ভেনিসে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব বাংলাদেশির
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:৩৭ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০২২ শনিবার | আপডেট: ০৭:৫৭ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০২২ শনিবার
মোঃ ডাবলু চৌধুরী।
ইউরোপের দেশ ইতালির ভেনিসে এক বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছেন একজন বাংলাদেশি। মিলানে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে ভেনিসের মেয়র অফিসে অনুমতি চেয়েছেন তিনি। যদিও এখনো তিনি অনুমতি পাননি। তবে তার পরিকল্পিত বিনিয়োগের অঙ্কটি বড় হওয়ায় ইতিমধ্যেই তাকে নিয়ে ইতালির গণমাধ্যমে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এমন তথ্য দিয়েছে বিবিসি বাংলা।
এই বিনিয়োগকারীর নাম মোঃ ডাবলু চৌধুরী। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করছেন। পড়াশোনা করেছেন সুইজারল্যান্ডে। বাংলাদেশের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যেরও নাগরিকত্ব রয়েছে তার।
ডাবলু চৌধুরী বলেছেন, তার কয়েকজন ব্যবসায়িক অংশীদারের সাথে মিলে এ বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে এপসিলন মোটরস ইনকর্পোরেশন নামে একটি বিদ্যুৎচালিত গাড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। এখন এই প্রতিষ্ঠানের জন্য ইলেকট্রিক বা বিদ্যুৎচালিত গাড়ি নির্মাণের কারখানা তৈরির জন্য তারা ভেনিসে বিনিয়োগ করার আবেদন করেছেন। ভেনিসের পোর্তো মারঘেরা নামক বন্দর নগরী, যেটি মূলত একটি শিল্পাঞ্চল, সেখানে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে এতে প্রায় এক হাজার কর্মীর চাকরির ব্যবস্থা হবে।
তিনি বলেন, এপসিলন মোটরস ইনকর্পোরেশনের উদ্যোক্তাদের বড় অংশ বাংলাদেশি, এবং তাদের বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যদের বড় অংশই এক সময় জার্মানি এবং চীনে জার্মান গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মার্সিডিজ বেঞ্জের কারখানায় কাজ করতেন। অনুমতি পেলে ২০২৩ ভেনিসে এ কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু হবে। যদিও কবে নাগাদ উৎপাদন শুরু করার পরিকল্পনা সে বিষয়ে এখুনি ধারণা দিতে পারেননি তিনি। তবে এই বিদ্যুৎচালিত গাড়ির কারখানার পাশাপাশি লিথিনিয়াম ব্যাটারি তৈরির কারখানা খোলার পরিকল্পনা রয়েছে মূল পরিকল্পনায়।
ডাবলু চৌধুরী বলেন, ব্যতিক্রমী এবং সাসটেইনেবল কিছু করার জন্য আমরা এপসিলন মোটরস করেছি। আমাদের পরিকল্পনা ছিল যে যদি এমন কিছু করা যায় ভবিষ্যতে যার ব্যাপক চাহিদা হবে এবং যেটি পরিবেশবান্ধব হবে তাহলে আমাদের কাজটি সাসটেইনেবল হবে। সে কারণে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
তিনি বলেন, পরিকল্পিত কারখানার জন্য বিনিয়োগ আসবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের একদল ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টের কাছ থেকে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বলতে সাধারণত বড় বিনিয়োগকারী, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত বিনিয়োগকে বোঝানো হয়, যারা সম্ভাবনাময় এবং ভবিষ্যতে লাভজনক হতে পারে এমন স্টার্টআপ বা ছোট কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে থাকে।
তার মতে, ২০৩৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবগুলো রাজ্যে, ইংল্যান্ডে এবং অন্যান্য বড় শহরগুলোতে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির প্রাধান্য থাকবে।
