ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

‘ক্রিটিকাল কেয়ার ইন হেপাটোলজি’ কনফারেন্সে যোগ দিলেন ডা.স্বপ্নীল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩৭ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ রবিবার

চীনের উহানে রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠানরত এশিয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় লিভার অ্যাসোসিয়েশনের 'ক্রিটিকাল কেয়ার ইন হেপাটোলজি' শীর্ষক একটি বিশেষ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

এতে আমন্ত্রিত ফ্যাকাল্টি হিসেবে ভার্চুয়ালী যোগ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের ডিভিশনাল হেড অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)। 

অধ্যাপক স্বপ্নীল লিভার সিরোসিস রোগীদের রক্ত বমির আধুনিক চিকিৎসা এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেন। 

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক আদেশবলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর প্রতিষ্ঠাতা ডিভিশন প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই লিভার রোগীদের জন্য আধুনিক চিকিৎসা প্রচলনের পাশাপাশি লিভার বিষয়ক গবেষনা প্রসারে ডিভিশনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। এরই মধ্যে ডিভিশনটিতে 

শুরু থেকেই এই ডিভিশনটিতে লিভার সিরোসিস রোগীদের রক্ত বমির আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি এইসব রোগীদের রক্ত বমি প্রতিরোধে ক্যাথল্যাবে হেপাটিক ভেনাস প্রেশার গ্রেডিয়েন্ট মাপা হচ্ছে।

তাছাড়া লিভার ফেইলিওরের চিকিৎসায় লিভার ডায়ালাইসিস ও প্লাজমা এক্সচেঞ্জ, লিভার সিরোসিস রোগীদের জন্য অটোলোগাস হেমোপয়েটিক স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন, লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসায় ট্রান্সআর্টারিয়াল কেমোএম্বোলাইজেশন এবং পিত্তনালীর রোগ নির্নয়ে স্পাই গ্লাস কোলাঞ্জিওস্কোপি শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন শহরে ডিভিশনটির ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের সহযোগিতায় অটোলোগাস হেমোপয়েটিক স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন এবং ট্রান্সআর্টারিয়াল কেমোএম্বোলাইজেশনের মত আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি চালু করা সম্ভব হয়েছে। 

এ বছরের ৭ জুলাই ডিভিশনটির প্রথম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বাণী প্রদান করেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিভিশনটির উদ্যোগে স্পাই গ্লাস কোলাঞ্জিওস্কোপি ও ট্রান্সআর্টারিয়াল কেমোএম্বোলাইজেশন লাইভ ডেমন্সট্রেশনের ব্যবস্থা করা হয়। 

পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষনায় জোড় দেয়া হচ্ছে ডিভিশনটিতে। এরই মধ্যে ডিভিশনটিতে চালু করা হয়েছে বাংলাদেশে যৌথভাবে উদ্ভাবিত হেপাটাইটিস বি’র ইমিউনথেরাপী ন্যাসভ্যাকের আরো একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়েল। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে উদ্ভাবিত প্রথম ওষুধ ন্যাসভ্যাক যা বাংলাদেশে উৎপাদনের জন্য এরই মধ্যে অনুমোদন পেয়েছে। আশা করা যায় শিগগিরই দেশের হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের আক্রান্ত রোগীরা ন্যাসভ্যাক ব্যবহার করে সুফল পাবেন। কিউবাসহ বিশ্বের একাধিক দেশে ন্যাসভ্যাক ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি জাপানের একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানী হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগীদের ওপর ন্যাসভ্যাকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে এবং এর সুফলও পাওয়া যেতে শুরু করেছে। 

বাংলাদেশে ডা. স্বপ্নীলের নেতৃত্বে ন্যাসভ্যাকের ফেইজ-১, ২ এবং ৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যা পরবর্তী সময় হেপাটোলজি ইন্টারন্যাশনাল প্লস ওয়ানের মত খ্যাতিসম্পন্ন আর্ন্তজাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি প্যাথোজেন্স এবং ভ্যাকসিন্স নামক দুটি শীর্ষ বৈজ্ঞানিক জার্নালে ন্যাসভ্যাকের ২ এবং ৩ বছরের ফলোআপ ডাটাও প্রকাশিত হয়েছে। 

এ সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, লিভার সিরোসিস প্রতিরোধে ন্যাসভ্যাক অন্যতম কার্যকর ওষুধ। তাছাড়া এটি একটি ইমিউন থেরাপি যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ও লিভার রোগকে নিয়ন্ত্রনে রাখে। ন্যাসভ্যাকই পৃথিবীর প্রথম ইমিউন থেরাপি যা হেপাটাইটিস বি তথা যে কোনো ক্রনিক ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কার্যকর ও নিরাপদ হিসেবে প্রথমবারের মতো একটি ফেইজ ৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রমাণিত হয়েছে। শুধু তাই নয় ন্যাসভ্যাকই ক্রনিক ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কার্যকর। পৃথিবীর প্রথম ইনিউন থেরাপি যা দুই এবং তিন বছরের ফলোআপেও নিরাপদ ও কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। ন্যাসভ্যাক ভারত ও চীনের মতো দেশকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে নিজ দেশে নিজস্ব উদ্ভাবিত ওষুধ অনুমোদনের অনন্য কৃতিত্ব অর্জন করেছে।

পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের সাথে ডিভিশনটির বেশ কয়েকটি গবেষনা প্রকল্প চলমান আছে। বাংলাদেশে উদ্ভাবিত বাংলাদেশের নিজস্ব কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ‘বঙ্গভ্যাক্সের’ ফেইজ-১ হিউম্যান ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালটিও সামনে এই ডিভিশনেই শুরু হতে যাচ্ছে। বানর এবং মানুষের শরীরে  বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যিাল ট্রায়ালগুলোর প্রধান গবেষক হিসেবে আছেন ডিভিশনটির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।
কেআই//