ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

উদ্দাম প্রেম, একাধিক বিয়ে: জীবন্ত মাটিচাপার শিকার হন শাকিরা!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:৫৪ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ শনিবার

দু’বার বিয়ে করেছিলেন শাকিরা। দ্বিতীয় স্বামীই খুন করেছিল তাকে। আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রথমে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় স্বামী মুরলি মনোহর মিশ্রকে। পরে সেই সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

শাকিরা খলিলি হত্যাকাণ্ডের খবর প্রথম প্রকাশ্যে আসে ১৯৯৪ সালে। তার আগে প্রায় তিন বছর নিখোঁজ ছিলেন ৪৬ বছর বয়সী এই মুসলিম নারী। তার খুনের বিবরণ শুনে রীতিমতো শিউরে উঠেছিল গোটা ভারত।

১৯৯১ সালে নিখোঁজ হন শাকিরা। তার কোনও খোঁজ পাচ্ছিলেন না তার প্রথম পক্ষের সন্তানরা। দ্বিতীয় স্বামী মুরলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। পুলিশ পরে জানতে পারে, ওই বছরই শাকিরাকে খুন করা হয়েছিল।

১৯৪৫ সালে চেন্নাইয়ে এক পারসি (ইরানী) মুসলমান পরিবারে জন্ম শাকিরার। পরে তারা সিঙ্গাপুরে চলে যান। পরাধীন ভারতে মাইসুরু (মহীসুর), জয়পুর এবং হায়দরাবাদের দেওয়ান ছিলেন শাকিরার দাদু মির্জা ইসমাইল।

১৮ বছর বয়সে প্রথম বিয়ের পিঁড়িতে বসেন শাকিরা। তার স্বামী আকবর মির্জা খলিলি ছিলেন সম্পর্কে শাকিরার চাচাতো ভাই। প্রেমের টানে সেই চাচাতো ভাইয়ের গলাতেই মালা দেন শাকিরা। দীর্ঘ ১৯ বছর চুটিয়ে সংসারও করেন তারা।

টেনিস খেলোয়াড় হিসাবে খ্যাতি ছিল শাকিরার প্রথম স্বামী আকবর মির্জার। তিনি ভারতীয় বনবিভাগে চাকরি করতেন। পরে ইরানে চলে যান ভারতীয় দূত হিসাবে। এর পরেই ভাঙে তাদের সেই সোনার সংসার। শাকিরা-আকবরের ১৯ বছরের সংসারে ছিল চার সন্তান।

১৯৮৪ সালে বিবাহ বিচ্ছেদের দু’বছর পর ৮৬-র এপ্রিলে মুরলি মনোহর মিশ্রকে বিয়ে করেন শাকিরা। জানা যায়, তাদের পরিচয় হয় ১৯৮২ থেকেই। স্বামী শ্রদ্ধানন্দ নামেও পরিচিত ছিল শাকিরার এই দ্বিতীয় স্বামী।

বিয়ের পর শাকিরার সম্পত্তি, টাকা-পয়সা সব কিছুতেই অধিকার পেয়ে যান মুরলি। তবে জানা যায়, আগের পক্ষের সন্তানদের নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া-কলহ লেগেই থাকত।

বিয়ের পাঁচ বছর পর, ১৯৯১ সালে, হঠাৎ করেই নিখোঁজ হন শাকিরা। মুরলির সঙ্গে কথা বলেও মায়ের কোনও খোঁজ পাচ্ছিলেন না শাকিরার মেয়েরা। ১৯৯২ সালে বেঙ্গালুরুর অশোক নগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তারা। 

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখেও শাকিরা কোথায়, তা নিয়ে কোনও সদুত্তর দেয়নি মুরলি ওরফে স্বামী শ্রদ্ধানন্দ। সে জানায়, তার স্ত্রী কোথাও ছুটি কাটাতে গিয়েছে। কবে ফিরবে, তা সে জানে না।

১৯৯৪ সালে কর্নাটক পুলিশ শাকিরার কঙ্কাল উদ্ধার করে তারই বাড়ির আঙিনা থেকে। সেখানে পুঁতে দেয়া হয়েছিল তাকে। পুলিশ পরে জানতে পারে, ১৯৯১ সালের ২৮ এপ্রিল শাকিরাকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, আগে থেকে শাকিরার কবর খুঁড়ে রেখেছিল মুরলি। বাড়ির উঠানে গভীর গর্ত খুঁড়ে তার মধ্যে রাখা হয়েছিল একটি বড়সড় বাক্স। সেই বাক্সে ছিল একটি মোটা চাদরও। 

পুলিশ যখন মাটি খুঁড়ে দেহাবশেষ উদ্ধার করে, দেখা যায়- শাকিরার কঙ্কালের আঙ্গুলগুলো খামচে ধরে আছে সেই চাদরটি। এ ছাড়াও আরও কিছু তথ্য-প্রমাণ খতিয়ে দেখার পর পুলিশের অনুমান, জীবন্তই পুঁতে দেয়া হয়েছিল শাকিরাকে।

অবশেষে খুনের কথা স্বীকার করে মুরলি। শাকিরার কঙ্কাল কবর থেকে বের করার ভিডিও করা হয়েছিল। এমনটা খুনের তদন্তের ক্ষেত্রে ওই প্রথমবারই করা হয় ভারতে। ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় এই মামলাটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।

পরে ২০০৫ সালে কর্নাটকের নিম্ন আদালত শাকিরার খুনিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তাতে সায় দেয় হাই কোর্টও। কিন্তু পরে ২০০৮ সালে ফাঁসির সাজা কমিয়ে মুরলিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

কর্নাটকের উচ্চ আদালত অবশ্য শাকিরা হত্যাকাণ্ডকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে উল্লেখ করেছিল। বলা হয়েছিল, সমাজে তীব্র ভয়ের পরিবেশ করেছে এই হত্যাকাণ্ড। তাই এই অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তিই প্রাপ্য।

শাকিরার খুনের মামলায় প্রথম ডিএনএ টেস্ট এবং মৃতদেহ কবর থেকে তোলার ভিডিও আদালতে প্রমাণ হিসাবে গ্রাহ্য হয়েছিল। সে দিক থেকেও এই মামলাটি স্মরণীয় হয়ে আছে। 

তবে ঠিক কি কারণে মুরলি শাকিরাকে হত্যা করেছিলেন, সেটা প্রকাশ করেনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। সূত্র- আনন্দবাজার পত্রিকা।

এনএস//