ঢাকা, রবিবার   ০৩ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ১৮ ১৪৩১

টাকার মান কমায় কমেছে ভারতে যাতায়াত

জামাল হোসেন, বেনাপোল থেকে

প্রকাশিত : ১০:১৭ এএম, ১৮ আগস্ট ২০২২ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১০:২১ এএম, ১৮ আগস্ট ২০২২ বৃহস্পতিবার

টাকার মান আশংকাজনকভাবে কমে যাওয়ায় ভারতে চিকিৎসা বা বেড়াতে গিয়ে বাংলাদেশিরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। সেই সাথে বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশি যাত্রীদের যাতায়াত অনেকাংশে কমে গেছে। কমেছে সরকারের রাজস্বও।

ভারতে গত এক মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশি টাকার মান কমেছে গড়ে ১৫ থেকে ১৮ টাকা হারে। যেখানে ১০০ টাকায় ভারতে মিলতো ৮৪ থেকে ৮৫ রুপি, সেখানে এখন পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৭০ থেকে ৭২ রুপি। তবে কেউ যদি বাংলাদেশী এক হাজার টাকার নোট দিতে পারেন সেক্ষেত্রে হাজারে মিলছে ৭৩০ টাকা।

ভারত থেকে ফিরে আসা যাত্রী এনামুল হক জানান, কলকাতার নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রগুলো কয়েকদিন ধরে ফাঁকা দেখা গেছে। বাংলাদেশি টাকার বিনিময়ে ভারতীয় রুপি মিলছে খুব কম।

ভারত ফেরত ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যবসায়ীরা ভারতের ব্যাংক থেকে বাংলাদেশি টাকার বিনিময় মূল্য কম পাচ্ছেন। তবে কলকাতার বেশ কয়েকটি ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারিভাবে বাংলাদেশি ১০০ টাকায় ৮৩ রুপি পাওয়া যাচ্ছে। যদিও অধিকাংশ বাংলাদেশি পর্যটকই কলকাতার স্থানীয় বিভিন্ন মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র থেকে টাকার বিনিময় করেন।  

জানা গেছে, বর্তমানে পেট্রাপোল চেকপোস্ট ও কলকাতার বিভিন্ন মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রগুলোর মালিকরা একজোট হয়ে ডলার ও বাংলাদেশি টাকার বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। তাদের মর্জির উপর বাংলাদেশি পর্যটকরা টাকার বিনিময় মূল্য পেয়ে থাকেন। মাঝে মধ্যে বাংলাদেশি টাকাও নিতে চান না। অনেক অনুরোধ করার পরও কম মূল্যে সেগুলো কিনে থাকেন।

পেট্রাপোলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুদ্রা ব্যবসায়ী বলেন, বাংলাদেশি পর্যটকরা বৈধভাবে ডলার নিয়ে আসতে পারেন। এখানে এক ডলার বিক্রি হচ্ছে ৮০ রুপি ৫০ পয়সায়। যারা বাংলাদেশ থেকে বেড়াতে আসেন তাদের অনেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশি টাকা নিয়ে আসেন। ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজস করে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছেন বলেও জানান অনেকে।

বাংলাদেশি পর্যটকরা বলছেন, বাংলাদেশেও ডলারের দাম অনেক বেড়েছে। তাপরও বিভিন্ন ব্যাংক ও ডলার বিনিময়কারীরা ডলার সঙ্কট দেখিয়ে বিক্রি করছেন না। তাই বাধ্য হয়ে বেড়াতে ও চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশি টাকা নিয়ে যান অনেকে। আর সেই টাকা ভাঙানোর সময় পড়তে হচ্ছে বিপদে। খোলাবাজারে এক ডলার কিনতে বাংলাদেশি প্রায় ১১০ টাকা লাগছে।

এদিকে, টাকার মান কমে যাওয়ায় বেনাপোল দিয়ে ভারতে যাওয়া বাংলাদেশি যাত্রীদের যাতায়াত অনেকাংশে কমে গেছে। সেই সাথে কমেছে সরকারের রাজস্বও।

ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসের ২২ থেতে ৩১ তারিখ পর্যন্ত বেনাপোল চেকপোস্ট ও রেলপথে ভারতে যাতায়াত করেছেন ৪২ হাজার ২০৩ জন। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ১৮ হাজার ৮৫৭ জন ও ভারত থেকে এসেছেন ২৩ হাজার ৩৪৬ জন। চলতি মাসের ১ আগস্ট থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ভারতে যাতায়াত করেছেন ৪৩ হাজার ৩৩২ জন। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ২২ হাজার ৩৯০ জন ও ভারত থেকে এসেছেন ২০ হাজার ৯৪২ জন।

কিন্তু ১১ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত এ পথে যাতায়াত করেছেন মাত্র ২৩ হাজার ২৩৫ জন। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ১১ হাজার ৬৭৮ জন ও ভারত থেকে এসেছেন ১১ হাজার ৫৫৭ জন। বাংলাদেশি টাকার মান কমে যাওয়ায় আগের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

বেনাপোল চেকপোস্ট পুলিশ ইমিগ্রেশনের ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগের তুলনায় ভারতে যাওয়া বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রীর সংখ্যা অনেকাংশে কমে গেছে। ভারতে বাংলাদেশি টাকার মান কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। খোলা বাজারে ডলারের দাম কমে গেলে এবং ভারতে বাংলাদেশি টাকার মান বাড়লে এ সমস্যা থাকবে না। 

এদিকে পর্যটক আশংকাজনকভাবে কমে যাওয়ায় চরম হতাশায় পড়েছেন ভারতের ব্যবসায়ীরা। ভারতের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ নির্ভর পর্যটন ও কেনাকাটার মার্কেটগুলোতে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতার নিউমার্কেট, সদর স্ট্রীট, মার্কুইস স্ট্রীট, বড় বাজার, মীর্জা গালিব স্ট্রিট, বেলগাছিয়া, চিৎপুর, টালিগজ্ঞ পার্ক সার্কাস, এন্টালি, আনোয়ার শাহ রোড, মল্লিকবাজার, রাজাবাজার, ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদ চত্বর, মেটিয়ানুরুজ, খিদিরপুর, পার্ক স্ট্রিট, জাকারিয়া স্ট্রিট এলাকার হোটেল ও মার্কেটগুলোতে। 

এছাড়াও প্রভাব পড়ছে কলকাতা, মাদ্রাজ, দিল্লি, ভেলোরসহ বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতেও। আর বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলো প্রায় ফাঁকা। কারণ প্রতিবছর কয়েক লাখ বাংলাদেশী ভারত সফর করে থাকেন। এবার তাতে টান পড়েছে। করোনা সংক্রমণের পর এবার আরও একটি মন্দার শংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ যাত্রী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করে থাকেন। আর ভ্রমণকর বাবদ সরকারকে দিতে হচ্ছে পাসপোর্ট প্রতি ৫০০ টাকা ও বন্দরকে টার্মিনাল চার্জ দিতে হয় ৫০ টাকা করে। 

এতে ভ্রমণ কর বাবদ বছরে সরকারের রাজস্ব আসে প্রায় শত কোটি টাকা ও টার্মিনাল চার্জ হিসেবে বন্দর পায় প্রায় ১০ কোটি টাকা।

এএইচ