ইভ্যালির দায়িত্বে ফিরছেন শামীমা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০২:১৮ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৫:১৫ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ মঙ্গলবার
আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি আবার সচল হতে যাচ্ছে। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের এক আদেশে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে ফিরছেন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। শামীমার সঙ্গে থাকবেন তা মা ফরিদা তালুকদার ও ভগ্নিপতি মামুনুর রশীদ।
এ ছাড়া ই-ক্যাব ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন করে প্রতিনিধি স্বাধীন পরিচালক হিসেবে ইভ্যালির পর্ষদে যোগ দেবেন।
ইভ্যালির ২০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ফরিদা তালুকদার ও মামুনুর রশীদের কাছে। উচ্চ আদালতে শামীমা নাসরিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনিসহ তার মা ও ভগ্নিপতিকে ইভ্যালিতে পরিচালক হিসেবে নিয়োগের অনুমতি দেন আদালত। গত ২৪ আগস্ট একক বেঞ্চে এ বিষয়ে আদেশ জারি করেন বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম।
আদালতের আদেশের কপি একুশে টেলিভিশন অনলাইনের হাতে এসেছে।
আদেশে চলতি ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন শেয়ারহোল্ডারদের নাম প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন করার প্রক্রিয়া শেষ করতে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পাশাপাশি জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসসের রেজিস্ট্রারকে নতুন শেয়ারহোল্ডারদের নাম নিবন্ধনেও সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আদেশ দেওয়া হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইভ্যালির অডিট রিপোর্টও প্রতিষ্ঠানটির কাছে জমা দেওয়ার আদেশ দেন বিচারপতি খুরশীদ আলম।
এরই মধ্যে অডিট ফার্মের পক্ষ থেকে সেই রিপোর্ট ইভ্যালির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ই-ক্যাব মনোনীত একজন প্রতিনিধি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত কমপক্ষে উপসচিব পদমর্যাদার একজন সরকারি কর্মকর্তা স্বাধীন পরিচালক হিসেবে পর্ষদে যোগ দেবেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর মনোনীত প্রতিনিধির নাম জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। উভয় সংস্থা নিজেদের মনোনীত প্রতিনিধির নাম জমা দিয়েছে।
এদিকে ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন নিয়োগ পাওয়া পরিচালকদের নিয়ে বোর্ড সভার আয়োজন করতে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদকে আদেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের রায়ে।
এই সভার পর বর্তমান পর্ষদের সদস্যরা চাইলে পদত্যাগ করতে পারেন। আদালতের রায় বাস্তবায়নে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, সে বিষয়ে বর্তমান পর্ষদকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার আদেশও দেওয়া হয়েছে ওই রায়ে।
এ বিষয়ে বর্তমান পর্ষদের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব কবীর মিলন গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। ইভ্যালির বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে তারা জানান।
ইভ্যালির আইনজীবীদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তারা কল ধরেননি।
এর আগে গত ১০ আগস্ট ইভ্যালি পুনরায় চালু করতে আদালতের মাধ্যমে গঠিত বোর্ডের কাছে আবেদন করেন কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন।
আবেদনে তিনি নিজেকে এবং তার মা ও বোনের স্বামীকে পরিচালনা বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছেন। শামীমা নাসরিনের পক্ষে অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম এ আবেদন করেন।
গত ১৯ এপ্রিল ইভ্যালির অবসায়ন চেয়ে করা রিট মামলায় পক্ষভুক্ত হতে সংস্থাটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের আবেদন গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। আদালত আদেশে বলেন, এখন থেকে এ রিট মামলায় শামীমা নাসরিন ১৫ নম্বর বিবাদী হিসেবে গণ্য হবেন।
আদালতের আদেশের বিষয়ে রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসাইন মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, শামীমা নাসরিন বোর্ডে আসছেন, এর ফলে দ্রুত কোম্পানিটি আবার চালু করা সম্ভব হবে।
ওই দিন রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসাইন বলেছিলেন, ইভ্যালির অবসায়ন চেয়ে করা রিট মামলায় পক্ষভুক্ত আবেদন করেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। তিনি আবেদনে উল্লেখ করেন, কোম্পানিতে যে ৫০ শতাংশ শেয়ার ছিল, তার মধ্যে ২০ শতাংশ শেয়ার এরইমধ্যে তিনি নিজের মা ও বোনের স্বামীর নামে হস্তান্তর করেছেন। যখন এ মামলা দায়ের করা হয়, তখন এ মামলার বিবাদী হিসেবে তিনি ছিলেন না। তিনি আজকের আবেদনে বলেছেন, তাকে যেন এই মামলা বিবাদী হিসেবে গণ্য করা হয়। তার আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত এ মর্মে আদেশ দেন এখন থেকে শামীমা নাসরিন এই মামলায় ১৫ নম্বর বিবাদী হিসেবে গণ্য হবেন।
গত বছরের ১৮ অক্টোবর ইভ্যালি পরিচালনার জন্য আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বোর্ড গঠন করেন।
বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, ওএসডিতে থাকা আলোচিত অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ ও কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।
প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আরিফ বাকের নামের এক গ্রাহক গুলশান থানায় ইভ্যালির মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরদিন বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গত ২১ এপ্রিল চেক প্রতারণার ৯ মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেলকে জামিন দেন আদালত। ওই দিন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জামিন পান তিনি। তবে তার বিরুদ্ধে আরও মামলা থাকায় কারামুক্ত হতে পারেননি রাসেল। শামীমা নাসরিন বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
এএইচএস