ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

রাঙ্গাবালীর অধিকাংশ জলকপাট অকেজো, ভোগান্তিতে কৃষক 

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ১০:৪৮ এএম, ২৪ আগস্ট ২০২২ বুধবার

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদী ও খালের ওপর নির্মিত জলকপাটগুলোর অধিকাংশই এখন আর কাজে আসছে না। প্রয়োজনীয় মিষ্টি পানি ধরে রাখা ও খালগুলোতে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য নির্মিত জলকপাটগুলোর কপাট ভেঙে গেছে, দেবে গেছে গেট।  

র্দীঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই জলকপাটগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ছে। এই অবস্থায় আমন আবাদ নিয়ে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন কৃষক।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কলাপাড়া কার্যালয় সূত্র জানা যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলোচ্ছ্বাস থেকে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য রাঙ্গাবালী উপজেলার আগুনমুখা, তেঁতুলিয়া, বুড়াগৌরাঙ্গ, দাড়ছিড়াসহ বিভিন্ন নদীর তীরবর্তী এলাকায়  প্রায় ২০০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বাঁধের অভ্যন্তরীণ জনপদ ও আবাদি জমিতে বর্ষায় জমে থাকা অতিরিক্ত পানি অপসারণ ও লবণাক্ত পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য এই বেড়িবাঁধে ছোট-বড় মিলিয়ে ৯৪টি জলকপাট রয়েছে। 

৯০ দশকে এই জলকপাট নির্মিত হলেও এরপর আর মোরামত করা হয়নি। এর ফলে ৪০টি জলকপাটই এখন অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। এছাড়া সচল জলকপাটগুলোর অধিকাংশ বন্ধ করে মাছ চাষ করার ফলে কৃষকের কাজে আসছে না।  

সরেজমিন রাঙ্গাবালীর ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কোড়ালিয়া খালের আগুনমুখা নদী মুখের জলকপাটটি অকেজো হয়ে পড়েছে। জোয়ারের সময় নদীর লবণ পানি ঢুকছে, আমন আবাদে খালের পানি ব্যবহার করতে পারছেন না কৃষকরা। অপরদিকে বৃষ্টি পানিও সংরক্ষণ করতে পারছেন না। 

কোড়ালিয়া গ্রামের কৃষক জলিল হাওলাদার জানান, আমন আবাদের মৌসুম শুরু হয়েছে। আবাদে প্রচুর পানির প্রয়োজন। কিন্তু লবণাক্ততার কারণে নদীর পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তিন একর জমিতে আমনের আবাদ করবেন। কিন্তু জলকপাট অকেজো হয়ে পড়ার কারণে মৌসুমের অর্ধেক সময় পার হলেও পুরো জমি আবাদ করতে পারেননি তিনি।

এদিকে উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গার খালের জলকপাটটি সচল থাকলেও খালে অন্তত ২০টি বাঁধ দিয়ে স্থানীয়রা মাছ চাষ করার ফলে খালের পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সেই খাল পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানি খাল দিয়ে নামতে না পারায় জলাবদ্ধতায় খেত তলিয়ে রয়েছে। 

খালের পাড়ের কৃষক অসিম জানান, খেতে হাঁটু পানি জমে রয়েছে। পানি না সরলে আবাদ করা যাচ্ছে না। আমন আবাদ নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন তিনি।

রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গাবালী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ২৮ হাজার ২৩০ হেক্টরের বেশি জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে জলকপাটগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ায় অনেক এলাকায় আবাদ বিঘ্নিত হচ্ছে। 

রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইকবাল আহম্মেদ বলেন, বৃষ্টির কারণে যে জলবদ্ধতা হবে সেই পানিটা বেড় করা এবং জোয়ারের লবণাক্ত পানি ভেতরে যাতে না ঢুকতে পারে এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য জলকপাট। কিন্তু উপজেলার অনেক স্লুইসগেট অকেজো যার ফলে জলবদ্ধতার পানি বেড় করে দিতে পাড়ছেন না কৃষক। জলকপাটগুলো জরুরি সংস্কার কিংবা মেরামত প্রয়োজন।

পাউবোর কলাপাড়া উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শওকত ইকবাল মেহরাজ বলেন, রাঙ্গাবালী উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৯৪টি জলকপাট রয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি অকেজো হয়ে পড়েছে। আবার কিছু অকার্যকর আছে। ৯০ দশকে নির্মিত এই জলকপাটগুলো জরুরি মেরামতের জন্য মেকানিক্যাল ডিভিশনে (বরিশাল) বরাবরে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

এএইচ