ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

গাজায় যুদ্ধবিরতি, ঢুকছে ত্রাণবাহী যান

একুশে টেলিভিশন  

প্রকাশিত : ০৭:৪৭ পিএম, ৮ আগস্ট ২০২২ সোমবার

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তিন দিনের সংঘাত চলার পর মিশরের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত নতুন করে আর কোন সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।

সোমবার গাজা ভূখণ্ডের ওপর আরোপ করা ৬ দিনের অবরোধ তুলে নেয় ইসরায়েল এবং সেখানে জ্বালানি তেলের ট্রাক ও মানবিক ত্রাণবাহী যান ঢুকতে দেয়া হয়। গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতেও আবার বিদ্যুত উৎপাদন শুরু হয়েছে।

রোববার রাতে স্থানীয় সময় সাড়ে এগারোটার কিছু পর এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

এর আগে গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে হাসপাতালগুলোর হাতে যে জ্বালানি আছে তাতে আর মাত্র দু'দিন জেনারেটর চালানো যাবে।

শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ সংঘাতের সময় ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের (পিআইজে) সদস্যরা ইসরায়েলের ভেতরে শত শত রকেট নিক্ষেপ করে এবং ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো পিআইজে-সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপর হামলা চালায়। এতে পিআইজের দুজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ও শিশুসহ কমপক্ষে ৪৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়।

এক সপ্তাহ আগে অধিকৃত পশ্চিম তীরে পিআইজের নেতা বাসেম আল-সাদীকে ইসরায়েলি বাহিনী পশ্চিম তীরের জেনিনে গ্রেফতার করার পরই গাজায় উত্তেজনা বাড়তে শুরু করেছিল।

গাজায় নিহত দুই ইসলামিক জিহাদ নেতা হচ্ছেন খালেদ মানসুর এবং তাইসির জাবারি। ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, ওই সংগঠনটির পুরো শীর্ষ নেতৃত্বকেই তাদের ভাষায় "ভেঙে দেয়া হয়েছে।"

তবে ইসলামিক জিহাদ তাদের দুজন নেতা নিহত হওয়া সত্ত্বেও বিজয় ঘোষণা করেছে।

রয়টার্স জানায়, যুদ্ধবিরতির পর ইরানপন্থী আল-মায়াদীন স্টেশনে প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইসলামিক জিহাদের নেতা জিয়াদ আল-নাখালা ঘোষণা করেন - এটি তাদের বিজয় । তিনি আরো বলেন, বাসেম আল-সাদীর মুক্তির জন্য মিশর কাজ করবে। এ ব্যাপারে ইসরায়েলি ও মিশরীয় কর্মকর্তাদের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার সন্ধ্যায় জানায়, ইসরায়েলি আক্রমণে নিহত ৪৪ জনের মধ্যে ১৫টি শিশু রয়েছে এবং আহতের সংখ্যা তিন শতাধিক। ইসরায়েলি পক্ষে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

গত বছরের মে মাসের পর এটিই ছিল সবচেয়ে গুরুতর ফিলিস্তিনি-ইসরায়েল সংঘাতের ঘটনা।

ইসরায়েল বলছে, তারা 'ব্রেকিং ডন' নামের এ অভিযানে পিআইজে'র মোট ১৭০টি লক্ষ্যবস্তুর ওপর আক্রমণ চালায় - যাতে পিআইজের উচ্চ পর্যায়ের কিছু নেতা নিহত এবং তাদের অস্ত্রের মজুত ও সুড়ঙ্গ ধ্বংস হয়।

যুদ্ধবিরতি শুরু হবার প্রথম কয়েক মিনিটের মধ্যেও গাজা থেকে কিছু বিক্ষিপ্ত নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে বলে ইসরায়েলি মিডিয়ায় খবর দেয়া হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধবিরতির খবরকে স্বাগত জানিয়ে সব পক্ষের প্রতি এর বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। বেসামরিক লোক নিহত হবার খবরগুলোও অবিলম্বে তদন্ত করার কথা বলেন তিনি।

জাতিসংঘও যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে, তবে তারা সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে যে পরিস্থিতি এখনো খুবই ভঙ্গুর।

পিআইজের সিনিয়র কম্যান্ডার খালেদ মানসুরের জানাজা উপলক্ষে গাজার রাস্তায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনির সমাগম হয়।

এই সংগঠনটি হচ্ছে গাজা সক্রিয় সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অন্যতম। তাদের প্রধান দফতর সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে, এবং তারা ইরানের সমর্থন পেয়ে থাকে।

ইসলামিক জিহাদ গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাসের সাথে সহযোগিতা করে - কিন্তু তারা তাদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রেখে চলে।

এবারের সংঘাতে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে কোন রকেট ছোঁড়া হয়নি - এবং হামাসকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলারও কোনও খবর পাওয়া যায়নি।

তবে গত শুক্রবার হামাস জোরালো এক বিবৃতি জারি করে বলেছিল, ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে "প্রতিরোধী গোষ্ঠীগুলি" ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসবি/