বিশ্বকাপ জয়ের শেষ মিশনে প্রস্তুত মেসি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৫২ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০২২ শুক্রবার
লিওনেল মেসি
ক্যারিয়ারে পঞ্চম ও শেষ বিশ্বকাপ খেলতে কাতার যেতে আর খুব একটা বেশী সময় হাতে নেই আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসির। আর এই বিশ্বকাপই সম্ভবত মেসির সামনে একমাত্র বিশ্ব আসরের শিরোপা হাতে নেবার শেষ সুযোগ! যা কাজে লাগাতে মুখিয়ে আছেন ফুটবলের এই ক্ষুদে জাদুকর।
কাতারে নিজের সেরাটা দিতে এখন শেষ অপেক্ষা। পিএসজির হয়ে মৌসুমের শুরু থেকেই মেসি যে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নিজেকে শতভাগ প্রস্তুত করে তুলেছেন- তা মাঠের পারফরমেন্সেই দৃশ্যমান। বার্সেলোনা ছাড়ার ট্রমা থেকে বেরিয়ে এসে পিএসজির জার্সি গায়ে প্রথম মৌসুমটা বেশ কঠিনই কেটেছিল। কিন্তু ক্যারিয়ারে আবারো ঘুরে দাঁড়িয়ে প্যারিসে নিজেকে ঠিকই মানিয়ে নিয়েছেন। ইতোমধ্যেই চলতি মৌসুমে ১৮ ম্যাচে ২৬টি গোল ও এ্যাসিস্ট করে ফেলেছেন।
আর্জেন্টিনাও এখন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারের দিকেই তাকিয়ে আছে। সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসির হাতে যে এখনো বিশ্বমঞ্চের শিরোপাটাই ওঠেনি।
২০০৬ সালে টিনএজার হিসেবে প্রথম বিশ্বকাপে খেলতে আসা, এরপর একে একে খেলেছেন আরো চারটি বিশ্ব আসর। জাতীয় দলের হয়ে রেকর্ড ১৬৪ ম্যাচে করেছেন রেকর্ড ৯০ গোল। ২০১৪ ও ২০১৮ বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়ক। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে ফাইনালে খেললেও ২০১৮ সালে জর্জ সাম্পাওলির অধীনে ফ্রান্সের কাছে শেষ ১৬’তে বিদায় নিতে হয়েছিল। ফ্রান্সের শিরোপা জয়ী ওই দলটিতে ছিলেন মেসির বর্তমান পিএসজি সতীর্থ কিলিয়ান এমবাপ্পে।
এদিকে, ৩৫ বছর বয়সী লিও এবার কাতারে আরো এটি লক্ষ্যপূরণের দ্বারপ্রান্তে। নক আউট পর্বে এখনো গোল করা হয়নি মেসির, যা এবার ঘোঁচাতে চান পিএসজি তারকা।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মেসি বলেন, ‘এই মুহূতে শারীরিকভাবে আমি ভালো অনুভব করছি। গত বছর আমি যখন পিএসজিতে এসেছিলাম, তার তুলনায় বেশ ভালো। কিন্তু বয়সের কারণে এটাই আমার শেষ বিশ্বকাপ, এটা নিশ্চিত।’
কাতার বিশ্বকাপের পরেই কি অবসর নিবেন মেসি? এমন প্রশ্নের জবাবে মেসি বলেন, ‘বিশ্বকাপ শেষ হলে দেখা যাক, কি অবস্থা হয়। আর্জেন্টিনার জন্য শান্ত থাকাটা কঠিন, কারণ আমরা সবাই বিশ্বকাপ জয় করতে মুখিয়ে আছি। কিন্তু বিশ্বকাপ জিততে হলে অনেক দিক থেকে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতে হয়। কোনও একটা নির্দিষ্ট ম্যাচে নয়, সার্বিকভাবে এগিয়ে যেতে হয়। আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত, যে কোনও দলের বিপক্ষে নিজেদের সেরাটা দিতে চাই।’
১৯৮৬ সালে সর্বশেষ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক ছিলেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। আর্জেন্টাইন এই লিজেন্ডকে অনুকরণ করতে হলে মেসির একার পক্ষে তা সম্ভব নয়। লিওনেল স্কালোনির দলে অবশ্য মেসির থেকে ভালো মানের কোনও খেলোয়াড় নেই। কিন্তু চার বছর আগের দলটির তুলনায় এবারের দলটি নিয়ে অনেকেই আশাবাদী।
টানা ৩৫ ম্যাচে অপরাজিত থেকে কাতারে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। এর মধ্যে রয়েছে গত বছরের কোপা আমেরিকা শিরোপা জয়ও। যা ১৯৯৩ সালের পর আর্জেন্টিনার বড় কোনও শিরোপা জয়।
২০১৮ বিশ্বকাপের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় এবারো দলে টিকে রয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম কোপা আমেরিকার ফাইনালে জয়সূচক গোল করা এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। স্কালোনির দলে আরো আছেন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, মিডফিল্ডার লিনড্রো পারেদেস ও রডরিগো ডি পল ও ফরোয়ার্ড লাউতারো মার্টিনেজ। ইন্টার মিলানের ২৫ বছর বয়সী স্ট্রাইকার মার্টিনেজ বাছাইপর্বে সাত গোল করেছিলেন।
এবারের দলটিতে মেসির ভূমিকা কিছুটা হলেও ভিন্ন ধরণের হবে বলে মনে করেন ১৯৭৮ সালে ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ওমর লারোসা। তার মতে, এবারের বিশ্বকাপে একটি ভিন্ন আমেজে খেলতে যাবেন মেসি। আগের সব আসরে যেখানে সতীর্থরা মেসিকে বল বানিয়ে দিয়েছে, এবার সেই কাজটাই মেসি পালন করবেন বলে মনে করেন লারোসা। পিএসজির হয়ে সাম্প্রতিক বেশ কিছু ম্যাচে কার্যত এই দায়িত্বটাই পালন করেছেন মেসি।
এদিকে, দোহায় ফাইনাল পর্যন্ত যদি আর্জেন্টিনা খেলতে পারে, তবে মেসির সামনে সুযোগ আসবে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়ার। বর্তমানে ২৫ ম্যাচ খেলা জার্মান সাবেক অধিনায়ক লোথার ম্যাথিউস এই রেকর্ড ধরে রেখেছেন।
কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে শিরোপা জয়ই এখন মেসির মূল লক্ষ্য। সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে তাকে নিয়ে কোনও দ্বিধা না থাকলেও, বিশ্বকাপের শিরোপা জয় না করাটা কিছুটা হলেও তার ক্যারিয়ারে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে থেকে যাবে।
এনএস//