ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ (ভিডিও)

সাইদুল ইসলাম, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:২৭ পিএম, ২৭ আগস্ট ২০২২ শনিবার | আপডেট: ০১:৪৭ পিএম, ২৭ আগস্ট ২০২২ শনিবার

নানা বিড়ম্বনা ও বৈষম্য মাথায় নিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের অনেকেই নিজের চেষ্টায় ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ধীরে ধীরে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোয় জনপ্রতিনিধিও নির্বাচিত হয়েছেন। বিভিন্ন কাজও শিখছেন। তারপরও যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাওয়া নিয়ে আছে শঙ্কা। বর্তমান সরকার তাদের নাগরিকের মর্যাদা দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়ায় ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন তারা।

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর পথে বাধা একাধিক। সমাজে তাঁদের অবস্থান রাস্তার ভিখারির মতো। লক্ষ্যে পৌঁছোতে বাধা অনেক। তারপরও ধীরে ধীরে সামজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানসিকতায় পরিবর্তন আসছে।

উদ্যোক্তা কনা বলেন, “একটা সময় জীবিকা নির্বাচনের জন্য মানুষের কাছে হাত পেতেছি। ওইটা অবশ্যই কখনো আমার কাছে সম্মানজক মনে হয়নি। রাস্তায় হাত পাতার পরিবর্তে গাড়ির স্ট্রিয়ারিং ধরা, অটোমেটিকভাবেই তার দৃষ্টিভর্তি বদলে যাবে।”

কনা, রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা। শৈশব-কৈশোর কেটেছে তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য আর নির্যাতনে। মালয়েশিয়ায় আট বছর কাটিয়ে দেশে ফিরে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের ভাগ্য বদলে কাজে নেমেছেন।

কনা আরও বলেন, “খেয়ে-না খেয়ে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে এ ক্লাসটা চালাতে প্রতিদিন কমপক্ষে ২ হাজার টাকা খরচ করে যাচ্ছি।”

নিজের টাকায় হিজড়াদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তারপরও শংকা কাজ মিলবে তো?

উদ্যোক্তা কনা আরও বলেন, “আমাকে খুব বেশি সাপোর্ট দেওয়ার দরকার নাই, এদেরকে চাকরি দেন। দুই-একটা মানুষকে যদি চাকরি দিলে আস্তে আস্তে মানুষ উৎসাহিত হবে। এরা কাজ শিখছে, এরা চাকরি পাচ্ছে।”

নজরুল ইসলাম ওরফে রিতু। গেলো বছরের শেষ দিকে ঝিনাইদাহের কালিগঞ্জের একটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে চান তিনি। 

চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম রিতু বলেন, “সবার একই কথা ছিল আপনি যদি নির্বাচন করেন তাহলে আপনাকে ভোট দেব। বর্তমানে খুব চলছি, জনগণের কাজ করছি। কোনো অসুবিধা নাই ওখানে।”

এরকম সফলতার গল্প আরও অনেকই আছে। সফল উদ্যোক্তা সিনথিয়া। তার উদ্যোগেই কয়েক হাজার মানুষের কাজ মিলেছে। এখানেও শতাধিক হিজড়া কর্মরত। কেউ কেউ বিউটি পার্লার করে ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। বুটিক হাউজসহ নানা কাজে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন অনেকেই।

হিজড়াদের গুরু মা হুররাম বলেন, “বিটিএমসির হাবিব স্যার আমাদের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যাকে হিজড়া জনগোষ্ঠী বলা হয়। তাদেরকে বিউটিপার্লার, গরুর ফার্ম, বাটিক কারখানা এবং সেলুন- যে যেটা করে খেতে চায় তাকে সেটাই দেওয়া হয়েছে।”

এর আগে জনশুমারিতেও স্থান পায়নি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা। তবে বর্তমান সরকার এ বছরই প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নথিভুক্ত করেছে। 

হুররাম আরও বলেন, “১১-১২ হাজার এটা ভুল ধারণা, আমি জানি লাখ ছাড়িয়ে যাবে।”

হিজড়াদের জীবন মান উন্নয়নে সরকারও এগিয়ে এসেছে। গত দশ বছরে বিভিন্ন প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার বেশি।

তবে, কারো কারো অভিযোগ এসব কর্মসূচির সুফল পাননি তারা।

উদ্যোক্তা কনা বলেন, “ফটোশ্যুটের জন্য ৫০টা হিজড়ার ছবি তুলে দিয়ে দিলাম যে কাজ হচ্ছে। আসলে ওইগুলোর প্রতি এগিয়ে ওইগুলোর তদারকি বা মনিটরিং করেন, তারপর সেই সমস্ত জায়গায় সরকারের যে আর্থিক সহযোগিতাগুলো আছে পৌঁছিয়ে দেন।”

এ বিষয়ে জাতীয় সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

এএইচ