ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

সেই নিঃসঙ্গ প্রতিবাদ অনুপ্রাণিত করছে চীনা তরুণদের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫৪ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০২২ সোমবার

বেইজিংয়ের একটি হাইওয়ে ব্রিজের গায়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ‘স্বৈরাচারী বিশ্বাসঘাতক’ উল্লেখ করে একটি ব্যানার টাঙিয়ে ছিলেন এক বিক্ষোভকারী। গত ১৩ অক্টোবরের ওই ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং তরুণ চীনাদের শি বিরোধী প্রতিবাদে উৎসাহ যোগায়।

নিউ ইয়র্ক টাইম জানিয়েছে, ইন্টারনেটে ভিন্নমত দমনে চীনে ব্যাপক সেন্সরশিপ রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা নিষিদ্ধ এবং আপত্তিকর অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করা হয়েছে। ব্যাপক সেন্সরশিপের মধ্যে সৃজনশীল ওই প্রতিবাদের স্লোগান বেইজিংয়ে না ছড়ালেও তা চীনের ভেতরে-বাইরে অনলাইন ও অফলাইনে সাড়া জাগায়।

বেইজিংয়ে এমন প্রতিবাদ সত্যিকার অর্থেই দুর্লভ সাহসের ব্যাপার। চীনা তরুণরা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে হাইওয়ে ব্রিজের সেই ব্যানারের স্লোগান ছড়িয়ে দিতে ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেয়। তারা সাবওয়ের গাড়িতে যাত্রীদের আইফোনে সেই ছবি পাঠাতে অ্যাপলের এয়ারড্রপ ফিচার ব্যবহার করে।

বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শি বিরোধী স্লোগান সাঁটিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। তারা চ্যাট গ্রুপগুলোকে সংগঠিত করে চীনা দূতাবাসের সামনে ‘শি জিনপিংকে সরান’ বলে স্লোগান দেয়।

বেইজিংয়ে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সর্বশেষ কংগ্রেসের আগ মুহূর্তে এসব ঘটনা ঘটেছে, যে কংগ্রেসের মাধ্যমে তৃতীয় মেয়াদে আরও পাঁচ বছরের জন্য দলটির নেতৃত্বের চূড়ান্ত করেন শি জিনপিং।

সিটিজেনস ডেইলি সিএন নামে পরিচিত একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের একজন সংগঠক বলেন, “বেইজিংয়ে ওই প্রতিবাদ আমাকে প্রথমবারের মতো আশাবাদী করে তুলেছে। নিপীড়নের নীরবতার এই যুগে, নীরবেও ক্ষোভ আছে, হতাশার মধ্যে আশা আছে।”

তার মতো তরুণরা শির বিরুদ্ধে অপ্রত্যাশিত বিদ্রোহী হিসাবে সামনে আসছেন। চীনে সবসময় রাজনৈতিক মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ একটি নীরব রাজনৈতিক জাগরণ অনুভব করছেন। তারা সরকারের ব্যাপক সেন্সরশিপ, কঠোর ‘শূন্য কোভিড’ নীতি নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছেন।

২০ বছর বয়সী ক্যাথি গত রোববার প্রথমবারের মতো শি জিনপিং বিরোধী একটি প্রতিবাদে অংশ নেন। নিরাপত্তার কারণে তিনি মাস্ক ও সানগ্লাস পরেছিলেন। তার সেই প্রতিবাদের খবর যখন লন্ডনে চীনা দূতাবাসে পৌঁছায় ততক্ষণে সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসে।

বেইজিংয়ের সেই ব্রিজের ব্যানার টাঙানো সেই ব্যক্তির জনপ্রিয় স্লোগান দিতে শুরু করেন, ‘শ্রমিক ও শিক্ষার্থীরা এসো বিক্ষোভ করি, স্বৈরাচারী বিশ্বাসঘাতক শি জিনপিংকে হটাও’।

ক্যাথি বলেন, “আমি ভেবেছিলাম, অনেক চীনা আছে যারা স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র চায়। কিন্তু আসলে আপনি কোথায়? আপনাকে কোথায় পাব? আমরা যদি রাস্তায় দেখা করি, তাহলে একে অপরকে কীভাবে চিনব?”

ক্যাথি অন্যান্য চীনা ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করতে বিচলিত ছিলেন। এদের বেশিরভাগকে তিনি ‘লিটল পিঙ্ক’ বা বেইজিংপন্থী যুবক উল্লেখ করেন। ক্যামেরা এড়াতে ক্যাথি একটি মাস্ক পরেছিলেন।

লন্ডনে তার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চারপাশে পোস্টার লাগাতে তিনি আরও বেশি নার্ভাস ছিলেন। তিনি যখনই পূর্ব এশিয়ান শিক্ষার্থীদের দেখতেন তিনি করিডোর বা টয়লেটে লুকানোর জন্য ছুটে যেতেন। তার ভয় ছিল ওই শিক্ষার্থীরা তার ব্যাপারে চীনা দূতাবাসে রিপোর্ট দেবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ছবি পোস্ট করবে। তার বাবা-মা এখনও চীনে থাকে, ফলে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবতে হয়েছে। পুরো ক্যাম্পাসে পোস্টার সাঁটানোর পর তিনি স্বস্তিবোধ করছিলেন।

টেলিগ্রামে ম্যাসেজিং অ্যাপে ‘মাই ডিউটি ডেমেক্রেসি ওয়াল ইন লন্ডন’ চ্যাটগ্রুপ চালুর এক সপ্তাহ পর সেখানে ২০০ চীনা শিক্ষার্থী যুক্ত হন। চারদিন পর সেখানে চারশোরও বেশি শিক্ষার্থী যুক্ত হন। তাদের বেশিরভাগই যুক্তরাজ্যে ছাত্র ও কর্মজীবী। 

অনেকে তখন বলেন, তারা সমমনা মানুষদের খুঁজে বের করতে একত্রিত হয়েছে; কারণ, ক্যাথির মতো তারা জানে না কাকে বিশ্বাস করতে হবে। তারা একাকী ও দুর্বল বোধ করছিল।

এসি