এক ঢিলে তিন পাখি মেরে ফাইনালে পাকিস্তান
নাজমুশ শাহাদাৎ
প্রকাশিত : ০৪:১৭ পিএম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার
এক ঢিলে তিনটি পাখিই মারল পাকিস্তান। আফগানিস্তানের জন্য বাঁচা-মরার ম্যাচ তো বটেই, সঙ্গে ছিল ভারতের জন্যও। কেননা, আফগানরা জিতলেই যে ফাইনালের দৌড়ে টিকে থাকবে ভারতও। তবে সেটা আর হলো না, নাটকীয় ম্যাচে নবি-রশিদদের মাত্র ১ উইকেটে হারিয়ে শ্রীলঙ্কাকে নিয়েই ফাইনালে উঠে গেল পাকিস্তান।
আর সেইসঙ্গে এবারের এশিয়া কাপ থেকে বিদায় ঘটালো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও উঠতি শক্তি আফগানিস্তানের।
শারজায় অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে আফগানদের দেয়া ১৩০ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে অবশ্য একটা পর্যায়ে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুকছিল পাকিস্তান। এমনকি শেষ ওভারের আগে ফজলহক ফারুকি ও ফরিদ আহমেদের আগুনঝরা বোলিংয়ে মাত্র ১৭ বলের ব্যবধানে ৩১ রান তুলতেই ৬ উইকেটসহ মোট ৯ উইকেট হারিয়ে রীতিমত পরাজয়ের শঙ্কায় পড়ে যায় বাবরের দল।
নাটকীয় ম্যাচের শেষ ওভারে জয়ের জন্য লাগতো ১১ রান। হাতে ছিল শেষ উইকেটটিই। ক্রিজে ছিলেন দুই তরুণ পেসার নাসিম শাহ ও মোহাম্মদ হাসনাইন। যাদের সাকুল্যে রানই ছিল (১ ও ৪) মোটে পাঁচ রান। তার ওপর বোলিংয়ে মাত্র ১৯ রান দিয়ে ৩টি উইকেটে তুলে নেয়া আগুন ঝরানো বাঁহাতি পেসার ফারুকি।
তাতে কী! মাত্র চারটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেললেও দমে যাননি তরুণ নাসিম শাহ। প্রথম দুই বলেই পরপর দুটি ছক্কা হাঁকিয়েই নিশ্চিত করেন কাঙ্ক্ষিত জয়। অপরাজিত থাকেন মাত্র ৪ বলে ক্যারিয়ার সেরা ১৪ রানের ইনিংস খেলে। সেইসঙ্গে দলকে পৌঁছে দেন এশিয়া কাপের ফাইনালে।
এর আগে জবাব দিতে নেমে ফারুকির প্রথম ওভারেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন অধিনায়ক বাবর আজম। সদ্যই সতীর্থ রিজওয়ানের কাছে শীর্ষস্থান হারানো বাবরের এই এশিয়া কাপটা যেন ভালোই কাটছে না। ব্যাটে রান নেই ওপেনারের। আগের তিন ম্যাচে ৩৩ রান করা বাবর এদিন ফেরেন খালি হাতেই।
তবুও ওই ওভারে ৬ রান নিতে পারে পাকিস্তান। তবে মুজিবের করা দ্বিতীয় ওভারে নিতে পারে মাত্র ২টি রান। ফারুকির পরের ওভারে একটি করে ছয়-চারে রিজওয়ান ১০ রান তুললেও মুজিবের করা পরের ওভারের প্রথম বলেই রান আউট হন ফখর জামান।
৯ বলে এক চারে মাত্র ৫ রান করে ফেরেন এই বাঁহাতি। ফলে ১৮ রানেই দ্বিতীয় উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে পাকিস্তান। এরপর ৯ম ওভারে রশিদের বলে লেগ বিফোর হয়ে ফেরেন রিজওয়ানও। যাতে ৪৫ রানেই তৃতীয় উইকেটে খোয়ায় বাবরের দল।
পরে শাদাব খানকে সঙ্গী করে ৪২ রানের জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিলেও ১৬তম ওভারেই ইফতিখারকে তুলে নিয়ে পাকিস্তান ইনিংসে ধ্বংসলীলা শুরু করেন ফরিদ আহমেদ। ১০ রান পর শাদাব খানকেও তুলে নেন স্পিনার রশিদ খান। দলের পক্ষে এদিন ত্রিশ ছাড়ানো স্কোর করতে পারেন কেবল এ দুজনেই।
সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেন ম্যাচ সেরা শাদাব, ২৬ বল খেলে। যেখানে ছিল ৩টি ছয়ের সঙ্গে একটি চারের মার। আর ইফতিখারের ৩৬ বলে খেলা ৩৩ রানের ইনিংসে ছিল ২টি চারের মার।
এ দুজনকে আউট করার পর ফরিদ ও ফারুকি মিলে একে একে সাজঘরে ফেরান নওয়াজ (৪), খুশদিল (১) ও রউফ (০)। এমনকি আগের ম্যাচের নায়ক আসিফ আলিও ফেরেন শেষ ওভারের এক বল আগে দলকে জয় থেকে ১২ রান দূরে রেখেই।
যদিও ৮ বলে দুই ছয়ে ১৬ রান করেন এই হার্ডহিটার। তবে একেবারে শেষ উইকেটে প্রবল চাপের মুখে ফারুকির শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে যেভাবে ইতিহাসটা লিখলেন তরুণ নাসিম শাহ, তা এক কথায় অনবদ্য, অনন্য।
এর আগে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে উড়ন্ত সূচনা করলেও পাকিস্তানি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে দ্রুত ৬ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে মোহাম্মদ নবির দল।
শেষ দিকে রশিদ খান ও আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত আর কোনো উইকেট না হারালেও বোর্ডে ১২৯ রানের বেশি তুলতে পারেনি আফগানিস্তান। রশিদ খান দুই চার ও এক ছয়ের মারে ১৫ বলে ১৮ নিয়ে এবং ওমরজাই এক চারে ১০ বলে ১০ রান করে অপরাজিত থাকেন।
এছাড়া এদিন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৫ রান আসে ইব্রাহিম জাদরানের ব্যাট থেকে। তার ৩৭ বলের ইনিংসে ছিল দুটি চার ও একটি ছয়ের মার। এছাড়া জাজাই চারটি চারের মারে ১৭ বলে ২১ রান, গুরবাজ ১১ বলে দুই ছয়ে ১৭ রান ও করিম জানাত ১৯ বলে ১৫ রান করেন।
পাকিস্তানের পক্ষে হারিস রউফ ২টি এবং নাসিম শাহ, মোহাম্মদ হাসনাইন, শাদাব খান ও মোহাম্মদ নওয়াজ ১টি করে উইকেট লাভ করেন।
এনএস//