সড়কে বছরে প্রাণ হারান অন্তত ২৫ হাজার মানুষ (ভিডিও)
শিউলি শবনম, একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৩৪ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০২২ বুধবার
আইন হয়েছে চার বছর আগে। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত হয়নি বিধিমালা। নির্ধারিত হয়নি মহাসড়কে যান চলাচলের গতিসীমা। এতে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮। বিশেষষজ্ঞরা বলছেন, যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় ঘটছে দুর্ঘটনা। বছরে মারা যাচ্ছে অন্তত ২৫ হাজার মানুষ।
কত গতিতে চলছে তা দেখার যন্ত্র বা স্পিডমিটারটিই বছরের পর বছর ধরে অকেজো এই বাসের। কোনো কোনো বাসে দেখা গেছে গতি পরিমাপক যন্ত্রই নেই। একই অবস্থা মহাসড়কে চলাচলকারী অনেক বাসের।
মহাসড়কে চলাচলকারী এসব পরিবহন চালক সুনির্দিষ্টভাবে জানেই না মহাসড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা মেনে যানবাহন চালাতে হয়। ফলে দেখা যায় ইচ্ছে মতো নিয়ন্ত্রণহীন গতির খেলায় মেতে উঠেন বেশিরভাগ চালক। আর এতে সড়কে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা।
শুধুমাত্র গত একমাসে ১৩শ’ ৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৪শ’ ৬৭ জন মানুষের।
মহাসড়কগুলো যেন রেসের মাঠ! এক লেনের গাড়ি অন্য লেনেতো চলছেই। সেইসাথে চলছে বেপরোয়া ওভারটেকিং। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট-এআরআই’র তথ্য বলছে, সড়কে ৮২ শতাংশ দুর্ঘটনাই ঘটছে নিয়ন্ত্রণহীন গতি ও বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে। গত দুই বছরে দেশের সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটে ৬ হাজারের বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৮ সালে সড়ক পরিবহন আইন করা হলেও চার বছরেও তৈরি হয়নি বিধিমালা। কোন সড়কে কতো গতিতে গাড়ি চলবে, চালকদের জন্য এমন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকাও দুর্ঘটনার কারণ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. শরীফুল আলম বলেন, “যেহেতু এখন পর্যন্ত এই বিধি কার্যকর হয়নি সেহেতু আমরা জানতে পারছিনা এর গতিসীমাটা কিভাবে বাস্তবায়িত হবে। কি ধরনের গতি হবে, কোন জায়গায় যেয়ে গতি কমবে-বাড়বে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা বা কোনো গাইডলাইন প্রস্তুত হয়নি।”
সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ বলছে সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালা তৈরি হয়েছে। এখন অপেক্ষা অনুমোদনের।
বিআরটিএ পরিচালক (সড়ক নিরাপত্তা) শেখ মাহবুব-ই-রাব্বানী বলেন, “আইন জারি হওয়ার পর থেকেই আমরা বিধি প্রণয়নের কাজ করেছি। এখন শুধু জারির অপেক্ষায়। এখানে যেহেতু আর্থিক বিষয় জড়িত এ কারণে অর্থ বিভাগের সম্মতি প্রয়োজন রয়েছে।”
দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে চালকদের উপর নজরদারি ও গতি শনাক্তে মহাসড়কে স্পিড ক্যামেরা, স্পিডোমিটার কিংবা স্পিডগানের মতো আধুনিক সরঞ্জামের ব্যবহার বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বলেন, “গতিসীমা মানানোর জন্য যদি গাইডলাইন থাকতো তাহলে কর্তৃপক্ষ স্পিডোমিটার সেট করতে পারতো। তাতে আইনের মাধ্যমে সড়কে স্পিড লেভেলটা কন্ট্রোল করা যেতো।”
হাইওয়ে পুলিশ বলছে, যানবাহনের গতি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখতে মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ চলছে। জরুরি চালকদের সচেতনতাও।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার পুলিশ পরিদর্শক সৈয়দ নাজমুল হুদা বলেন, “সব সময় পুলিশ দাঁড় করিয়ে তো কন্ট্রোল করা যাবে না। সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সেজন্য বিভিন্ন টার্মিনাল-স্টপিজে আমরা সভা-সেমিনার করে থাকি।”
বিআরটিএ’র মৌখিক নির্দেশনা অনুযায়ী মহাসড়কে বাসের গতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার এবং মহানগরীতে সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার।
এএইচ