বিজিবি-বিএসএফের মানবিকতা, সীমান্তে স্বজনের মরদেহ দেখার সুযোগ
মেহেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৯:৪১ এএম, ২৭ নভেম্বর ২০২২ রবিবার
মেহেরপুর সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফের মানবিকতায় ভারতীয় আত্মীয়র মরদেহ দেখার সুযোগ পেল বাংলাদেশী স্বজনরা। এসময়ে স্বজনের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠে। দেখা শেষে লাশ আবার ভারতে ফেরত নেয়া হয়।
শনিবার বিকালে সীমান্তের ১০৫ মেইন পিলারের কাছে স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মরদেহ দেখানোর উদ্যোগ নেয় বিজিবি-বিএসএফ।
৩০ বছর আগে মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার ভবেরপাড়া গ্রামের ফিলিপ হালসোনার মেয়ে সুকৃতি মণ্ডল (৫০)’র সঙ্গে বিয়ে হয় ভারতের নদীয়া জেলার হৃদয়পুর গ্রামের সনজিৎ মণ্ডলের সঙ্গে। হৃদয়পুর ও ভবেরপাড়ার দূরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার হলেও অবাধে যাতায়াতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সীমান্তের তারঁকাটা।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) নদীয়া জেলার চাপড়া হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সুকৃতি। খবর পেয়ে সুকৃতির বাংলাদেশের স্বজনরা লাশ দেখার জন্য বিজিবির কাছে আবেদন করেন। বিজিবিও মানবিক বিষয় বিবেচনা করে বিএসএফের সঙ্গে যোগোযোগ করে।
পরে বিএসএফের সম্মতিতে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে স্বাধীনতা সড়কের সীমান্ত ১০৫ মেইন পিলারের নোম্যান্সল্যান্ডে মরদেহ দেখানোর উদ্যোগ নেয়। এদিন বিকালে বিএসএফের কড়া পাহারায় সুকৃতির মরদেহ আনা হয় সীমান্তে। এদিকে বিজিবির পক্ষ থেকে বাংলাদেশী স্বজনদের নেয়া হয় মরদেহের কাছে।
মরদেহের কাছে পৌঁছালে স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাশ ভারি হয়ে উঠে। কিছুক্ষণ দেখার পর সুকৃতির মরদেহ আবার ভারতে নিয়ে যায় বিএসএফ।
এসময় মুজিবনগর বিজিবি কোম্পানি কমান্ডার শেখ সহিদ ও হৃদয়পুর বিএফএফের পক্ষে ওসি তরুণ কুমার উপস্থিত ছিলেন।
বিজিবি ও বিএসএফের এই মানবিক উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে সুকৃতির স্বজনসহ এলাকাবাসি।
ভবেরপাড়া গ্রামের সিবাস্তিন মণ্ডল ঝড়ু বলেন, “বিজিবি-বিএসএফ মরদেহ দেখার সুযোগ করে দেয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানাই। সত্যিই এটা একটা অনন্য উদ্যোগ। সুকৃতি মারা যাবার পর তার বাংলাদেশের স্বজনরা লাশ দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলেন। বিজিবি-বিএসএফের এই মানবিক উদ্যোগে লাশ দেখার সুযোগ হয়েছে তাদের।”
সুকৃতির ভাই প্রভুধান হালসোনা বলেন, “৩০ বছর আগে বোনের বিয়ে হয়। বোনটি হঠাৎ শনিবার মারা যায়। বিজিবি-বিএসএফের বদান্যতায় বোনের মরদেহটি একনজর দেখতে পেয়েছি। এই স্মৃতিটুকু মনে থাকবে চিরদিন।”
সুকৃতির বোড় বোন বলেন, “বোনের বিয়ে হয়েছে অনেক দিন। কিন্তু দেখা-সাক্ষাত নেই। আজ তার মরদেহ সীমান্তে আনায় মুখটা শেষ বারের মতো দেখা হলো।”
এ বিষয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় বিজিবি-বিএসএফের কোন প্রতিনিধি কারো সঙ্গে কোন কথা বলতে রাজি হননি। তবে লাশ দেখার সময় উভয়ে দেশের সীমান্তরক্ষীদের চোখ ছলছল করছিল। এসময়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন অনেকেই।
এ বিষয়ে মুজিবনগর (বাগোয়ন) ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন বলেন, মুজিবনগরের সঙ্গে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আবেগ জড়িয়ে আছে। স্বাধীনতা সড়ক দিয়েই বাংলাদেশের প্রথম সরকারের মন্ত্রীবর্গ মুজিবনগরে এসে শপথ নিয়েছিলেন। সেই স্বাধীনতা সড়কে এমন একটি মানবিক কাজ দেখলাম। সত্যিই এটি একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত।
বিজিবি-বিএসএফের এমন উদ্যোগকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি। সুকৃতির পরিবারের প্রতিও সমবেদনা জানান ইউপি চেয়ারম্যান।
এএইচ