ইন্দো-প্যাসিফিক স্থিতিশীলতায় হুমকি চীনের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০২:৫৭ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০২২ রবিবার | আপডেট: ০২:৫৯ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০২২ রবিবার
চীন যে গতিতে পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার গড়ে তুলছে, তাতে করে ২০২৭ সাল নাগাদ দেশটির হাতে কমপক্ষে ৭০০টির মতো সরবরাহযোগ্য পারমাণবিক ওয়ারহেড থাকবে বলে সম্প্রতি মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে হাজারখানেকের মতো পারমাণবিক ওয়ারহেডের মজুদ গড়ে তোলার পরিকল্পনা চীনের থাকতে পারে, যা ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের করা প্রাথমিক অনুমানের চেয়েও বেশি।
চীন ইতিমধ্যেই একটি পরমাণুসক্ষম এয়ার-লঞ্চড ব্যালিস্টিক মিসাইল (এএলবিএম) এবং স্থল ও সমুদ্রভিত্তিক পারমাণবিক ক্ষমতার উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন ত্রিমাত্রিক পারমাণবিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডার এডমিরাল জন একুইলিনো বলেছেন, বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্রাগার বৃদ্ধিকারী একমাত্র দেশ হলো চীন।
তিনি সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে সতর্ক করে বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বেইজিং ‘ইতিহাসের বৃহত্তম সামরিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার’ নীতি অনুসরণ করছে এবং চীনের ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
চীনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে (এইউকেইউএস বা অকাস) স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা চুক্তির বিরোধিতা করার পরই এই মন্তব্য করলেন একুইলিনো। ওই চুক্তির আওতায় অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক সাবমেরিনে সজ্জিত করা হবে। বেইজিংয়ের ভাষ্য, এই চুক্তি পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারের ঝুঁকি তৈরি করবে।
কিন্তু একুইলিনো বলছেন, কেউ যদি পারমাণবিক অস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা সম্পর্কে জানতে চায় তাহলে তাকে চীনের দিকে নজর দিলেই হবে।
ইন্দোনেশিয়ায় সুপার গারুদা শিল্ড মহড়া দেখতে গিয়ে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন কমান্ডার একুইলিনো।
১ থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ মহড়ায় অংশ নেয় যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর এবং অস্ট্রেলিয়ার ৫০০০ এর বেশি সৈন্য। এতে পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে যোগ দেয় ভারত, কানাডা, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, পূর্ব তিমুর এবং যুক্তরাজ্য।
বেইজিং শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছে, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক বিস্তারের ঝুঁকির দিকে নজর দিচ্ছে না। এই প্রতিরক্ষা চুক্তি (অকাস) এ অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা নষ্ট করতে পারে বলেও মনে করে চীন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান গত ২৯ জুলাই এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সব স্টেকহোল্ডাররা সম্মত না হলে এবং সংস্থার তত্ত্বাবধান না থাকলে পারমাণবিক তথ্য বিনিময় করা উচিত নয়।
পারমাণবিক অস্ত্রবিস্তার রোধ চুক্তির দশম পর্যালোচনা সম্মেলন চলাকালে এই বক্তব্য আসে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে। ১ থেকে ২৬ আগস্ট এই সম্মেলন চলে। চীন ও ইন্দোনেশিয়ার পক্ষ থেকে অনুরোধে সম্মেলনে অকাস চুক্তিটি পর্যালোচনা করা হয়।
তবে অস্ট্রেলিয়ার দাবি, তারা চুক্তির (পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ) প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসেনি, ফলে তাদের অস্ত্র সংগ্রহেও স্বচ্ছতা থাকবে।
২ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার সহকারী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী টিম আইরেস ওই সম্মেলনে বলেন, পরমাণু অস্ত্রমুক্ত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বজায় রাখতে তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করছেন। তিনটি দেশ (অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র) তাদের আইনি প্রতিশ্রুতি ও অস্ত্র বিস্তার রোধের অখণ্ডতাকে শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা শুধু এই অখণ্ডতাকে ধরেই রাখবে না, এক শক্তিশালীও করবে।
অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সম্মেলনে একটি যৌথ কার্যপত্রে জানায়, অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির সর্বোচ্চ মান (নন-প্রলিফিরেশন স্ট্যান্ডার্ড বা এনপিটি) অনুসরণ করেই তারা গোপন প্রযুক্তি হস্তান্তরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ।
নন-প্রলিফিরেশন স্ট্যান্ডার্ড বা এনপিটি হলো একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি যার লক্ষ্য হলো পারমাণবিক অস্ত্র এবং এর বিস্তার রোধ করা।
সূত্র: দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফোরার ফর রাইটস অ্যান্ড সিকিউরিটি- আইএফএফআরএএস