ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

মিরসরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের বাড়িতে শোকের মাতম

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ০৬:৫৬ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার

পিতৃহারা চার নাতি-নাতনি কোলে বাকরুদ্ধ দাদা

পিতৃহারা চার নাতি-নাতনি কোলে বাকরুদ্ধ দাদা

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের সিএনজি চালিত অটোরিকশাকে কাভার্ড ভ্যান ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই সিএনজির চার যাত্রী নিহত হন। আহত অবস্থায় পুলিশসহ আরও পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। 

নিহত ৪ জনের বাড়ি মিরসরাই উপজেলায়। তাদের মধ্যে ২ জন আপন ভাই। তারা পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক। তাদের বাড়ী উপজেলার মিরসরাই সদর ইউনিয়নের গড়িয়াইস গ্রামের শামসুদ্দীন ড্রাইভারের বাড়ী।

বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে নিহত সহোদর শেখ ফরিদ (২৬) ও শেখ সুমনের বাড়ীতে গেয়ে দেখা যায়, স্বজনদের হারিয়ে বাকরুদ্ধ নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। মা-বাবা ও স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদের আহাজারিতে গড়িয়াইস এলাকায় এক শোকাবহ অবস্থা বিরাজ করছে। কোনো সান্ত্বনাতেই স্বজনদের আহাজারি থামছে না। 

নিহত শেখ ফরিদের ঘরে শেখ রাহিন (২) ও তাসফিয়া (৪) এবং নিহত শেখ সুমনের ঘরে নিশাত (৭) ও মারিয়া (৪) নামের চার শিশু সন্তান রয়েছে। নিজ নিজ স্বামীর শোকে ঘরের মধ্যে মাতম করছেন তাদের স্ত্রীরা।

এছাড়াও উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের রায়পুর এলাকার নিহত মেহেদী (২২) বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক আবেগঘন পরিবেশ। প্রিয় সন্তানের জন্য আহাজারি করছেন বৃদ্ধ মা। বাকরুদ্ধ বাবা, মূর্ছা যাচ্ছেন বারবার। মেহেদীও পেশায় ড্রাইভার ছিলেন।

স্বজনরা জানান, অনেক কষ্ট করে লোন নিয়ে সিএনজি অটোরিকশাটি কিনে দেই। এখনো কিস্তি শেষ হয় নাই। কিন্তু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মেহেদী।

একই ইউনিয়নের পূর্ব রায়পুর এলাকার নিহত আবুল কাশেম (৬০) বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী সন্তান ও বোনেরা বিলাপ করছেন। তাদের নানাভাবে সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা। 

এদিকে এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিহত ৪ জনের জানাজা শেষে তাদের পরিবারিক গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। 

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ে চট্টগ্রামমুখী অংশের রায়পুর এলাকায় কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় সিএনজি-অটোরিকশার চালকসহ ওই ৪ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন পুলিশসহ আরও ৫ জন।

স্থানীয়রা জানান, চট্টগ্রামমুখী অংশে অবস্থিত সোনাপাহাড় ফিলিং স্টেশন থেকে তেল নিয়ে লরি (চট্টমেট্টো ঢ ৮১২২৪৬) বাম দিক থেকে হঠাৎ ডান দিকে উঠে যায়। এসময় পেছন থেকে আসা জোনাকী পরিবহন (লক্ষীপুর ব ১১০০২০) নামে একটি বাস লরির পেছনে ধাক্কা লেগে গ্লাস ভেঙ্গে যায়। পরবর্তীতে বাসটির চালক কিছুদূর গিয়ে লরিকে আটকে লরির চালকের সাথে কথা কাটাকাটি করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশ উপস্থিত হয়। 

সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় চৈতন্যের হাট এলাকার সিএনজি অটোরিকশা স্টপেজ থেকে ৫-৬ জন অটোরিকশা চালক ঘটনাস্থলে দেখতে যান। এসময় পেছন থেকে আসা বেপরোয়া গতির মিনি কাভার্ডভ্যান (ঢাকা মেট্টো ন ১৫-১০৭৭) সিএনজি অটোরিকশা চালক ও হাইওয়ে পুলিশকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে ৪ জন নিহত হন। আহত হন পুলিশসহ ৫ জন। 

নিহতরা হলেন- মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের মো. হারুনের ছেলে মেহেদী হাসান (২২), মিরসরাই সদর ইউনিয়নের গড়িয়াইশ গ্রামের শামসুদ্দীনের ছেলে শেখ সুমন (২৪) ও তার ভাই শেখ ফরিদ (২৬) এবং পূর্ব রায়পুর এলাকার আবুল কাশেম (৬০)।

আর আহতরা হলেন- জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের এএসআই মো. মোস্তফা কামাল (৪৫), কনস্টেবল জাকির হোসেন (৪০), আব্দুল আউয়াল (৫০) রফিক (২৫), শাহ আলী (২৬)। তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

এনএস//