পঁচাত্তরের অসমাপ্ত মিশন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা
মো. জাকির হোসেন
প্রকাশিত : ১১:১৭ এএম, ২১ আগস্ট ২০২২ রবিবার | আপডেট: ১১:১৮ এএম, ২১ আগস্ট ২০২২ রবিবার
২০০৪ সনের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যার সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা ইতিহাসে নজিরবিহীন। আমার এই বক্তব্যের সাথে কেউ কেউ হয়তো তর্ক জুড়ে দিয়ে বলতে পারেন, বিশ্বের বহু দেশই সন্ত্রাসের শিকার। জঙ্গি হামলা সমসাময়িক বিশ্বে একটি সাধারণ বাস্তবতা। এই তর্কের সাথে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু যে কারণে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা বিশ্বের অন্য সব জঙ্গী হামলা থেকে ভিন্ন তা হলো-
এক. নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সেই সময়ের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে জঙ্গি হামলার দ্বিতীয় কোনো উদাহরণ বিশ্বের কোনো প্রান্তে আছে বলে আমাদের জানা নেই। উপমহাদেশের খুনের রাজনীতি থেকেও ২১ আগস্টকে আলাদা করা যায়। ভুট্টো হত্যাকাণ্ডে সামরিক বাহিনী, ইন্দিরা হত্যাকাণ্ডে উগ্র শিখরা, রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ড ও চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা হত্যাচেষ্টায় এলটিটিই জড়িত ছিল। বাংলাদেশে ২১ আগস্ট হামলার আগে-পরে যত জঙ্গি হামলা হয়েছে, তার বেশির ভাগেরই উদ্দেশ্য ছিল ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে আঘাত করা। সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনৈতিক কর্মী বা পুরোহিত-যাজককে হত্যা করে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা তাদের শত্রু মনে করে। কিন্তু ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা এবং অনিবার্যভাবে মূল লক্ষ্যবস্তু ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুই. দেশে দেশে রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরোধ স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু রাষ্ট্রের নিয়মতান্ত্রিক একটি প্রধান রাজনৈতিক দলকে নিশ্চিহ্ন করতে জঙ্গি সংগঠন ও রাষ্ট্রযন্ত্র এক হয়ে পরিকল্পিত হামলার ঘৃণ্য ঘটনার উদাহরণ দ্বিতীয়টি নেই। অথচ ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় হরকত-উল-জিহাদ বাংলাদেশ হুজি-বি জঙ্গিদের সাথে ভয়ংকর আঁতাতে রাষ্ট্রযন্ত্রের একাংশ যুক্ত হয়েছে। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীর নাম এসেছে। পুলিশ, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে আদালতের বিচারে।
আমার এই বক্তব্যের সাথেও অনেকেই দ্বিমত করতে পারেন এই বলে যে, বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে জড়ানো হয়েছে কিংবা বিএনপি-জামাত জোট সেই সময় ক্ষমতায় ছিল তাই বিএনপি-জামাতের সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়েছে। ‘ডিনায়ালের সংস্কৃতি’র উপর ভিত্তি করে বিএনপি-জামাত ও তার সমর্থক-সহানুভূতিশীলরা সত্যিটাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তাদের সম্পৃক্ততার বিরুদ্ধে যেসব প্রশ্নের সদুত্তর বিএনপি-জামাত কিংবা তাদের শুভানুধ্যায়ীরা আজও দিতে পারেননি তা হলো –
এক. ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে ও পরে বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলা হয়েছে, এর কোনোটির সাথে বিএনপির নেতা-কর্মী কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ মদতের খবর শোনা যায়নি। কিন্তু ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় বিএনপির প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ রয়েছে। যে জঙ্গিগোষ্ঠী এই নরমেধ যজ্ঞ ঘটিয়েছে, সেই যজ্ঞের অন্যতম পুরোধা মাওলানা তাজউদ্দিন বিএনপির তৎকালীন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই। উপমন্ত্রীর বাসায় জঙ্গিরা একাধিক বৈঠক করেছে। হুজি-বি নেতা মুফতি হান্নান হাওয়া ভবনে তারেক জিয়ার সাথে বৈঠকের বিস্তারিত বয়ান দিয়েছে।
