টুইটারে কর্মী ছাঁটাইয়ের হিড়িক, সাময়িকভাবে বন্ধ অফিস
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:৩৬ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০২২ শুক্রবার
ইলন মাস্ক টুইটারের দায়িত্ব নেয়ার পর সেখানে কর্মরত কাউকে ছাঁটাই করা হবে কিনা, সে ব্যাপারে শুক্রবার সব কর্মীদের অবহিত করা হবে বলে টুইটার জানিয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাটি তাদের এক অভ্যন্তরীণ ইমেইলে বলেছে যে 'টুইটারের ভালোর জন্য' কর্মী ছাঁটাই করা হবে।
প্রতিষ্ঠানটি এর অফিসগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে। আর কর্মীরাও যতক্ষণ না জানতে পারছে যে চাকরি হারিয়েছে কি-না, ততক্ষণ অফিস ভবনে ঢুকতে পারবে না।
কীভাবে হচ্ছে ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া?
এই ধনকুবের গত সপ্তাহে চুয়াল্লিশ বিলিয়ন ডলার চুক্তিতে কোম্পানিটি কিনে নেওয়ার পর টুইটারের প্রধান নির্বাহী হতে যাচ্ছেন।
টুইটার ওই ইমেইলে বলেছে, "সামনের শুক্রবার আমরা বিশ্বব্যাপী আমাদের কর্মী সংখ্যা কমিয়ে আনার কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাব।"
"আমরা বুঝতে পারছি যে টুইটারের পেছনে যারা মূল্যবান অবদান রেখেছেন, তাদের অনেকের ওপর এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কিন্তু কোম্পানিটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে এমন দুর্ভাগ্যজনক পদক্ষেপটি নেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে," ইমেইলে আরো বলা হয়।
'প্রত্যেক কর্মীদের নিরাপত্তা ও টুইটার সিস্টেম এবং গ্রাহকদের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে' অফিস প্রবেশাধিকার তাৎক্ষণিকভাবে সীমিত করা হবে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে।
অফিসের সকল কর্মী 'টুইটারে আপনার দায়িত্ব (ইওর রোল অ্যাট টুইটার)' বিষয়ে শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টার [জিএমটি ৪টা] মধ্যে একটি ইমেইল পাবেন।
যাদের চাকরিতে এটির প্রভাব পড়বে না, তাদেরকে অফিসিয়াল ইমেইলের মাধ্যমে জানানো হবে, বলছে টুইটার। অন্যদিকে যাদের চাকরি চলে যাবে, তাদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে 'পরবর্তী পদক্ষেপ' সম্পর্কে জানানো হবে।
'মেধাবীদের ছাঁটাই'
এর আগে ধারণা করা হয়েছিল যে টুইটারের আট হাজার জনবলের প্রায় অর্ধেকই ছাঁটাই হওয়ার দ্বারপ্রান্তে।
সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমের এই প্লাটফর্মটি মুনাফা আয় করতে এখনো হিমশিম খাচ্ছে। তাই এক্ষেত্রে বেতন-ভাতা কমানো একটি সমাধান বলে এটি মনে করছে।
যুক্তরাজ্যে টুইটারের একজন সিনিয়র কম্যিুনিটি ম্যানেজার সিমন বালমেইনের কাজের ল্যাপটপ ও স্ল্যাক মেসেজিং প্রোগামটি থেকে তিনি ইতিমধ্যে লগ-আউট হয়ে গিয়েছেন। তাই তিনি মনে করেন তারও চাকরি চলে গিয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন।
তার অন্যান্য সহকর্মীদের ক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
"ছাঁটাইয়ের ফলে যে মেধা চলে যাবে, তা পুরো প্রযুক্তি শিল্পকে বদলে দিবে। আমরা সবাই সবার খবরাখবর রাখছি। আর আমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও সমর্থন অবিশ্বাস্যভাবে অনেকে বেড়েছে," তিনি বলেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ব্লুমবার্গ বলেছে যে কিছু সিনিয়র কর্মীদের বলা হয়েছে তাদের নিজ নিজ দলে থাকা কর্মীদের ছাঁটাইয়ের তালিকা তৈরি করতে।
মাস্ক দায়িত্ব নেয়ায় টুইটারে বিনিয়োগ করেছে ক্রিপ্টো-কারেন্সি প্ল্যাটফর্ম বিনান্স। এর আগে, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী, চ্যাংপেং ঝাও বলেন যে "একটি অল্প সংখ্যক জনবল কাজকে আরও অর্থবহ করে তুলবে।"
