নিজেদের মল দিয়ে গ্যাস উৎপাদন, মরুভূমিতে চুটিয়ে সংসার!
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:৫০ পিএম, ২৭ অক্টোবর ২০২২ বৃহস্পতিবার
শহুরে জীবন ভালো লাগে না। তাই শহর থেকে বহুদূরে কোথাও ঘর বাঁধার ইচ্ছা জাগে হুইটনি নিউকার্ক এবং তার স্বামী ট্রেন্ডের। কিন্তু তাই বলে মরুভূমিতে? প্রথমে নিজেরাই একটু সংশয়ে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত সেই অসাধ্য সাধন করে দেখালেন দু’জনে। যুক্তরাষ্ট্রের মরুভূমির মাঝেই এখন চুটিয়ে সংসার করছেন তারা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনে থাকতেন ৩৪ বছরের হুইটনি আর ২৬ বছরের ট্রেন্ড। দু’বছর আগে শহর ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
এ-ও ঠিক করেন যে, শহর থেকে যতটা সম্ভব কম জিনিসপত্র কিনে নিবেন। তা সে যতই প্রয়োজনীয় হোক। নিজেরাই নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করবেন।
২০২০ সালে উইসকনসিন থেকে ৩ হাজার ২১৮ কিলোমিটার দূরের মরুভূমিতে বাস করার সিদ্ধান্ত নেন হুইটনিরা। ক্যালিফোর্নিয়ার জোশুয়া জাতীয় উদ্যানে নিজেদের ঠিকানা গড়ার উদ্যোগ নেন তারা।
মরুভূমির মাঝে ২.৩ একর জমিও কিনে নেন। ২০২০ সালে যার দাম পড়েছিল মাত্র সাত হাজার পাউন্ড। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা।
জমি কেনার পর তাতে বাড়ি করে বাসযোগ্য করে তুলতে আরও ২০ হাজার পাউন্ড খরচ করতে হয় হুইটনিদের। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা প্রায় ২০ লাখ টাকা।
মরুভূমির মাঝে বিরাট এক তাঁবু বেঁধেছেন হুইটনিরা। মধ্য এশিয়ায় যাযাবররা যেমন করে তাঁবু বাঁধেন, সেই রীতিতে বাঁশ, কাঠ দিয়ে তৈরি করেছেন আস্তানা। তীব্র গরম থেকে বাঁচতে কাঠামোর উপর রয়েছে মোটা কাপড়ের আচ্ছাদন। একে বলে ইয়ার্ট।
হুইটনি জানিয়েছেন, তিনি মানুষজন ভালোবাসেন। কিন্তু ভিড় পছন্দ করেন না। তাই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে তা কার্যকর করার বিষয়টা সহজ ছিল না। কারণ দিনের বেলা ওই এলাকার তাপমাত্রা থাকে ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে।
২০২০ সাল থেকে নিজেদের আস্তানা তৈরির কাজ করছেন হুইটনি-ট্রেন্ডরা। অবশেষে তা শেষের পথে। হুইটনির কথায়, ‘মনে হচ্ছে, আমরা এভারেস্ট জয় করেছি। এত আনন্দ জীবনে আগে পাইনি।’
মরুভূমির মাঝে হুইটনিদের ঘরেও জ্বলে দারুণ আলো। গরম থেকে বাঁচতে চলে এসিও। কিন্তু কোথা থেকে আসে এই বিদ্যুৎ? মার্কিন এই দম্পতি জানিয়েছেন, সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করেন তারা। ওই একটা জিনিসেরই অভাব নেই মরুভূমিতে।
মার্কিন ওই দম্পতি রান্নাও করেন গ্যাস দিয়ে। সেই গ্যাস কিন্তু শহর থেকে আনেন না। নিজেরাই জৈব গ্যাস উৎপাদন করেন। শাকসবজির খোসা, ফেলে দেয়া খাবার, এমনকি নিজেদের মল প্রক্রিয়াকরণ করে জৈব গ্যাস তৈরি করেন তারা। তা দিয়েই স্টোভ এবং এয়ার ফ্রায়ারে রান্না করেন।
হুইটনি জানিয়েছে, এখনও নিজেদের ‘ঘাঁটি’ তৈরির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। আরও অনেক কাজ বাকি। আরও অনেক পরিষেবার ব্যবস্থা করতে চান তারা। তবে, মরুভূমিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় পানি নিয়ে।
হুইটনি জানিয়েছে, এখনও যেটুকু জল সঞ্চয় রয়েছে, তা দিয়ে দু’জন রোজই একবার গোসল করেন। বাসনও ধুয়ে থাকেন। তারা চেষ্টা করছেন, ধীরে ধীরে এই পানির সঞ্চয় বাড়ানোর জন্য।
তবে এখনও গরম পানির ব্যবস্থা করতে পারেননি হুইটনিরা। আগামী দিনে সেই ব্যবস্থাও করে ফেলবেন বলে আশা তাদের।
আরও একটি লক্ষ্য রয়েছে হুইটনিদের। ঠিক করেছেন, শাকসবজিও আর শহরের বাজার থেকে কিনে আনবেন না তারা। নিজেদের জমিতেই তৈরি করবেন গ্রিনহাউস। সেখানেই চাষ করবেন শাকসবজি।
এনএস//