দুই. তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম মুফতি হান্নানের বক্তব্য সত্য নয়। কিন্তু এমন নজিরবিহীন হত্যাযজ্ঞের তদন্তে কেন টালবাহানা করা হলো? আষাঢ়ে গল্প তৈরি করে তদন্তের নামে প্রহসন করা হলো? ২১ আগস্টের হামলার পর দেশে-বিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। তখনকার বিশ্ব নেতারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘটনার জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের প্রতি বারংবার আহ্বান জানিয়েছিলেন। হামলাকে পশ্চিমা দেশগুলো বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করার একটি চেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে ফোন করে প্রেসিডেন্ট বুশের বার্তা পৌঁছান এবং তিনি শেখ হাসিনার ওপর হামলারকারীদের জনগণের শত্রু হিসেবে বর্ণনা করেন। ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাক স্ট্র এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষ জড়িতদের বিচারের আওতায় আনবে বলে আমরা আশা করছি’।
এছাড়া নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালি, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ভারত, শ্রীলংকার পক্ষ থেকেও জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল ডন ম্যাককিনন ও তখনকার জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনান ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। এরপরও বিএনপি তদন্তের নামে নানা টালবাহানা শুরু করলে ২৫ আগস্ট ঢাকায় অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসগুলো দ্বিতীয়বার বিবৃতি দিয়ে ঘটনার তদন্তে সরকারের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে, যা তখন ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।
পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতদের ক্ষোভ প্রশমন করতে এক পর্যায়ে জোট সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২১ অগাস্টের ঘটনা নিয়ে ব্রিফিংয়ের জন্য বিদেশি দূতদের আমন্ত্রণ জানালেও তারা তাতে অংশ নেননি। তদন্ত নিয়ে সরকারের পদক্ষেপে রুষ্ট হয়ে ২৬ আগস্ট ঢাকায় কূটনৈতিক কোরের ডীন শাহতা জারাবের নেতৃত্বে ১৯ জন কূটনীতিক শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং পরে তারা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের ওপর গুরুত্ব দেন।
প্রশ্ন হলো, বিএনপির নেতারা জড়িত না থাকলে জোরালো আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও তদন্ত কেন ভিন্ন খাতে নেওয়া হলো? জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নান ও মাওলানা তাজউদ্দিনকে বাঁচাতে বিএনপি কেন মরিয়া হয়ে উঠেছিল? কেন মামলার নামে জজ মিয়া নামের এক নিরপরাধ ব্যক্তিকে জড়িত করে প্রহসন করা হয়? কেন বিচারপতি জয়নুলকে দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ জড়িত বলে বানোয়াট ও ডাহা মিথ্যা তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করা হয়? প্রকৃত আসামিদের আড়াল করা ছাড়া কি উদ্দেশ্যে হামলার পর আলামত নষ্ট করে দেয়া হয়? কাকে বাঁচাতে পুলিশ, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইসহ সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এত তৎপর হয়ে পড়েছিল?
ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) সাদিক হাসান রুমী জবানবন্দিতে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার কাছে ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য ডিজিএফআইয়ের পক্ষ থেকে একটা তদন্ত দল গঠন করার অনুমতি চাই। উত্তরে তিনি বলেন, তদন্তের জন্য একটা কমিটি করে দেওয়া হবে। আপনাদের তদন্ত করার প্রয়োজন নেই’।
কার স্বার্থে বেগম জিয়া তদন্ত করতে নিষেধ করেছিলেন? কেন বেগম জিয়া তাঁর পছন্দের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের দিয়ে ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্যমূলক তদন্ত করতে কমিটি গঠন করেছিলেন? ঘটনার পর মাওলানা তাজউদ্দীনকে ভুয়া পাসপোর্টের মাধ্যমে পাকিস্তান পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। সে পাসপোর্টে তার নাম দেয়া হয়েছিল বাদল। ব্রিগেডিয়ার আমিন এবং লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার মাওলানা তাজউদ্দিনকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে বলে ডিজিএফআই মহাপরিচালকের কাছে নিজেরাই স্বীকার করেছেন। একজন, দু’জন নয়, এই মামলার ১৮ জন আসামি বিদেশে পালিয়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র সাহায্য না করলে এতজন আসামি পালিয়ে যেতে পারত?
শিরোনামে উল্লেখ করেছি’ পঁচাত্তরের অসমাপ্ত মিশন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা। অর্থাৎ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের মধ্য দিয়ে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, ২১ আগস্টের ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা। ১৫ আগস্ট ছোট্ট রাসেল বাঁচতে চেয়েছিল, ঘাতকরা তাকেও বাঁচতে দেয়নি। অর্থাৎ, খুনিদের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর রক্তের কেউ যেন কোনোদিন এ দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে না পারে। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা দেশের বাইরে ছিলেন বলে ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রবাস জীবনেও প্রতি মুহূর্তে হত্যার শিকার হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে জীবন-যাপন করেছেন। ভারত সরকারের আশ্রয়ে থেকেও নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেদের নাম পরিবর্তন পর্যন্ত করতে হয়েছে। ১৫ আগস্টের খুনিরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেই থেমে থাকেনি। বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী, মুক্তিযুদ্ধে মুজিব নগর সরকারের নেতৃত্বদানকারী এবং বঙ্গবন্ধুর পর সেই সময় আওয়ামী লীগের সবচেয়ে অগ্রসর রাজনীতিক জাতীয় চার নেতাকে জেলখানার ভিতরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
বিএনপি-জামায়াত জোট ২১ আগস্ট পরিকল্পিতভাবে যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়েছিল, তা কেবল একা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার লক্ষ্যেই নয়, বরং আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে সমগ্র জাতির স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে অন্ধকারে নিক্ষেপের এক সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র ছিল এটি। পঁচাত্তরে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বহীন করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা তারই ধারাবাহিকতা। প্রবাস জীবন থেকে ফিরে রাষ্ট্র মেরামত ও বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ধারায় ফিরিয়ে আনতে বঙ্গবন্ধু কন্যা যে সংগ্রাম শুরু করেছেন তা রোধ করতে এ পর্যন্ত অন্ততঃ ২২ বার তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সেই হত্যা মিশনের ধারাবাহিকতার ১৯তম প্রচেষ্টা ছিল।
আওয়ামী লীগের প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যে ট্রাকে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, সেই ট্রাক লক্ষ্য করেই দুর্বৃত্তরা প্রথম গ্রেনেডটি ছোড়ে। দলের নেতা-কর্মীরা ট্রাকের ওপরই শেখ হাসিনার চারপাশে মানববর্ম তৈরি করেছিলেন, যার ছবি পরের দিন প্রায় সব কাগজে প্রকাশিত হয়। হামলার মুখে যখন দলীয় নেতা-কর্মীরা শেখ হাসিনাকে গাড়িতে তুলে দেন সেখান থেকে নিরাপদে কোথাও চলে যাওয়ার জন্য, তখন সন্ত্রাসীরা সেই গাড়ি লক্ষ্য করেও কয়েক দফা গুলি ছোড়ে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যেন প্রাণ নিয়ে ফিরতে না পারেন, তার সব চেষ্টাই করেছিল হামলাকারীরা। গ্রেনেড আক্রমণ ব্যর্থ হলে নেত্রীকে হত্যার বিকল্প পন্থা হিসেবে বন্দুকধারীদের তৈরি রাখা হয়। আর এই বন্দুকধারীরাই খুব হিসাব কষে নেত্রীর গাড়ির কাচে গুলি চালায়। এই গুলি বুলেটপ্রুফ কাচ ভেদ করতে ব্যর্থ হলে তারা গাড়ি লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ে মারে। কিন্তু এই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। সব শেষে গাড়ির চাকা লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে থামানোর চেষ্টা করা হয়। তার গাড়ির কাচে কমপক্ষে সাতটি বুলেটের আঘাতের দাগ, গ্রেনেড ছুড়ে মারার চিহ্ন এবং বুলেটের আঘাতে পাংচার হয়ে যাওয়া গাড়ির দুটি চাকা সে কথাই প্রমাণ করে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা হামলা থেকে বেঁচে গেলেও মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন শতাধিক। অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাঁদের কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি।
প্রকাশ্য দিবালোকে রাজনৈতিক সমাবেশে এ ধরনের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া বিরল। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বার্ষিকীতে যে কথাটি সবচেয়ে গুরুত্ব ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে স্মরণ করা দরকার তা হলো, সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দল বিএনপি তার দায় স্বীকার করেনি। এখনো দলটি এ ঘটনার ব্যাপারে একটি পলায়নপর অবস্থানে থাকাকেই নিজেদের জন্য স্বস্তিদায়ক ভাবছে। দলটির মধ্যে আত্মশুদ্ধি বা আত্মজিজ্ঞাসার কোনো লক্ষণ নেই। ১৫ আগস্টের সেই ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ১৫ আগস্টের অসমাপ্ত মিশন বাস্তবায়নের আরেকটি ঘৃণ্য ও কলংকিত অধ্যায়।
লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
এএইচএস