার শীর্ষ এই দুই দল।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে ভারত এখন এক নম্বর দল, পাকিস্তানের অবস্থান তিন নম্বরে।
আব্দুর রশিদ শাকুর বলছেন, "পাকিস্তান ও ভারতের মতো দল কোনও টুর্নামেন্টে থাকাটাই সৌভাগ্যের, তবুও এশিয়া কাপ ক্রিকেটে সম্ভাব্য গুরুত্ব পায় না, যেটা পাওয়া উচিৎ ছিল।"
এখানে কিছু বিষয় কাজ করে আব্দুর রশিদ ঠাকুরের মতে, এশিয়া কাপে যেসব বিষয় সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে তার একটি পাকিস্তান ও ভারতের রাজনৈতিক সম্পর্ক।
বয়কট আর বিতণ্ডা
যেমন ১৯৯০ সালে ভারত চতুর্থ এশিয়া কাপের আয়োজক ছিল, পাকিস্তানের সাথে তখন রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল চরমে। তাই পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড সেবার দল পাঠায়নি। তিন-চারটি মূল দলের টুর্নামেন্টে এমন একটা দল নিজেদের সরিয়ে নিয়ে সেটা টুর্নামেন্টের জন্য বড় ধাক্কা।
এই দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনতির কারণে ১৯৯৩ সালে এশিয়া কাপ আয়োজনই করা যায়নি।
এমনকি এই চার বছর আগেও যে এশিয়া কাপ সংযুক্ত আরব আমিরাতে আয়োজিত হলো সেটা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল।
প্রথমে এই আসরটি হওয়ার কথা ছিল ভারতে, এরপর পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের ভারতে প্রবেশের জটিলতার কথা বিবেচনা করে ভারতের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিসিআইয়ের তৎকালীন ক্রিকেট সচিব অনুরাগ ঠাকুর ঘোষণা দেন ভারতের পরিবর্তে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আয়োজিত হবে এশিয়া কাপ।
তবে পাকিস্তান ও ভারতের ইস্যু ছাড়াও একবার এশিয়া কাপে প্রভাব পড়েছিল, ১৯৮৬ সালে ভারত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে রাজি হয়নি একবার, ১৯৮৫ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে একটি টেস্ট সিরিজে ভারতের বিপক্ষে আম্পায়ারদের বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তে নাখোশ হয়ে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
এশিয়া কাপ ২০২২ এর সূচি ও টুর্নামেন্টের প্রক্রিয়া
এশিয়া কাপে মোট খেলবে ছয়টি দল, নিশ্চিত হয়েছে পাঁচটি দল- আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলঙ্কা।
এছাড়া মূল টুর্নামেন্ট শুরুর আগে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, সিঙ্গাপুর এবং হংকং-এর মধ্যে একটি কোয়ালিফায়ারে ছয় নম্বর দল নির্ধারিত হবে।
দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে, এ গ্রুপে আছে- পাকিস্তান, ভারত ও কোয়ালিফায়ার।
বি গ্রুপে আছে- শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান।
২৭শে অগাস্ট, শ্রীলঙ্কা বনাম আফগানিস্তান, দুবাই
২৮শে অগাস্ট, ভারত বনাম পাকিস্তান, দুবাই
৩০শে অগাস্ট, বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান, শারজাহ
৩১শে অগাস্ট, ভারত বনাম কোয়ালিফায়ার, দুবাই
১লা সেপ্টেম্বর, শ্রীলঙ্কা বনাম বাংলাদেশ, দুবাই
২রা সেপ্টেম্বর, পাকিস্তান বনাম কোয়ালিফায়ার, শারজাহ
প্রতি গ্রুপ থেকে সেরা দুই দল পরের রাউন্ড- সুপার ফোরে খেলবে।
৩রা সেপ্টেম্বর, বি-১ বনাম বি-২, শারজাহ
৪ঠা সেপ্টেম্বর, এ-১ বনাম ১-২, দুবাই
৬ই সেপ্টেম্বর, এ-১ বনাম বি-১, দুবাই
৭ই সেপ্টেম্বর, এ-২ বনাম বি-২, দুবাই
৮ই সেপ্টেম্বর, এ-১ বনাম বি-২, দুবাই
৯ই সেপ্টেম্বর, বি-১ বনাম এ-২, দুবাই
ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হবে সুপার ফোর পর্বের সেরা দুই দল।
ফাইনাল- ১১ই সেপ্টেম্বর, প্রথম সুপার ফোর বনাম দ্বিতীয় সুপার ফোর, দুবাই।
সবগুলো ম্যাচ বাংলাদেশ সময় রাত ৮ টায় শুরু হবে।
টি টোয়েন্টি ফরম্যাট
এশিয়া কাপ আসর ঐতিহাসিকভাবে ওয়ানডে ফরম্যাটে হলেও ২০১৬ সালে ও এবার ২০২২ সালে আসরটি হতে যাচ্ছে টি টোয়েন্টি ফরম্যাটে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছরে এশিয়ার দলগুলোর জন্য বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে এই টুর্নামেন্টকে।
এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বকাপের ফরম্যাটের সাথে তাল মিলিয়ে এশিয়া কাপ খেলা হবে, যেমন ২০১৮ সালে খেলা হয়েছিল ওয়ানডে ফরম্যাটে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসবি/