কাজে ফিরছেন চা শ্রমিকরা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:১৭ এএম, ২১ আগস্ট ২০২২ রবিবার
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট স্থগিত করেছেন সারা দেশের চা শ্রমিকরা। শনিবার (২০ আগস্ট) রাতে সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমানের সাথে বৈঠক শেষে এ নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানান চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা।
এর আগে, শনিবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের অফিসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নতুন মজুরি নির্ধারণের পর চা শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও বেঁকে বসেন সাধারণ শ্রমিকরা। তারা কমপক্ষে ২০০ টাকা দৈনিক মজুরি না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। বৈঠকে ১৪৫ টাকা নতুন মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিলো।
জানা যায়, শনিবার দুপুরে শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের অফিসে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী ও মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া। অপরদিকে, চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল ও বিভিন্ন ভ্যালির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
বৈঠক শেষে শনিবার বিকেলে চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল জানান, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন। শ্রমিকদের মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া খোদ প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর থেকে ফিরে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করবেন। চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এসময় তাদের দাবিদাওয়া প্রধানমন্ত্রীর নিকট উপস্থাপন করবেন। এই আশ্বাসে তারা আপাতত ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন। রবিবার (২১ আগস্ট) থেকে সব বাগানে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবে।
কিন্তু নেতাদের এই সিদ্ধান্তকে মেনে নেননি সাধারণ চা শ্রমিকরা। বৈঠকের পরপরই শ্রীমঙ্গলস্থ শ্রম দপ্তরের সামনেই বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয় চা শ্রমিকরা। তারা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ারও কথা জানান তারা। এসময় সমিতির নেতাদের প্রতিও ক্ষোভ জানান সাধারণ শ্রমিকরা।
অপরদিকে, বৈঠকের পর সিলেট মহানগরীর মালনিছড়া, হিলুয়াছড়া ও তারাপুর চা বাগানে শ্রমিকরাও এ সিদ্ধান্তকে বয়কট করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কয়েক শত চা শ্রমিক বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মালনিছড়া বাগানের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
এসময় মিছিলে উপস্থিত থাকা চা শ্রমিক ফেডারেশনের সংগঠক অজিত রায় বলেন, আমরা এ সিদ্ধান্ত মানি না। কমপক্ষে ২০০ টাকা দৈনিক মজুরি ছাড়া মানবো না। আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
এদিকে, দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবি চা শ্রমিকদের চলমান ধর্মঘট প্রত্যাহার নিয়ে বিভক্তির প্রেক্ষিতে শনিবার রাতে সিলেট ভ্যালির শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসক।
বৈঠক শেষে রাজু গোয়ালা বলেন, আমাদের মজুরি মাত্র ২৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে আমরা কেউই সন্তুষ্ট না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যেহেতু আশ্বাস দিয়েছেন, ভারত থেকে ফিরে আগামী মাসে আমাদের সাথে বসবেন। আমাদের দাবি দাওয়া শুনবেন তাই আমরা তার প্রতি সম্মান জানিয়ে ধর্মঘট আপাতত স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি, প্রধানমন্ত্র্রী আমাদের দাবি দাওয়া শুনে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।
তিনি আরও বলেন, সারাদেশের কথা জানি না। তবে আমাদের সিলেট ভ্যালির ২৩ বাগানের শ্রমিকরা আন্দোলন স্থগিত করতে সম্মত হয়েছি। রবিবার থেকে শ্রমিকরা যথারীতি কাজে যোগ দেবেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমানও জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে রবিবার (২১ আগস্ট) থেকে চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে সম্মত হয়েছেন।
এমএম/