ঝাও লিসবনে ওয়েব সামিটে দেওয়া বক্তব্যে টুইটারের সমালোচনা করে বলেছেন যে এই প্রতিষ্ঠানটিতে যে হারে কর্মী রয়েছে, সেই তুলনায় নতুন ফিচার যুক্ত করতে পারেনি।
ভ্যারিফাই করতে খরচ হবে
টুইটারে এখন থেকে এই ভ্যারিফায়েড নীল টিক চিহ্নের জন্য ওইসব অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীদের প্রতি মাসে ৮ ডলার চার্জ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। খরচ কমানোর পাশাপাশি টুইটারের অর্থ সংগ্রহের এই প্রচেষ্টা সমালোচনার মুখে পড়েছে।
ভ্যারিফিকেশন ব্যাজ ছাড়াও, যারা অর্থ দিবে, তাদের টুইটগুলো আরও ব্যাপকভাবে প্রচার করা হবে এবং কম বিজ্ঞাপন দেখানো হবে বলে জানানো হয়।
মাস্ক তার পরিকল্পনার বিষয়ে টুইট করেছেন: "আমাদের যেকোনো উপায়ে বিল পরিশোধ করতে হবে।"
টুইটার বেশ কয়েক বছর ধরে কোন লাভ করতে পারেনি এবং এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা গত এক মাস ধরে প্রায় ৩০ কোটিতেই মোটামুটি স্থির রয়েছে।
অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মাস্ক বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা এবং প্রযুক্তি খাতে শেয়ার বাজারের দামের পতনের মধ্যেও কোম্পানিটির পেছনে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করেছেন।
কিন্তু টুইটারের বৈশ্বিক যোগাযোগ বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ব্র্যান্ডন বোরম্যান বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাতকারে প্রশ্ন করেছিলেন যে, টুইটার কীভাবে মানুষের থেকে অর্থ নেয়ার বিষয়টিকে ন্যায়সঙ্গত ভাবছে, যেখানে তারা সব ব্যবহারকারীকে সমান চোখে দেখতে চায়।
কর্মী ছাঁটাই কীভাবে টুইটারের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করবে তা স্পষ্ট নয়। মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাস্ক দায়িত্ব নেয়ার পরে ইতিমধ্যেই তার দাবি পূরণের জন্য কয়েকজন কর্মী দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলেছেন।
এই ব্যাপক ছাঁটাই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় কী প্রভাব ফেলবে - সেটি এখনো অস্পষ্ট। আর কর্মীদের ব্যাপারে 'কঠোর' হওয়ার বদনাম মাস্কের জন্য নতুন কিছু না।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মাস্কের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অনেক কর্মী তার সাথে দেখা করার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন।
মে মাসে ইলন মাস্ক বলেছিলেন যে তার কাজের নীতিগত প্রত্যাশা 'চূড়ান্ত' হবে, এতোটাই বেশি যা তিনি নিজের জন্যও দাবি করেন না।
একে একে বিদায় নিয়েছেন টুইটার বোর্ড সদস্যরা
দায়িত্ব গ্রহণের চুক্তির অংশ হিসেবে টুইটার বোর্ডের নয়জন সদস্য প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আর নিজের মতে চলা ইলন মাস্ককে একমাত্র পরিচালক হিসেবে রেখে গিয়েছেন।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে কোম্পানির উপর মাস্কের নিয়ন্ত্রণ আরো পোক্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
যারা চলে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে ছিলেন চেয়ারম্যান ব্রেট টেলর এবং প্রধান নির্বাহী পরাগ আগারওয়াল।
প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা নেড সেগালসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরাও টুইটার ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে পোস্ট করেছেন, বা এরইমধ্যে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
মার্কিন মিডিয়া বলছে, এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা চলে যাওয়ার সাথে সাথে মাস্কের অনেক সহযোগী টুইটারে যোগ দিয়েছেন। সূত্র:
এসি