এমএফজেএফ এর ছোঁয়ায় সীতাকুণ্ডে পরিবর্তনের হাওয়া
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:২৩ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০২২ রবিবার | আপডেট: ০৫:৩২ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০২২ রবিবার
মন্ত্রী-এমপি কিংবা জনপ্রতিনিধি না হয়েও এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নে যে বিভিন্নভাবে অবদান রাখা যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন রবি আজিয়াটা লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমদ আরমান সিদ্দিকী। প্রয়াত মা-বাবার নামে নিজগ্রামে স্থাপন করেছেন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মহসিন ফাতেমা সিদ্দিকী যুবকল্যাণ ফাউন্ডেশন–এমএফজেএফ।
নবপ্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনের ছোঁয়ায় বেকার যুবক-যুবতীরা পাচ্ছেন পথের দিশা, জনবান্ধব নানা উদ্যোগের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের মনে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে এ সমাজসেবী সংগঠন। কীভাবে একটি এলাকাকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়, বজায় রাখতে হয় পরিবেশের ভারসাম্য, হতাশাগ্রস্ত মানুষের অন্ধকারাচ্ছন্ন চলার পথে আলোর মশাল জ্বালাতে হয়, আপদে-বিপদে কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়-তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় এমএফজেএফ। প্রাথমিক থেকে কলেজের শিক্ষার্থীরা এ সংস্থার সংস্পর্শে আসায় সীতাকুণ্ড জনপদে লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া।
২০২২ সালের ১১ জুলাই এমএফজেএফ এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। প্রতিষ্ঠার তিনমাসের মধ্যে সংগঠনটি স্পোকেন ইংলিশ কোর্স, ক্লিন সীতাকুণ্ড, নলেজ শেয়ারিং সেশন, রোড টু লাইটসহ বিভিন্ন ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে সীতাকুণ্ড এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। বিশেষকরে ২৭ আগস্ট ২০২২ এলবিয়ন গ্রুপের অর্থায়নে ক্লিন সীতাকুণ্ড কর্মসূচির আওতায় এলাকার গুলিয়াখালী সী-বিচ (পর্যটনকেন্দ্রে) বিশাল আয়োজনের মাধ্যমে ১১টি সামাজিক সংগঠন ও বিপুলসংখ্যক স্কুলশিক্ষক-শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও ৪৫০টি বৃক্ষরোপণসহ আরও নানা কর্মসূচি পালন করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে এমএফজেএফ নামক এ নতুন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
এ সংগঠনের সবচে’ সময়োপযোগী উদ্যোগ হচ্ছে রবি বিডি অ্যাপস এর মাধ্যমে বেকার তরুণ-তরুণীদের অ্যাপস্ তৈরির প্রশিক্ষণ প্রদান। গত ২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তরুণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে উপার্জনের বিষয়টি মাথায় রেখে এমএফজেএফ এর উদ্যোগে Knowledge Sharing Seession এর ব্যানারে একটি যুগোপযোগী কর্মশালা সীতাকুণ্ড জেলা পরিষদ মিলনায়তনে (এল কে সিদ্দিকী স্কয়ার) সংগঠনের সভাপতি বদরুর রহমান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় ৬০০ ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করেন। এ কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার পাশাপাশি যেন আয়-রোজগার শুরু করতে পারে এবং পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারে। এ প্রশিক্ষণশালার পৃষ্ঠপোষকতা করে বিএসএ গ্রুপ।
এমএফজেএফ এর তিনমাস পূর্তিতে নানা সেবামূলক ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নিয়ে তিনদিনব্যাপী (৭, ৮ ও ৯ অক্টোবর) ত্রৈ-মাসিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রকাশিত হয় সংগঠনের প্রথম চাররঙা মুখপত্র ‘আলোকবর্তিকা’। নবপ্রতিষ্ঠিত এ সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক সংগঠনের পরিচিতি বিশেষ করে এর আদর্শ-উদ্দেশ্য তুলে ধরে সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবে সংবাদ-সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রথমদিন (৭ অক্টোবর) উন্নয়ন সংগঠন ইপসা’র মানবসম্পদ কার্যালয়ে Knowledge Sharing Platform এর ব্যানারে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এতে দেশসেরা সিভি লেখক ও প্রশিক্ষক নিয়াজ আহমেদ সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টায় বেকার তরুণদের সিভি তৈরি করা শেখান-যা নিয়োগকর্তাদের কাছে আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য হবে। দ্বিতীয় সেশনে জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা দেশের প্রসিদ্ধ ক্যারিয়ার কোচ সাজ্জাদ হোসেন ইন্টারভিউ শিষ্টাচার ও টিপস্ নিয়ে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। একইদিন দুপুরে তৃতীয় পর্যায়ের Knowledge Sharing সেশনে ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণশালায় অংশগ্রহণকারী ৬০০ জন ছেলেমেয়ের মধ্য থেকে ১২০ জনকে ডেভেলপার আয়সংক্রান্ত নির্দেশিকা ও অ্যাপস্ তৈরির কাজ শেখানো হয়। রবি’র বিডি অ্যাপস্ টিম হাতে-কলমে এ প্রশিক্ষণ দেয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে সীতাকুণ্ডের যুবসমাজকে কর্মক্ষম ও দক্ষ জনগোষ্ঠীতে রূপান্তরের এ মহতি উদ্যোগ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