এ বিষয়ে মিলানে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল এমজেএইচ জাবেদ বলেন, কিছুদিন আগে ডাবলু চৌধুরী মিলানে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল কার্যালয়ে বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে উপযুক্ত জমির খোঁজ এবং অনুমতির জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসের সাহায্য চেয়েছিলেন। এরপর ভেনিস কমিউনের অ্যাসেসরি কমার্সিও মানে বাণিজ্য দপ্তর, যার প্রধান ডেপুটি মেয়র সিবাস্টিয়ান কস্টালোঙ্গার, তার কাছে ডাবলু চৌধুরীর হাতে লেখা একটি চিঠি যেখানে তিনি বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, সেটি পৌঁছে দিয়েছেন জাবেদ।
কর্তৃপক্ষের কাছে লেখা চিঠিতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৯২০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাবেদ। এক হাজার মিলিয়নে এক বিলিয়ন হয়।
জাবেদ বলেছেন, এই কারখানা হলে ইতালিতে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ তৈরি হতে পারে, এমন বিবেচনায় তারা ডাবলু চৌধুরীকে সাহায্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভেনিসে বহু সংখ্যক বাংলাদেশি চাকরি-পড়াশুনার সূত্রে বসবাস করছেন।
ডাবলু চৌধুরী বলেন, আমার কোম্পানীতে বেশকিছু উচ্চ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রকৌশলী আছেন যারা বর্তমানে বিশ্বের সর্বাধুনিক বৈদ্যুতিক গাড়ির নির্মাণ ও গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত। এছাড়াও প্রযুক্তির অন্যান্য বিষয়ের সাথে যুক্ত বিশেষ পারদর্শীসম্প্ন্ন ব্যক্তিবর্গ এ কোম্পানির সাথে যুক্ত আছেন। ভবিষ্যতে কোনো একসময় এই কোম্পানি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে। এ প্রত্যাশাতেই তারা এবং আমি এই উদ্দেশে শামিল হয়েছি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে প্রস্তাবিত এই কারখানা স্থাপন ও পরিচালনায় যে অর্থ প্রয়োজন হবে তার জন্য আমি প্রচলিত ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট বা সার্বভৌম তহবিল বা ব্যক্তিগত উদ্যোক্তাদের সাথে আলোচনা করবো।
তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে নকশা ও অন্যান্য সকল প্রযুক্তিগত বিষয়াদি মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ করা হবে আর তহবিল প্রদানকারি উদ্যোক্তারা অর্থ সরবরাহ করবেন। ব্যবসায়িক পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে আমাদের কোম্পানি কারখানা প্রতিষ্ঠা ও উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। বন্দর ও প্রয়োজনীয় লোকবলের সহজ প্রাপ্তি থাকায় ভেনিসে কয়েকটি সম্ভাব্য স্থানের একটি বিবেচনা করা হয়েছে। তবে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি এবং ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ আমাদের প্রাথমিক বিবেচনায় রয়েছে। তবে অর্থ বিনিয়োগকারীদের সাথে আলোচনার সুবিধা বিবেচনায় আমরা সম্ভাব্য জায়গার একটি তালিকা বানিয়েছি যা কোম্পানি স্থাপন ও ব্যায় সম্পর্কে একটি ধারণা প্রদান করবে।
কারখানা স্থাপনে এশিয়া নয় কেন? এ বিষয়ে ডাবলু চৌধুরী বলেন, কারখানা স্থাপনের জন্য তার বিনিয়োগকারীরা আইনশৃঙ্খলা ভালো এমন কোন দেশে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিলেন, এবং ভেনিসের পোর্তো মারঘেরায় কর্তৃপক্ষ পরিবেশবান্ধব ও টেকসই শিল্পকারখানাকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে। এই সুবিধা আমাদের ব্যবসার ক্ষেত্রে বড় কাজ দেবে। যা অন্য জায়গায় পাওয়া যাবে না। এই দুই কারণে আফ্রিকা বা এশিয়ার কোন দেশের বদলে ইতালিকে বেছে নেয়া হয়েছে।
এসি