ক্রমাগত বাড়ছে আত্মহত্যা, বেশিরভাগই শিক্ষার্থী (ভিডিও)
শাকেরা আরজু, একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:৩৩ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ বুধবার | আপডেট: ১২:৩৪ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ বুধবার
দেশে প্রতিবছরই বাড়ছে আত্মহত্যার সংখ্যা। যাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। গবেষকরা বলেছেন, ক্রমাগত দোষারোপ, তুলনা দিয়ে অপমান, হেয় করার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। মানসিক নির্যাতন ঠেকাতে দ্রুত সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইন করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
নিলয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্টে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় ফলাফল খারাপ করা নিয়ে পরিবারে প্রতিনিয়ত বকাঝকা, অপমান শুনে আসছিলেন। আর এ সময়টায় প্রচণ্ড মানসিক দ্বন্দ্বে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। একটা সময় তিনি সিদ্ধান্ত নেন আত্মহত্যার। ভাগ্রক্রমে বেঁচে যান নিলয়।
নিলয় বলেন, “সতের দিন পড়তে পারেনি, পরে সিদ্ধান্ত নেই আমি সুইসাইট করবো। সবার অবিশ্বাস ধীরে ধীরে আমার কনফিডেন্স লেবেলটা কমিয়ে দিয়েছিল।”
নিলয়ের মত অনেকেই মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এও বাড়ছে ফোনকল। ২০১৮ সালে ৮৪৬টি ফোন কল এসেছে আর ২০২২ সালে আগস্ট পর্যন্ত ২ হাজার ৮৭৮টি। চলতি বছর আত্মহত্যা করেছেন ৯৪৭ জন। আর শুধু আগস্টেই আত্মহত্যার সংখ্যা ১৩৩টি।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’র গণমাধ্যম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ার সাত্তার বলেন, “কিছু কিছু ক্ষেত্রে যিনি আত্মহত্যা করতে ইচ্ছুক তিনি নিজেই ফোন করেন। তার মানসিক অবস্থাটা শেয়ার করার জন্য। জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে তিনি চিন্তা করেন যে তার মানসিক অবস্থাটা ৯৯৯-র সাথে বা কারো সাথে শেয়ার করি।”
গবেষকরা বলছেন, ক্রমাগত দোষারোপ, তুলনা দিয়ে অপমান, হেয় করার কারণে অনেককে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী ফওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, “তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য হচ্ছে, পড়াশুনা ভালো করতে পারছে না। মা-বাবা ওভার প্রেসারাইজড করে- এটা এক রকম হত্যাচার।”
কারো মাথায় চুল কম, কেউ মোটা আবার উচ্চতা কম হওয়ায় অনেকের শুনতে হয় কটুকথা। অপমান-তাচ্ছিল্য করার কারণে ব্যক্তির মনে নিরবে যুদ্ধ চলে। শরীরে আঘাত পেলে ডাক্তারের কাছে গেলেও মানসিক সুরক্ষায় নিয়ে উদাসীন বেশিরভাগ মানুষ।
মানসিক নির্যাতন হলেও বর্তমানে আইনি সহযোগিতা পাবার সুযোগ নেই। পারিবারিক সহিংসতা আইন থাকেলেও সেখানে নেই মানসিক নির্যাতনের কথা। এজন্য প্রথমে মানসিক নির্যাতন সংজ্ঞায়িত করা এবং আইন করাটা জরুরি, বলছেন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী।
ফওজিয়া করিম ফিরোজ আরও বলেন, “মানসিক নির্যাতনের জন্য কোনো আইনই নেই। শুধু একটা জায়গায় পারিবারিক সহিংসতা আইনে মানুসিক নির্যাতনের কথাটা বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে।”
প্রতিবছর এভাবে প্রাণ চলে যাওয়া ভীতিকর, তাই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
এএইচ