মেসি তুমিই পারবে, পারতেই হবে
নাজমুশ শাহাদাৎ
প্রকাশিত : ০৩:৫৬ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০২২ বুধবার
শুধুই অঘটন নয়, বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অঘটন বললেও হয়তো ভুল হবে না। ৯০ শতাংশ ফুটবলপ্রেমীই এই ফল মানতে পারছেন না। মানার কথাও নয়।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে মাত্র একবারই শেষ ষোলোর যোগ্যতা অর্জন করতে পারে সৌদি আরব। বিশ্বমঞ্চে শেষ ১৩টি ম্যাচের মধ্যে এটাই তাদের প্রথম জয়।
ইরানের বিপক্ষে ইংল্যান্ড ৬-২ ব্যবধানে জেতার পর আর্জেন্টিনার ওপরেও প্রত্যাশা তৈরি হয় বড় ব্যবধানে জয়ের। শুরুটা সেইভাবেই করেছিলেন লিওনেল মেসি। কিন্তু মাঝমাঠের রক্ষণাত্মক মনোভাব ও ডিফেন্সের দুর্বলতার ফল ভোগ করতে হলো বিশ্বের অন্যতম সেরা দলকে।
কাতারে খেলতে আসার আগে টানা ৩৫ ম্যাচে অপরাজিত ছিল আর্জেন্টিনা। কোপা আমেরিকা ও ফিনালিসিমা জেতার ফলে আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা আশাবাদী ছিলেন, জীবনের শেষ বিশ্বকাপে হয়তো ট্রফিটা উঠবে মেসির হাতে!
তবে সেই স্বপ্ন ধাক্কা খেল কি-না, তা বোঝা যাবে আগামী ২৭ নভেম্বর মেক্সিকোর বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে। রদ্রিগো ডি পল, লিয়ান্দ্রো প্যারেদেসদের মানসিকতার ওপরেই অনেকটা নির্ভর করছে আর্জেন্টিনার ঘুরে দাঁড়ানোর চিত্রটা।
তার চেয়েও বড় বিষয় ছিল, মেসি কেমন খেলেন? গত কয়েক দিন ধরে ক্ষুদে যাদুকরের চোট নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা তৈরি হয়েছিল। মঙ্গলবার তার খেলা দেখেও সন্তুষ্ট হতে পারিনি অনেকেই। পেনাল্টি থেকে পাওয়া গোলটি অবশ্য মেসির পা থেকেই। কিন্তু মেসির থেকে যে ফুটবল সবাই আশা করে, তা বোধহয় দেখা যায়নি!
নিজেকে কেমন যেন বাঁচিয়ে খেলার মানসিকতা ধরা পড়ল সবার চোখে। হতে পারে, সৌদি দলের ফুটবলারদের শুরু থেকে পা লক্ষ্য করে আক্রমণ করার ব্যাপারটা ওকে সতর্ক করে দিয়েছিল। সেটা খুবই স্বাভাবিক। তবে মেসি-ই তো এই দলের কান্ডারি। বিশ্বকাপ জিততে হলে ওকেই যে দলের ড্রাইভিং হুইলটা নিজের হাতে তুলে নিতে হবে।
পুরো ম্যাচে সতীর্থদের গোলের বল সাজিয়ে দিতে পারেন নি মেসি। ৬৫টি টাচ খেলেছে সতীর্থদের সঙ্গে, পাসিং ৩২। গোল লক্ষ্যে শট নিয়েছে চারটি। এই পরিসংখ্যান কিন্তু মেসিসুলভ নয়। তাই সবার আশা, পরের ম্যাচে যেন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন মেসি।
বিশ্বকাপ খেলতে আসা কোনও দলই আসলে দুর্বল নয়। নিজেদের গ্রুপে যোগ্যতা অর্জন পর্বে লড়াই করেই এই প্রতিযোগিতায় নামতে হয় সবাইকে। প্রত্যেক দলই সেরা একাদশ মাঠে নামায়। তবে আর্জেন্টিনাকে দেখে মনে হয়েছে, প্রথম গোলটি পাওয়ার পরে ওরা বিপক্ষকে হালকাভাবে নিতে শুরু করেছিল।
মাঝ মাঠের উচিৎ ছিল আক্রমণের ঢেউ তুলে সৌদি আরবকে কোণঠাসা করে দেওয়া। কিন্তু দেখা গেল উল্টো চিত্র। সালেহ আল শেহরি, সালেম আল দৌসারিদের ক্রমাগত আক্রমণে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিল ডি পল ও প্যারেদেস। প্রতি আক্রমণের সুযোগ খুঁজতে গিয়ে বিপক্ষ শিবিরে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিলেন এই দুই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার।
প্রথমার্ধের শেষের দিকে সৌদি আরবের মরিয়া ভাবটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিশ্লেষক লুইস ফিগোকেও বলতে শোনা গেল, ‘আর্জেন্টিনা যদি ক্রমাগত আক্রমণ না করে, সৌদি আরব ম্যাচে ফিরে আসবে। তখন ওদের সামলানো কঠিন হয়ে উঠতে পারে।’
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পর্তুগালের কিংবদন্তির অনুমানটাই মিলে গেল। ঠিক পাঁচ মিনিটের আক্রমণে নিকোলাস ওটামেন্ডি, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোদের ব্যর্থতা ফুটিয়ে তুললেন সালেহ আল শেহরি ও সালেম আল দৌসারি।
দু’টি গোলই হয় আর্জেন্টিনার রক্ষণের ভুলে। প্রথম গোলের সময় আল শেহরিকে বক্সের বাইরেই আটকে দিতে পারতেন রোমেরো। তা না করে ওকে বক্সে ঢুকে পড়ার রাস্তাটা করে দিলেন তিনি। বাঁ-পায়ের শট রোমেরোর পায়ের নিচ দিয়েই এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে পরাস্ত করে জড়িয়ে যায় জালে।
আর ৫৩ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আর্জেন্টিনার চার ডিফেন্ডার। সেইসঙ্গে নেমে এসেছিলেন ডি পল ও প্যারেদেসও। আল দৌসারি যখন বল পেয়ে যান, তাকে ঘুরতে দেওয়াই উচিৎ হয়নি। আল দৌসারি বল রিসিভ করে ঘুরে ডান পায়ে কাট করে মার্টিনেজের বাঁ-প্রান্ত দিয়ে বাঁক খাইয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন। আর এর সঙ্গেই ফুটে উঠল আর্জেন্টাইন রক্ষণভাগের দীনতা। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই হয়তো কাঁটা হয়ে দাঁড়াল লাউতারো মার্টিনেজদের জন্য।
তবে এখনই আশাহত হওয়ার মতো পরিস্থিতি আসেনি আর্জেন্টিনা সমর্থকদের। ১৯৯০ সালে ক্যামেরুনের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ হেরেও ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা।
সেই দলে ছিলেন দিয়েগো ম্যারাডোনার মতো একজন বিস্ময়কর প্রতিভা। বর্তমান দলে আছেন লিওনেল মেসি। দলের মনোবল ফেরাতে জীবন্ত এই কিংবদন্তিকেই নিতে হবে বাড়তি দায়িত্ব। মেসি, তুমি সেটা পারবে, তোমাকে পারতেই হবে।
এনএস/এমএম