দ্বিতীয়দিন (৮ অক্টোবর) এমএফজেএফ এর প্রথম ত্রৈমাসিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ভাটিয়ারি মিলিটারি একাডেমি সংলগ্ন ক্যাফে হিলভিউতে। পাহাড়ি প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় অত্যন্ত সফলভাবে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে সংগঠনের তিনমাসের সম্পাদিত সমাজসেবামূলক কাজের মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এমএফজেএফ উপদেষ্টা আহমদ আরমান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগের ট্যুরিস্ট পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি মুহাম্মদ মুসলিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সীতাকুণ্ড সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ লে. দিদারুল আলম, কুমিরা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন, চাটগাঁর বাণীর প্রধান-সম্পাদক রোটারিয়ান সাংবাদিক মোহাম্মদ ইউসুফ, মুরাদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল করিম, সৈয়দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এইচ এম তাজুল ইসলাম নিজামী, সীতাকুণ্ড হেলথ্ অ্যান্ড এডুকেশন ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক লায়ন গিয়াস উদ্দিন, সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম এর সহ-সভাপতি লায়ন ইউসুফ শাহ, এমএফজেএফ এর উপদেষ্টা মো. মোবারক আলী, এস এম তোফায়েল উদ্দিন, সভাপতি বদরুর রহমান সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক কাউছার আহমেদ সরোয়ারী, দপ্তর সম্পাদক আলফাই আল হোসাইন সজিব, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক জোবায়ের ইসলাম, মো. তাইসির উদ্দিন, বুরহান উদ্দিন আবিদ।
সম্মেলনের শেষদিন (৯ অক্টোবর) ছিল এমএফজেএফ এর আরেকটি অনন্য উদ্যোগ। প্রথমবারের মতো সীতাকুণ্ড মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে আয়োজিত হেলথ্ ক্যাম্পে জাতির সূর্যসন্তান দেড়শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসাসেবা (ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগের) দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। চিকিৎসা শেষে তাদের বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান করা হয়।
এমএফজেএফ এর গোড়াপত্তনের ইতিবৃত্ত ও এর সেবামূলক কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরে উপদেষ্টা আহমদ আরমান সিদ্দিকী বলেন, “চাকরির সুবাদে রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করলেও ছুটির দিনে আমাকে নিয়মিত সীতাকুণ্ডের দক্ষিণ রহমতনগরের গ্রামের বাড়িতে মাটির টানে ছুটে আসতে হয়। ক্ষুদ্রপরিসরে আগে থেকেই এখানে কিছু সমাজকর্ম করে আসছি। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে আমি দেশের বিভিন্ন টেলিকমিউনিকেশন ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার কোম্পানিতে কাজ করে আসছি। দেশের প্রথম MFS service, towerco এর সেবা চালু করার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে, বিশেষ করে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও কাজ করছি। বলা যায়, জাতীয়ভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক কাজ করেছি।
“আল্লাহর রহমতে এ স্বল্প পরিসরে শিক্ষা, সম্পর্ক ও উন্নয়নমূলক কাজে নানাভাবে অবদান রাখার চেষ্টা করছি। নিজ এলাকা সীতাকুণ্ডের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণের পাশাপাশি শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর স্বার্থে কাজ করার উদগ্র বাসনা রয়েছে আমার। দক্ষিণ রহমতনগর এলাকার কিছু স্বপ্নবাজ ছেলে এলাকায় জনস্বার্থে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে আমার সুপ্ত বাসনাকে উস্কে দেয়। নেমে পড়ি সেবামূলক কর্মযজ্ঞে। বাস্তবতা হচ্ছে, বৃহত্তর পরিসরে সমাজউন্নয়ন কাজ করতে হলে প্রয়োজন-একটি সংগঠন। তাই, মহসিন-ফাতেমা সিদ্দিকী যুবকল্যাণ ফাউন্ডেশন এমএফজেএফ নামের এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। আমাদের গৃহীত সব উদ্যোগে এলাকাবাসীর ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় আমি বেশ আবেগ-আপ্লুত ও আনন্দিত। আমাদের সব উদ্যোগ ছিল অনন্য ও বিরল, যা সাধারণ মানুষের হৃদয় স্পর্শের পাশাপাশি সমাজে একটি ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে। এ সংগঠনের উদ্যোগে আগামীতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, পরিবেশ ও সমাজউন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন করা হচ্ছে, যা বাস্তবায়ন হলে সীতাকুণ্ড তথা চট্টগ্রাম অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ উপকৃত হবে।”
লেখক: প্রধান সম্পাদক, সাপ্তাহিক চাটগাঁর বাণী ও চাটগাঁরবাণীডটকম।