ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

উদ্বাস্তু হওয়ার ভয়ে গারোরা (ভিডিও)

মুহাম্মদ নূরন নবী, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:৩১ পিএম, ৪ অক্টোবর ২০২২ মঙ্গলবার | আপডেট: ০১:৩৩ পিএম, ৪ অক্টোবর ২০২২ মঙ্গলবার

শত শত বছর ধরে একই জমিতে পূর্ব-পুরুষরা বসবাস করলেও এ প্রজন্মের হাতে নেই জমির বৈধ কাগজপত্র। এমন বাস্তবতা টাঙ্গাইলের মধুপুরের গারো-কোচ সম্প্রদায়ের। ফলে জমির মালিকানার সংকট এই অঞ্চলের অশান্তির মূল কারণ। 

টাঙ্গাইলের মধুপুর। যার অর্ধেক জুড়ে বিস্তৃত ঝরাপাতার শালবন। পাহাড়ি-উচু-নীচু লালমাটির সন্তান গারো সম্প্রদায়। জুমচাষ আর বন-জঙ্গলে লাকড়ি সংগ্রহ করে সহজ-সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত তারা। 

জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু কিংবা জমির মালিকানার বিষয়ে আলাদা করে ভাবতে হয়নি কখনো। বনবিভাগ সৃষ্টি, ন্যাশনাল পার্ক ঘোষণার পর প্রথম ভাঁজ পড়লো তাদের কপালে। 

উঁচু জমিতে পাট্টান, আর নীচু জমিতে পাট্টা নিয়মে জমিদারী আমলেও খাজনা বা কর পরিশোধ করেছে গারোরা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কর নেয়া বন্ধ করে দেয় সরকার। এখন বিবাদে বন বিভাগের সাথে বেড়েছে জটিলতা। 

জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক বলেন, “ন্যাশনাল পার্ক ঘোষণার সাথে সাথে উচ্ছেদ নোটিশ দেয়। এর মাধ্যমে বিষয়টি আমরা জানতে পারলাম। এখন সংরক্ষিত বনের গেজেট সংশোধন করে আদিবাসীদের ঘরবাড়ি বাদ রেখে নতুন করে গেজেট অথবা মধুপুর ন্যাশনাল পার্ক যেটা ঘোষণা করা হয়েছে এটাকেও সংশোধন করে আদিবাসীদের গ্রামগুলো বা জায়গাজমি যা দখলে আছে এটা যেন বাদ রাখা হয়।”

ঘর-বাড়ি, কৃষি জমি থাকার পরও এখন দলিলবিহীন মালিক গারোরা। তাই জোড়ালো হচ্ছে সনাতনী ভূমি অধিকারের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দাবিও। 

সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ট হিউম্যান ডেভলাপমেন্টের পরিচালক ফিলিপ গাইন বলেন, “অনেক বছর ধরে দখলে আছে কিন্তু দলিল নাই। এখানে ১০ শতাংশ মানুষের সিএস আছে। যে কেউ কোনো জায়গায় দীর্ঘদিন থাকেন তার একটা আইনগত অধিকার জন্মায়। এখন এটা নিয়েই মধুপুরে যতো অশান্তি। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট বলে এসব জমির মালিক তারা, আর এখানে গারো বাঙালিরা যারা আছেন তারাও জমির মালিক।”

গারো, বনবিভাগ ও প্রশাসন মিলিয়ে ত্রি-পক্ষীয় জরিপে গারো বসতি ও বনের সঠিক অবস্থান নিরুপণ এখন সময়ের দাবি।

ফিলিপ গাইন বলেন, “বনবিভাগ সৃষ্টির আগে থেকে যে নাগরিক যে জায়গায় শত শত বছর ধরে বসবাস করছেন সেই জমি দিতে কোনো বাধা নেই।”

ইউজিন নকরেক বলেন, “বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের অধিবেশনে আইএলও কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছেন। ওখানে বলা হয়েছে যদি আদিবাসীদের জমির কোনো কাগজপত্র না থাকে তাদের এই জমির অধিকার দিতে হবে। যে যে অবস্থায় আছে সেই ভাবেই রাখতে হবে। তারপরেও অনিশ্চয়তার মধ্যে, যেহেতু আমরা সংখ্যালঘু।”

বন বনের মতো রেখে ভূমিপুত্রদের জমি ফিরিয়ে দিলেও এক ইঞ্চি প্রাকৃতিক বন নষ্টের শংকা নেই বলে মনে করছেন গবেষকরা। একমাত্র সরকার চাইলে তবে-ই হতে পারে সংকটের সমাধান।

যথাযথ অধিকার না থাকায় বনবিভাগ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে গারোদের দ্বন্দ্ব যুগের পর যুগ ধরে। এই বাস্তবতায় গারোদের প্রতিটি ক্ষণ কাটে অনিশ্চয়তায়। তারা ভয় পান যেকোনো মুহূর্তে তারা উদ্বাস্তু হতে পারেন। তাই সরকারের কাছে তাদের একমাত্র দাবি যেকোনো ভাবেই হোক এবং দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী এই জমিতে তাদের ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

এএইচ