ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন মেঘনা পাড়ের মানুষ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১২:৩৮ পিএম, ২ নভেম্বর ২০২২ বুধবার | আপডেট: ১২:৩৯ পিএম, ২ নভেম্বর ২০২২ বুধবার

লক্ষ্মীপুরে বাস্তচ্যুতদের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান জানে না কেউ। স্থানীয় তথ্য মতে, গত তিন দশক ধরে মেঘনার ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ। এসব মানুষ সরকারি সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত হয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সহায় সম্বলহীন এসব মানুষের পুনর্বাসনসহ তাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

জানা যায়, ৯০’র দশকের আগ থেকে শুরু হয় মেঘনা নদী এলাকার রামগতি-কমলনগর, সদর ও রায়পুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন। বর্তমানেও ভাঙনের ভয়াবহতা চলছে। অব্যাহত নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ।

প্রতিনিয়ত ঘর-বাড়ি হারিয়ে নি:স্ব হচ্ছেন কেউ না কেউ। বার বার আশ্রয়স্থল পরিবর্তন করেও রক্ষা হয়নি অনেক মানুষের। এদের অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন রামগতি সড়কের দু’পাশে।

কেউ আশ্রয় নিয়েছেন মজু চৌধুরীর হাট, মতিরহাটসহ বেড়ী বাঁধে। সব হারিয়ে এখন কোনমতে ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস করছেন হাজার হাজার মানুষ। অনেকে অন্য জেলায় স্থানান্তরিত হয়েছেন। 
স্থানীয় তথ্য মতে, গত তিন দশকে কমলনগর ও রামগতি উপজেলার সাহেবের হাট, নাসিরগঞ্জ, লুধুয়া, মাতাব্বরহাট, কাদের পন্ডিতের হাট, রাঘনাথপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। সদর ও রায়পুরেও ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটে-মাটি হারিয়েছেন অনেক পরিবার।

অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বহু স্থাপনা নদীর পেটে চলে গেছে। এসব এলাকার এক লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে স্থানীয় এলাকাবাসী জানান। আশ্রয় স্থানান্তর আর নদী ভাঙনের বড় একটা প্রভাব পড়েছে শিক্ষাখাতেও।

এমন প্রেক্ষাপটে ছিন্নমূল পরিবারের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপকালে জানান, কয়েক বছরে নদীর ভাঙ্গনের একাধিকবার শিকার হয়েছেন তারা। এসব মানুষের অভিযোগ তারা সরকারি-বেসরকারি কোন সহায়তা পান না। প্রত্যেকেরই ভোটার আইডি কার্ড রয়েছে তারা ভোট আসলে ভোট দেন। কিন্তু এরপর আর তাদের কোন খোঁজ খবর রাখেনা কেউ। 

দেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও তারা সকল সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন। বর্তমানে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানান। সরকারিভাবে পুনর্বাসনের দাবি তোলেন ঘরহারা মানুষ। একই দাবি জানান সচেতন মহলও।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার ও স্থানীয় নদী গবেষক সানাউল্লাহ সানু জানান, ৩ দশকে ১ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তচ্যুত হয়েছেন। এরা বিভিন্ন এলাকায় স্থানান্তরিত হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ এখনও জীর্ণশীর্ণ ঘরে বসবাস করছেন। তাদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহ্মেদ জানান, প্রতি বছর দেড়শ’ থেকে ২০০ মিটার এলাকা নদীতে বিলীন হচ্ছে। গত ৫ বছরে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছে। তবে সঠিক পরিসংখ্যান সম্পর্কে অবহিত নন বলে জানান এ কর্মকর্তা।

জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, নদী ভাঙনে গৃহহীন ৩ হাজার ২শ’ পরিবারকে ঘর ও জমি দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এখনও কেউ গৃহহীন থাকলে সরকারিভাবে ঘর করে দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

এএইচ