শুভ জন্মদিন
একা এক নীলকন্ঠ শেখ হাসিনা
কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক
প্রকাশিত : ১১:০৩ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ বুধবার | আপডেট: ১১:২২ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ বুধবার
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নব পর্যায়ের বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা। হিমাদ্রী শিখর সফলতার মূর্ত-স্মারক, উন্নয়নের কাণ্ডারি। উন্নত সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। বাঙালির আশা-আকাঙ্খার একান্ত বিশ্বস্ত ঠিকানা। আজ ২৮ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন।
১৯৪৭ সালের এদিনে তিনি গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী বিধৌত টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা’র জ্যেষ্ঠ সন্তান। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শেখ হাসিনা ছিলেন জ্যেষ্ঠ। তার অন্য ভাই-বোনেরা হলেন- শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেল।
শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তার পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। পুরান ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেনে বসবাস শুরু করেন। পরে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য নির্বাচিত হলে আবাস স্থানান্তরিত হয় ৩ নম্বর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর। এ সময় শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ঢাকার বকশী বাজারের পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভানেত্রী (ভিপি) পদে নির্বাচিত হন। একই বছর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তিনি গৃহবন্দি থেকেছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বিদেশ থাকায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। শেখ হাসিনা বুঝতেও পারলেন না কিভাবে এক রাতের ঝড়ে তাঁদের সুখের আনন্দ-আশ্রম একেবারে লন্ডভন্ড হয়ে গেল। হঠাৎই যেন সব অচেনা হয়ে গেল। ‘কাছের’ মানুষেরা মুখ ফিরিয়ে নিলেন। যে দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন দিলেন পিতা। পরিবারসহ সর্বস্ব হারালেন। সে দেশে দু’বোনের জন্য একটু জায়গা হলো না। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শেখ মুজিবের জীবন বাঁচাতে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী সম্ভাব্য সব কিছু করেছিলেন। এবারও তিনি দুই অনাথ কন্যার দায়িত্ব নিলেন।
সর্বস্ব হারিয়ে শেখ হাসিনা ছোট বোনকে নিয়ে শুরু করলেন অন্য এক সংগ্রাম। এরপর সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ ভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। সেদিন শেখ হাসিনাকে বরণ করার জন্য জনতার ঢল নেমেছিল। যারা পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হারিয়ে দুফোঁটা চোখের জল ফেলতে পারেননি, তারা একাশি সালের ১৭ মে অকাতরে চোখের জল ঢেলে দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করেছিলেন যেন। তাঁর দেশে ফেরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। তিনি ফিরে আসার পর মুক্তিযুদ্ধের হারানো চেতনাকে ফিরিয়ে আনার রাজনীতি বলবান হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।
সেদিন ঝড়-বাদল আর জনতার আনন্দাশ্রুতে অবগাহন করে শেরে বাংলা নগরে লাখ লাখ জনতার সংবর্ধনার জবাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন,‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’‘আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’
তিনি আরো বলেছিলেন, ‘জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়, মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধার এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন দীর্ঘ সংগ্রাম শুরু হয়।
১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তাঁর একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। বারবার তার জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। এ সময় ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি এবং প্রতিবেশি ভারতের সাথে গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিনবার ক্ষমতায় আসে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বৈরশাসনের অবসান, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। খাদ্যে স্বয়ংস্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনি ও একাত্তরের নরঘাতক মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন এবং রায় কার্যকর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব, যোগ্যতা, নিষ্ঠা, মেধা-মনন, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে এক সময় দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করত সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ।
এসময় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি এবং সমুদ্রে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও ছিটমহল বিনিময়, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ-সুবিধার আওতায় আনা, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৪ বছর ৪ মাসে উন্নীত, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫.৬০ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারী নীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফাইভ-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাঁর নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি আজ চাঙ্গা হয়েছে। তলাবিহীন ঝুঁড়ি হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত বাংলাদেশ আজ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে আজ উন্নয়নের রোল মডেল।
দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করেছেন রূপকল্প ‘ভিশন ২০২১’ এর সফল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ‘ভিশন ২০৪১’ কর্মসূচিসহ বাংলাদেশ বদ্বীপ মহাপরিকল্পনা (ডেল্টা প্ল্যান ২১০০)।
মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ও নির্যাতিত লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেশে আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্বমানবতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর মহানুভবতার কারণে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। যা মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এজন্য তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’অভিধায় ভূষিত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা, তথ্যপ্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়নসহ দারিদ্র্যবিমোচনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি দেশি-বিদেশি অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬-এ তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান ও ভূমিকা বিশ্বে আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। মুজিববর্ষ, স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আয়োজিত নানাবিধ অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী দেশসমূহের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের অংশগ্রহণের ফলে এসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক-সহযোগিতার ক্ষেত্র আরো সম্প্রসারিত হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর নেতৃত্বে অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আজ একটি রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনেও তিনি বিশ্বনেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সততা, মেধা, দক্ষতা ও গুণাবলিতে সমসাময়িক বিশ্বের অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদর্প বিচরণ ও প্রভাব দেশের সম্মান ও মর্যাদাকে অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। এছাড়া করোনামহামারির প্রভাবে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে সরকার করোনার প্রভাব মোকাবিলা করে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। করোনার মধ্যেও নানাক্ষেত্রে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ।
এক বর্ণাঢ্য সংগ্রাম মুখর জীবন তাঁর। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তিনি গৃহবন্দি থেকেছেন। সামরিক স্বৈরশাসনামলেও বেশ কয়েকবার তাঁকে কারা নির্যাতন ভোগ ও গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। বার বার তাঁর জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। অন্তত ২০ বার তাকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তাঁর উপর গ্রেনেড হামলা করে বিএনপি- জামায়াত জোট সরকার। এতে আল্লহার অসীম রহমতে তিনি বেঁচে ফিরলেও নিহত হয় আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মী আর আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেন প্রায় ৫০০ শতাধিক নেতাকর্মী। ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে তার লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল।
সব হারিয়ে তিনি যেন একা এক নীলকণ্ঠ পাখি। এত কিছুর পরেও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র আর তাঁকে হত্যা চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি প্রায় বলেন,‘আমি নীল কণ্ঠ। নীলকণ্ঠের মত বিষ পান করেও তা হজম করতে পারি’। গণভবনে দলীয় নেতাদের সাথে এক বৈঠকে দুঃখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এ কথা বলেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন,‘আমি ব্যক্তিগত লাভের জন্য রাজনীতি করি না। আমি দেশের মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছি’। শেখ হাসিনার জন্মই যেন ত্যাগ স্বীকার করার জন্য। পিতা শেখ মুজিব পরাধীন জাতির মুক্তির আন্দোলনে নিজেকে উৎসর্গ করলেন।
তাকে দেখে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা মনে পড়ে যায়-
‘অন্ধকারে সিন্ধু তীরে একলাটি ওই মেয়ে
আলোর নৌকা ভাসিয়ে দিলো আকাশ পানে চেয়ে।’
মা যে তাহার স্বর্গে গেছে এই কথা সে জানে,
ঐ প্রদীপের খেয়া বেয়ে আসবে ঘরের পানে।
নিঃস্ব হয়েও তিনি অন্ধকারের ভেতর দিয়েও জাতিকে আলোকিত করে যাচ্ছেন। এ যেন দুঃখের দরিয়া একা সাঁতরে কূলে পৌঁছেছেন। এখানেই তিনি একেবারেই আলাদা-অনন্য। তাঁর জীবন পৌরাণিক ফিনিক্স পাখির গল্পের মতো। কেউ তাঁর জীবনের পটভূমি সন্ধান করতে চাইলে তা বর্ণনার জন্য এটিই হতে পারে যথাযথ উপমা। পূর্বসূরির ছাই থেকে পৌরাণিক ফিনিক্স পাখির নতুন জীবন লাভের মতই তাঁর উত্থান।
কোন পুরুস্কার কিংবা স্বীকৃতি যেন তাঁর কাছে তুচ্ছ। এদেশের মানুষের বিরল ভালোবাসায় তিনি সিক্ত হয়েছেন। তৃণমূলের কাছে শেখ হাসিনা মানেই ভিন্ন এক অনুভূতি। তাই তাঁর কাছে এদেশের মানুষের দাবি-ও বেশি। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি তৃণমূলের খবর রাখেন এবং প্রয়োজনে সাড়া দেন। যা একজন শাসকের সব থেকে বড় গুণ।
জনগণের জন্য কাজ করার স্বীকৃতি স্বরূপ জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে যেসব সম্মানজনক স্বীকৃতি ও পুরস্কার দেওয়া হয় সেগুলো হলো- চ্যাম্পিয়ন্স অব আর্থ, মাদার তেরেসা পদক, মহাত্মা গান্ধী পদক, সেরেস পদক, এমডিজি পুরস্কার, ইন্ধিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার, সাউথ-সাউথ পুরস্কার ও পিস ট্রি।তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর অন্যান্য বিশ্বনেতাদের অংশগ্রহনে ইউএনজিএ’র সাধারণ আলোচনায় অন্যান্য বছরের মতো বাংলায় ভাষণ দেন।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সব থেকে বড় সম্ভাবনার নাম শেখ হাসিনা। তিনি আজও জেগে আছেন বলেই বাংলাদেশ ঘুমাতে পারি। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে ভালোবাসা, তা অনন্য। চার দশক আগে যদি তিনি আওয়ামী লীগের হাল না ধরতেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী না হতেন, তাহলে আজ এ উন্নতি, এ অগ্রগতি হতো সুদূরপরাহত। সকল অশুভ শক্তিকে রুখে দিয়ে দৃপ্ত হাতে রাষ্ট্র পরিচালনাকারীকে অন্তর্নিহিত ভালোবাসা।
লেখক- সাংবাদিক ও ছাত্রনেতা।