‘সর্ষেয় ভূত’, বিআরটিএতে গেলেই বাসের আসন বেড়ে যায় ১০টি (ভিডিও)
সাইদুল ইসলাম, একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:৪১ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০২২ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১২:৪৮ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০২২ বৃহস্পতিবার
কিছুতেই নৈরাজ্য থামছেনা গণপরিবহনে। প্রতিটি বাসে নির্ধারিত আসনের চেয়ে অন্তত ১০টি আসন বেশি বসানো হয়েছে। শর্তপূরণ না হলেও বিআরটিএ থেকে দেয়া হচ্ছে গণপরিবহনের রেজিস্ট্রেশন, যা ধরা পড়েছে একুশে টেলিভিশনের অনুসন্ধানে।
এই অনিয়মের জন্য বিআরটিএকে দায়ী করেছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। যদিও এনিয়ে কথা বলতে নারাজ বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি ইকুরিয়া বিআরটিএর কার্যালয় থেকে রেজিস্ট্রেশন নেওয়া একটি বাসের সন্ধান পায় একুশে টেলিভশন। সব শর্ত পূরণ হয়েছে কিনা তা দেখতে বাসের কাগজপত্র পরিদর্শন করা হয়।
এসময় বাসের চালক জানান, নম্বর ছাড়াই বাসটি চলেছে তিন মাস। বাসটির নম্বর প্লেটের জন্য দেয়া রেজিট্রেশন পেপারে উল্লেখ আছে ৩৮ আসন। অথচ ইঞ্জিনকভারসহ আছে ৪৮টি বসার আসন। একটি আসনের সাথে অন্যটির দূরত্ব হওয়ার কথা দেড় ফুট কিন্তু আছে এক ফুটেরও কম। দেখা গেছে, এক আসন থেকে অন্যটির দূরত্ব ১০ ইঞ্চিরও কম। ফলে ওই জায়গা দিয়ে যত্রিীদের ঢোকা-বের হওয়াই কষ্টকর।
শর্ত পূরণ না হওয়ার পরও কীভাবে বাসটি রেজিস্ট্রেশন পেল- এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যিনি রেজিস্ট্রেশনে স্বাক্ষর করেছেন, সংশ্লিষ্ট সেই বিআরটিএর কর্মকর্তার কক্ষে গিয়ে তার দেখা মেলেনি। তিনি কোথায় গেছেন কেউ জানেনও না।
বিষয়টি জানানো হয় সহকারী পরিচালক জিএম নাদির হোসেনকে। কাগজ দেখে তিনি হয়ে যান হতবাক। বাসটি দেখতে চাইলেন নিজ চোখে।তাৎক্ষণিকভাবে তিনি সেই বাসটি পরিদর্শনে যান। নিজের চোখে দেখ অনিয়মের তথ্য জানার পর তৎক্ষনাৎ গাড়ির ফিটনেস স্থগিত করে তিনি।
তবে শর্ত পূরণ না করার পরও কীভাবে বাসটি রাস্তায় চলাচল করল- এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। জানালেন, এসব নিয়ে কথা বলা নিষেধ।
নাদির হোসেন বলেন, “আমাদের কাছে নিয়ে আসছে (বাসটি) তখন পেছনের সিটগুলো খুলে নিয়ে আসছে।”
এ প্রসঙ্গে ইকুরিয়া বিআরটিএর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সানাউল হক বলেন, “ফিটনেস নিয়ে যতগুলো আইটেম আমাদের দেখার কথা, এতগুলো আইটেম সত্যিকার অর্থে আমরা তো দেখতে পারিনা। দেখার সময়ও হয় না, সুযোগও হয় না।”
রাজধানীর সড়কে প্রতিদিন চলছে শত শত বাস। যার বেশিরভাগেই বসানো হয়েছে অতিরিক্ত আসন। ৩০ আসনের গাড়িতে আছে ৪২টি আসন। নিষিদ্ধ থাকার পরও চালকের পাশেই বাসানো হয়েছে অতিরিক্ত আসন। তারপরও দিব্যি চলছে বাসগুলো।
বাসের চালক, হেলপার এবং রাস্তায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরাও জানিয়েছেন অতিরিক্ত আসনের কথা। রাজধানীর সড়কে ঘুরে তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। ৩৮ কিংবা ৩৪ আসনের অধিকাংশ বাসেই ১০ থেকে ১২টি আসন বেশি পাওয়া গেছে। অবশ্য, চালক-হেলপারদের দাবি, ইঞ্জিনের ওপর আসন করা হলেও গরমের কারণে সেখানে সাধারণত কেউ বসতে চান না।
অতিরিক্ত আসন বসানোর কারণে কখনও কখনও বাসগুলোকে জরিমানাও করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু তারপরও রাজপথে চলাচল করা অধিকাংশ বাসের চিত্র প্রায় একই রকম, যার খেসারত দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ন্যূনতম যাত্রীসেবা পাওয়া দূরের কথা, বিড়ম্বনা সঙ্গী করেই প্রতিদিন গণপরিবহনে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীদের।
ক্ষুব্ধ-বিরক্ত যাত্রীরা বলছেন, বাসের আসনগুলোর মাঝে এতকম জায়গা থাকে যে, ঠিকমত বসাই যায় না। অনেক সময় বাস আচমকা ব্রেক করলে পায়ে আঘাতও পান অনেকে। আসনগুলো কখনো পরিষ্কারও করা হয় না বলে অভিযোগ অনেকের।
বেশি আসনের বিষয়ে জানতে একটি বাসের চালক দায় চাপালেন বাস মালিকের ওপর।
“(আসন) ৩৫টা থাকলেও আমি চালামু, ১৫টা থাকলেও চালামু, সমস্যা হইল মালিকের,” বলেন এই চালক।
নগর পরিবহনের এ নৈরাজ্য নতুন নয় জানিয়ে পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. সামসুল হক বলেন, এজন্য সবচেয়ে বড় দায় বিআরটিএর।
তিনি বলেন, “বিআরটিএ দায় এড়াতেই পারে না। সবচেয়ে বড় দায় বিআরটিএর। ফিটনেসের সময়ও তাকে দেখতে হবে, ফিটনেসের পরও যদি গাড়ি মডিফিকেশন করে, সেটাও ধরার দায়িত্ব তার। পাশাপাশি পুলিশেরও এই দায় থেকে মুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
বিআরটিএ কার্যালয়গুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে কঠোর মনিটরিং করা হলে অনিয়ম কমবে বলে মত এ বিশেষজ্ঞের।
এএইচএস