কলেজ জীবনের ট্রেনের বকেয়া ভাড়া জমা দিলেন বৃদ্ধ নওশের আলী
রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৯:০৬ এএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ রবিবার
রাজবাড়ী রেলস্টেশনে ট্রেনের বকেয়া ভাড়া জমা দিচ্ছেন নওশের আলী শেখ বৃদ্ধ
১৯৬৯ সাথে এসএসসি পাস করেন বৃদ্ধ নওশের আলী শেখ (৭১)। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘ কর্মজীনের সমাপ্তির পর এখন অবসর জীবন অতিবাহিত করছেন তিনি। জীবনের শেষ সময়ে এসে আত্মগ্লানিতে ভুগছেন এই কৃষি কর্মকর্তা। আর ওই আত্মগ্লানি গোছাতে সরকারি কোষাগারে প্রদান করলেন কলেজ জীবনে ট্রেনে আসা-যাওয়ার বকেয়া ভাড়া।
তিনি এসএসসি পরীক্ষায় পাস করার পর ভর্তি হন রাজবাড়ী সরকারী কলেজে। সে সময় ট্রেনে চড়ে নিয়মিত রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের বাজার বেতেঙ্গা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে পার্শ্ববর্তী আড়কান্দি স্টেশন হয়ে কলেজে আসা-যাওয়া করতেন তিনি।
বৃদ্ধ নওশের আলী শেখ বলেন, ছাত্র থাকা অবস্থায় কখনও ট্রেনের টিকেট কেটেছেন আবার কখনও কাটেননি। ফলে ট্রেনের ভাড়া বকেয়া থাকাটা স্বাভাবিক। যে কারণে ছাত্রাবস্থায় ট্রেনে যাতায়াতের ভাড়া হিসাব করে আনুমানিক একটা অংক নিজে নিজেই নির্ধারণ করেছেন তিনি। যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার টাকা।
ওই টাকা তিনি শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে নিয়ে আসেন রাজবাড়ী রেলস্টেশনে। পরবর্তীতে রেলস্টেশন মাষ্টারের সহযোগিতায় ট্রেনের টিকেট কালেক্টর মোকলেছুর রহমান সাগরের হাতে টাকা তুলে দেন এবং ৫ হাজার টাকার টিকেট গ্রহণ করেন।
ট্রেনের টিকেট কালেক্টর মোকলেছুর রহমান সাগর বলেন, “বিষয়টা ব্যতিক্রম। ইতোপূর্বে টিকেট না কাটা অনেকেই তাদের কাছে স্বল্প পরিমাণ অর্থ ফেরত দিয়েছেন। তবে নওশের আলী শেখের মত এতো টাকা ভাড়া হিসেবে কেউ পরিশোধ করেননি।”
নওশের আলীর ছোট ভাই তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, “তার ভাই পরিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই ট্রেনের ভাড়া পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে তারা অনেক খুশি।”
রেলওয়ের সাবেক টিকেট কালেক্টর সুবোধ কুমার ভৌমিক ও সহকারী কৃষি অফিসার অরুন কুমার সরকার বলেন, নিঃসন্দেহে এটা একটা মহত কাজ। প্রতিটি মানুষ তার আত্মোপলব্ধির জায়গা থেকে নিয়মিত ট্রেনের ভাড়া এবং বকেয়া ভাড়ার টাকা সরকারি কোষাগারে প্রদান করাটা জরুরি। নওশের আলী শেখ যেটা করেছেন, এটাই হলো মনুষত্ব। তার এই কার্যক্রম দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
রাজবাড়ী রেলস্টেশন মাষ্টার তন্ময় দত্ত বলেন, নওশের আলী শেখ ভাড়া পরিশোধের বিষয়টি বলায় তিনি তা সাদরে গ্রহণ করেছেন। সেই সঙ্গে ভাড়া পরিশোধের পুরো কার্যক্রমে সহায়তা করেছেন। এরকম আত্মোপলব্ধি প্রতিটি মানুষের থাকলে রেলেওয়ের উন্নয়ন ঘটতে বাধ্য মনে করেন তিনি।
এএইচ