ইউক্রেনের কয়েকটি শহরে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:৩০ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০২২ সোমবার | আপডেট: ০৪:৩১ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০২২ সোমবার
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, সোমবার সকালে দেশটির ওপর রাশিয়া থেকে অন্তত ৫০টি ক্রুজ মিসাইল ছোঁড়া হয়েছে। এর ফলে রাজধানী কিয়েভসহ দেশটির বেশ কয়েকটি শহরে বিদ্যুৎ এবং পানির সংকট তৈরি হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, সোমবার সকাল সাতটা থেকে রুশ বাহিনী থেমে থেমে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে শুরু করে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে লিখেছে যে, মূলত ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে ৫০টির বেশি ক্রুজ মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, শীতের আগে ইউক্রেনীয় নাগরিকদের মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্যই হয়ত এই হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকোকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কিয়েভে বসবাসরত অন্তত সাড়ে তিন লাখ মানুষ এখন সম্পূর্ণ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছেন।
শনিবার বন্দর নগরী সেভাস্টোপোলে ড্রোন হামলা চালিয়ে রাশিয়ার একটি যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করেছে ইউক্রেন, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন অভিযোগের জবাব হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশটির জরুরি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ দ্রুত পুনঃস্থাপন করার 'সর্বোচ্চ' চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কিয়েভের মেয়র।
এজন্য জরুরি ভিত্তিতে দেশটির প্রকৌশলীদের মোতায়েন করা হয়েছে।
হামলার আগে দেশব্যাপী বিমান হামলার পূর্ববর্তী সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইউক্রেনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশটির ক্রেমেনচাকে একটি বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে হামলা চালানো হয়েছে।
তবে প্রকল্পটি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে সম্পর্কে পরিষ্কার করে তিনি কিছু বলেননি।
ইউক্রেনের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে কিয়েভ, দক্ষিণাঞ্চলীয় ওডেসা, জাপোরিশা এবং চেরকাসি অঞ্চলের একাধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পেও আজ হামলা হয়েছে।
তবে বিবিসি নিরপেক্ষভাবে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি।
তাৎক্ষণিকভাবে কত মানুষ হতাহত হয়েছেন কর্তৃপক্ষ সে সম্পর্কে কোন তথ্য প্রকাশ করেনি।
অক্টোবরের শুরুতে ক্রাইমিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রেল ও সড়ক সংযোগ সেতুতে ইউক্রেন হামলা চালায় বলে অভিযোগ করে রাশিয়া
তবে বিদ্যুৎ এবং পানির সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং কোন কোন এলাকায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ডাউন রয়েছে।
রুশ বাহিনীকে 'সন্ত্রাসী' আখ্যা দিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কিরিলো টিমোশেঙ্কো টেলিগ্রামে লিখেছেন, "তাদের ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে কয়েকটিকে বিমান বিধ্বংসী প্রতিরক্ষার মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে আঘাত হেনেছে অনেক ক্ষেপণাস্ত্র।"
ফেব্রুয়ারিতে রাশি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ চাহিদার পাঁচ শতাংশ মেটানো হত।
এ মাসের শুরুতে রুশ-অধিকৃত ক্রাইমিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি রেল ও সড়ক সংযোগ সেতুতে ইউক্রেন হামলা চালায় বলে অভিযোগ করে রাশিয়া। তারপর থেকেই রাশিয়া ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনাসমূহে হামলা জোরদার করে।
ইউক্রেনে মার্কিন সাহায্য কমে গেলে কী ঘটতে পারে?
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা টুইটারে এক পোষ্ট দিয়ে বলেছেন, "যুদ্ধের ময়দানে লড়াইয়ের বদলে রাশিয়া সাধারণ ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে। রাশিয়া এটি করছে কারণ দেশটির এখনো ক্ষেপণাস্ত্র আছে, এবং ইউক্রেনের মানুষকে হত্যার অভিপ্রায় আছে।"
তবে রাশিয়া সবসময় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে, কিন্তু ইউক্রেনের বহু ভবন রুশ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, কিয়েভসহ যেসব শহরে হামলা হয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে, এবং আরো হামলা হতে পারে এমন সতর্কতা দেয়া হয়েছে।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইনাট দেশটির টেলিভিশনে বলেছেন, এই হামলা চালানোর জন্য রাশিয়া কৌশলগত বোমারু বিমান ব্যবহার করেছে।
তবে রাশিয়া এখন পর্যন্ত এ হামলা নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি।
দুইদিন আগে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অভিযোগ করে, সেভাস্টোপোলে ড্রোন হামলা চালিয়ে একটি রুশ যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করেছে ইউক্রেন। রাশিয়া আরো অভিযোগ করে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী যারা ক্রাইমিয়াতে হামলা চালিয়েছে ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞরা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
তবে এসব অভিযোগের স্বপক্ষে রাশিয়া কোন প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা ওই অভিযোগের বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি। তবে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘রাশিয়া মিথ্যা দাবিকে মহাকাব্যিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে।’ সূত্র: বিবিসি
এসি