পরিযায়ী পাখি বাংলাদেশে আসে কেন, কোন পাখি বেশি আসে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:২৯ পিএম, ৮ অক্টোবর ২০২২ শনিবার
শীতের আগমনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখি বা অতিথি পাখি এবং বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশের হাওর ও উপকূলীয় এলাকা ছাড়াও সমতলের বেশ কিছু এলাকায় আগামী কয়েক মাস এসব পাখির দেখা মিলবে।
মূলত বর্ষার শেষে এবং শীতের আগে থেকেই এসব পাখি বাংলাদেশে আসা শুরু করে এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় মার্চ মাসের শেষ নাগাদ থাকার পর আবার ফিরে যায় পাখিগুলো।
বাংলাদেশে অবস্থানকালে মূলত টাঙ্গুয়ার হাওরসহ বিভিন্ন হাওর এলাকা আর কক্সবাজারের সোনাদিয়ার মতো বেশ কিছু দ্বীপের উপকূলে এসব পাখির ব্যাপক উপস্থিতি চোখে পড়বে।
শীতের সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় জলাশয়ে নানা রং বেরংয়ের পাখি চোখে পড়ে। ঢাকার কাছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়ে এসব পাখি দেখতে ভিড়ও করেন অনেক দর্শনার্থী।
এছাড়াও মিরপুর চিড়িয়াখানার লেক, বরিশালের দুর্গাসাগর, নীলফামারীর নীল সাগর, সিরাজগঞ্জের হুরা, আর সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর ছাড়াও নিঝুম দ্বীপ, ঢালচর, চরকুকরী মুকরী কিংবা দুবলার চরেও এসব পাখির ঝাঁক দেখা যায় শীতের সময়ে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলছিলেন যে শীতের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলোতে অন্য রকম এক সৌন্দর্য তৈরি হয় পাখিগুলোর উপস্থিতিতে।
"এতো সুন্দর লাগে যে বলে বোঝাতে পারবো না। খুব মায়াও লাগে যখন ওরা চলে যায়," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
কোথা থেকে আসে পাখিগুলো
এক সময় ধারণা ছিলো যে রাশিয়া ও সাইবেরিয়া থেকে অতিথি পাখি অর্থাৎ পরিযায়ী পাখিগুলো এ অঞ্চলে আসে কিন্তু এখন এর ভিন্নমত পাওয়া যাচ্ছে।
এসব পাখি নিয়ে গবেষণা করেছেন পরিযায়ী পাখি বিশেষজ্ঞ সারোয়ার আলম দীপু। তিনি বলছেন রাশিয়া ও সাইবেরিয়া থেকে এসব পাখি আসে বলে যে তথ্য প্রচলিত আছে সেটি ঠিক নয়।
বরং পাখিগুলোর মূলত আসে উত্তর মঙ্গোলিয়া, তিব্বতের একটি অংশ, চীনের কিছু অঞ্চল, রাশিয়া ও সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চল থেকে। অর্থাৎ উত্তর মেরু, ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু এলাকা ও হিমালয় পর্বতমালার আশে পাশের এলাকা থেকেই পাখিগুলো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশে আসে যেখানে তুলনামূলক কম ঠাণ্ডা পড়ে ও খাবার পাওয়া যায়।
আবার মার্চের শেষ দিকে যখন এ অঞ্চলে গরম পড়তে শুরু করে ও শীতপ্রধান এলাকায় বরফ গলা শুরু হয় তখন আবার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পাখিগুলো নিজ এলাকায় ফেরত চলে যায়।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে পাখি শুধু এ অঞ্চলেই আসে তা নয় বরং নানা পরিস্থিতিতে পাখি বিশ্বের নানা অঞ্চলে পরিভ্রমণ করে যা মূলত তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রামেরই অংশ।
বাংলাদেশে ১৯৯৪ সালে অতিথি পাখি এসেছিল ৮ লাখের বেশি। ২০১৪ সালে এ সংখ্যা নেমে এসেছে দুই লাখের নিচে। অর্থাৎ গত ২০ বছরে প্রায় ছয় লাখ পাখি আসা কমে গেছে। তবে এখন এ সংখ্যা সাড়ে তিন লাখের মতো বলে বলছেন গবেষকরা।
কেন এসব পাখি বাংলাদেশে আসে
পাখি বিশেষজ্ঞ সারোয়ার আলম দীপু বলছেন মূলত বাংলাদেশে শীতের সময়ে জলাশয়গুলোতে পানি কমে যায় এবং সে সময়কার কচিপাতা, শামুক, ঝিনুকসহ কিছু উপাদান এসব পাখির প্রিয় খাবার। সে কারণে ওই সময়ে বাংলাদেশের জলাশয়গুলো হয়ে ওঠে তাদের খাবারের উপযোগী স্থান।
"পাখিগুলো যেখান থেকে আসে সেখানে শীতে বরফে সব ঢেকে যাবে এবং খাদ্য সংকট তৈরি হবে। সে কারণেই বেঁচে থাকার একটি উপযোগী এলাকা খুঁজতে খুঁজতেই কিছু পাখি এ অঞ্চলে আসে। মার্চের শেষে তারা আবার ফিরে যাবে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
তার মতে ভারতেরও কিছু এলাকায় পরিযায়ী পাখিকে স্বল্পকালীন আবাস গড়তে দেখা যায়। তবে বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়াও নেপালের দু একটি এলাকাতেও এসব পাখি অল্প হলেও দেখা যায়।
আবার অতিথি পাখি যেন নিরাপদে বাংলাদেশে অবস্থান করতে পারে সেজন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কারণে কিছু অভয়ারণ্য তৈরি হয়েছে দেশটিতে। এসব পাখি শিকার বা হত্যাকে দণ্ডনীয় অপরাধ করা হয়েছে।
কত জাতের পাখি আসে বাংলাদেশে
সারোয়ার আলম বলছেন বাংলাদেশে আসে সাধারণত হাঁস আর সৈকত প্রজাতির পাখি। একটি জরিপকে উদ্ধৃত করে তিনি জানিয়েছেন যে হাঁস প্রজাতির প্রায় তিন লাখের মতো আর সৈকত প্রজাতির ৫০ হাজার থেকে এক লাখ পাখি এক মৌসুমে বাংলাদেশে আসে।
এর মধ্যে হাঁস প্রজাতির পাখিগুলো হাওর অঞ্চলে আর উপকূলীয় এলাকা বিশেষ করে সোনাদিয়া দ্বীপ, ঢালচর, চর কুকরী মুকরীসহ কিছু চরে সৈকত প্রজাতির পাখি দেখা যায়। আবার ইউরোপীয় এলাকা থেকে আসা কিছু লালবুকের ক্লাইক্যাসার পাখিও দেখা যায় কখনো কখনো।
শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়েই ২০-২৫ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি চোখে পড়ে শীতের সময়ে।
মি. আলম বলেছেন যে গবেষণায় দেখা গেছে ১০/১১ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েও পাখি আসে বাংলাদেশে। "আসলে আমাদের হাওরের মতো এলাকা কিংবা সোনাদিয়ার মতো ছোট সৈকত এলাকা এসব পাখিদের বেঁচে থাকার জন্যই দরকার," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসবি/