ঠাকুরগাঁও পৌরসভার রাস্তাগুলোর বেহাল দশা
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৮:৩৬ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ রবিবার
রাস্তার ঢালাই উঠে গিয়ে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে সড়ক গুলো। এতে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন গাড়ি চালকরাসহ পথচারী ও জনসাধারণ। এনিয়ে চরম ভোগান্তিতে ভূগছেন তারা।
ঠাকুরগাঁও পৌরসভা কার্যালয় জানায়, পৌর এলাকায় মোট একশ’ ৩৫ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এরমধ্যে পাকাকরণ করা হয়েছে ৮৫ কিলোমিটার এবং ৫০ কিলোমিটার রাস্তা এখনো কাঁচা রয়ে গেছে।
পৌর শহরের ১২টি ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা যায়, পৌরসভার ৮৫ কিলোমিটার রাস্তা পাকা হলেও এসব রাস্তার প্রায় ৮০ শতাংশরই দশা বেহাল। চৌরাস্তা মোড় থেকে কালিবাড়ী হয়ে সত্যপীর ব্রীজ পর্যন্ত, চৌরাস্তার নরেশ চৌহান সড়ক থেকে শুরু করে সেনুয়া পর্যন্ত, জেলা প্রশাসকের বাস ভবনের সামনের সড়কটি টাঙ্গন নদীর ব্রীজ পর্যন্ত, শহরের প্রাণকেন্দ্র সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বড় মাঠের দক্ষিণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনের সড়কটি, হাজীপাড়া, আশ্রমপাড়া, শাহাপাড়া, ঘোষপাড়া, গোয়ালপাড়া, কিটিয়াপাড়া, নিশ্চিন্তপুরসহ আরও বেশ কয়কটি মহল্লার প্রধান প্রধান সড়ক গুলোর অবস্থা বেহালদশা চরমে উঠেছে।
এসব রাস্তা দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না করায় রাস্তাগুলোর পিচের ঢালাই ও ইট উঠে গিয়ে যেখানে সেখানে ছোট বড় অসংখ্য খানাখন্দ ও গর্ত সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তার বড় বড় খানাখন্দ ও গর্ত গুলোতে হাঁটু সমান পানি জমে থাকে। এসময় এসব রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় রিস্কাভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন মাঝেমধ্যে উল্টেপড়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। এছাড়াও পানি জমে থাকার কারণে রাস্তায় চলাচলকারীদের শরীরে কাদা পানি ছিটকে কাপড়-চোপড় নষ্ট হচ্ছে। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন গাড়িচালক, পথচারীসহ স্থানীয়রা।
তারা স্থানীয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে এসব রাস্তা দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
পৌরসভার ২ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলী আক্কাছ বলেন, ' হ্যাডস এর মোড় থেকে গোয়ালপাড়া শাপলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তাটির অবস্থাও চরমদুর্দশাগ্রস্থ। ২০০২ সালে একবার এই রাস্তার কাজ করা হয়েছিল। রাস্তার কাজ হওয়ার কিছুদিন পরেই আবার তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তারপর থেকে এই রাস্তার আর কোন কাজ হয়নি। বর্ষা শুরু হলেই এই রাস্তার যেখানে সেখানে হাঁটু পরিমাণেরও বেশি পানি জমে থাকে। রাস্তাটি ঠিক করার জন্য এলাকাবাসী বারবার পৌর মেয়র ও কাউন্সিলরকে আকুতি জানালেও এ পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি।
তাদের বলতে গেলে তারা বলেন, বরাদ্দ না থাকলে কি আমরা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে রাস্তা সংস্কার করবো। রাস্তাটির এমন অবস্থা হয়েছে যে এ রাস্তা দিয়ে কোন যানবাহন তো দূরের কথা পথচারীগণও ঠিক মতো চলতে পারেন না।
পৌর শহরের ৩ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাফিজুর হাসান বলেন, 'পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। যেখানে-সেখানে রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই এগুলোতে পানি জমে থাকে। রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা যায় না। রিক্সা, সাইকেল ও গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করতে অনেক কষ্ট হয়। এমতাবস্থায় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদেরকে রাস্তাগুলো দ্রুত সংস্কার করার
জন্য তিনি দাবি জানান।
৫ নাম্বার ওয়ার্ডের হাজীপাড়ার বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, 'শহরের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বড় মাঠে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এই শহীদ মিনারের পেছনের রাস্তাটির পিচ ও ইট উঠে যাওয়ার কারণে অসংখ্য গর্ত হছে। এই গর্তে পানি জমে থাকে। ফলে যাতায়াত করতে খুব কষ্ট হয় ও যানজট সৃষ্টি হয়। এগুলো ঠিক করলে আমাদের দুর্ভোগ কমতো।
মুরাদ হোসেন নামে এক অটোচালক বলেন, 'আমি প্রতিদিন যাত্রী নিয়ে পৌরসভার বিভিন্ন সড়কে চলাচল করি। কিন্তু পৌরসভার প্রায় সকল রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। এসব রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালালে ঘন ঘন গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে। ঠিকমতো গাড়ি চালানো যায় না। গাড়ি চালাতে খুব কষ্ট হয়। অনেক সময় গাড়ি পল্টি খেয়ে উল্টেও যায়।
পৌরসভার বেহাল রাস্তাগুলোর দশা ও মেরামতের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যা বলেন, ইতিমধ্যে এই পৌরসভা এলজিএসপি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটির চূড়ান্ত অনুমোদন হয়তো আগামী জানুয়ারীতে পাবো এবং অনুমোদন পেলে এর কাজ শুরু করতে পারবো। এই প্রকল্পে থাকবে, রাস্তা, ড্রেন, লাইটিং ব্যবস্থা ও ফুটপাত তৈরি। এই প্রকল্পে আমরা বেহাল দশায় প্রধান প্রধান কিছু রাস্তা সংস্কার করার চেষ্টা করছি।
এছাড়াও তিনি বলেন, এর আগে এ পৌরসভার মেয়র ছিলেন বিএনপি নেতা। তাই তিনি রাস্তাগুলো তেমনভাবে সংস্কার করতে পারেননি। আমি মেয়রের দায়ীত্ব পাওয়ার পর থেকেই রাস্তাগুলো সংস্কার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বরাদ্দ পেলেই পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডেরই রাস্তাঘাট নতুন করে তৈরি করা হবে এবং পৌরবাসী স্বাচ্ছন্দে চলাচল করতে পারবেন বলে আশা করছি।
এসি