ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

হাসপাতালের সিঁড়িতে পাওয়া সেই নবজাতক ওয়ার্ড থেকে চুরি

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৬:৩৫ পিএম, ১৭ আগস্ট ২০২২ বুধবার

নওগাঁয় ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সিঁড়িঘরে পাওয়া সেই নবজাতক মাত্র ৪০ ঘন্টার ব্যবধানে শিশু ওয়ার্ড থেকে চুরি হয়ে গেছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ওই শিশুকে হাসপাতালে দেখা গেলেও বিকাল থেকে তাকে আর পাওয়া যাচ্ছে না।

শিশু চুরির ঘটনা ঘটলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গোপন রাখেন। এই ঘটনা প্রকাশের পর এলাকার মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

বুধবার (১৭ আগস্ট) দুপুরের দিকে গণমাধ্যম কর্মিরা শিশুটির খোঁজ-খবর নিতে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কৌশলে দায় এড়িয়ে যান।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত রোববার রাত ৮টার দিকে হাসপাতালের নতুন ভবনের চতুর্থ তলার সিঁড়িঘরে এক টুকরো কাপড়ে মোড়ানো অজ্ঞাত নবজাতকটি দেখতে পান ওয়ার্ড বয় রাজু হোসেন। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করে  ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিক সদর মডেল থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়। 

নিরাপত্তার জন্য রাতেই এক মহিলা পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।  দেখভালের জন্য হাসপাতালে শিশুটির সঙ্গেই ছিলেন ওই নারী কনস্টেবল। ওই রাতে অক্সিজেনের ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ দিয়ে শিশুটিকে সুস্থ করে তোলা হয়। পরে শিশুটিকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের কেএমসি ইউনিটে রাখা হয়েছিল। 

পরের দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জিম্মায় শিশুটিকে রেখে চলে আসেন ওই নারী কনস্টেবল। 

মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত শিশুটিকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের কেএমসি ইউনিটে দেখা গেলেও দুপুর ১টার পর আর দেখা যায়নি। 

শিশু ওয়ার্ডে তৎকালীন সময়ে দায়িত্বরত ইন্টার্ন নার্স আকলিমা খাতুন বলেন, “দুপুর ১২টার দিকে বাচ্চার অভিভাবক পরিচয়ে দুইজন মহিলা কেএমসি ইউনিটে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করেছিলেন। সেই সময়ে পাশের কক্ষে রোগী দেখতে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে কক্ষে প্রবেশ করতে চাইলে দরজা বন্ধ রেখে তারা আমাকে কিছুক্ষণ পর আসতে বলেন। একটু পর এসে দেখি শিশুটি এবং ওই দুই মহিলা কোথাও নেই।”

শিশু বিভাগের প্রধান ডাঃ রতন কুমার সিংহ বলেন, মঙ্গলবার সকালে রাউন্ডে ৪-৫ দিনের বয়সী ওই নবজাতক শিশু কন্যাটিকে দেখার পর একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। তারপর বাচ্চাটি কীভাবে চুরি হলো তা জানা নেই। এবিষয়ে কিছু জানতে হলে তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসকের সাথে কথা বলতে বলেন তিনি।

নওগাঁ সদর মডেল থানার (ওসি তদন্ত) রাজিবুল ইসলাম বলেন, ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে অভিভাবক প্রাপ্তি সাপেক্ষে আইনগতভাবে বাচ্চাটি তারা হস্তান্তর করবে এমন লিখিত দিলে বাচ্চাটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হেফাজতে বুঝিয়ে দেওয়ার পর নারী কনস্টেবল চলে আসেন। শিশুটি চুরি হওয়ার বিষয়ে পুলিশের কোন গাফিলতি নেই।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলে জানান ওসি।

নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, “শিশুটিকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ্য করে তোলার পর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বুঝে দেয়া হয়। আমরা শুধু নিজেদের হেফাজতে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছিলাম। পরে বাচ্চাটিকে ছাড়পত্র ছাড়াই কে কীভাবে নিয়ে গেছে আমার জানা নেই।”
 
কর্তৃপক্ষের অবহেলায় বাচ্চাটি চুরি হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমাদের কোন অবহেলা ছিল না। বাচ্চা হস্তান্তরের দায়িত্ব আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আমরা শুধু নিজেদের হেফাজতে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছিলাম। শুনেছি বাচ্চাটির মা এবং নানী পরিচয়দানকারী দুইজন মহিলা তাকে নিয়ে চলে গেছে।”

এএইচ