ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও মেলেনি গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি (ভিডিও)

মুশফিকা নাজনীন, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪০ এএম, ২ ডিসেম্বর ২০২২ শুক্রবার

দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ও একমাত্র ‘গণহত্যা জাদুঘর’ খুলনায়। গণহত্যা-নির্যাতনের ইতিহাসভিত্তিক এ জাদুঘরে রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতিচিহ্ন। বিশিষ্টজনরা বলছেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও এখনো মেলেনি একাত্তরে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। বরং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা এবং শহীদ ও নির্যাতিতের সংখ্যা নিয়ে চলছে অপপ্রচার। 

১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার বেশিরভাগই ছিলো পূর্বপরিকল্পিত। নির্মমতার দিক থেকে সেগুলো ছিল বর্বর নৃশংস। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, শান্তি কমিটির সদস্যরা মিলে হত্যা করে দেশের সুর্যসন্তানদের। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, হাজার হাজার মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে শুধু মানবতাই লঙ্ঘন করা হয়নি; হত্যাযজ্ঞের পর হানাদার বাহিনী রাজাকারদের পাহারায় বসিয়ে ঘটনাস্থল ঘিরে রাখে। মরদেহের কবর বা সৎকার তো দূরের কথা, কাউকে কাছেও আসতে দেয়নি তারা। ফলে কোনো রকমে গণকবরে মাটি চাপা পড়ে মরদেহগুলো। 

প্রত্যক্ষদর্শী একজন বলেন, “নামাজে বসিয়ে সবাইকে সেজদায় যেতে বলে। যেসময় সেজদায় যায় সেসময় ব্রাশ ফায়ার করে সবাইকে একসঙ্গে শেষ করে দেয়।”

দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা এসব বধ্যভূমি ও গণকবরের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনও করা সম্ভব হয়নি। নির্যাতনের শিকার বহু নারী-পুরুষ এখনও সেসব লোমহর্ষক স্মৃতি রোমন্থন করেন। চান তারা গণহত্যা ও নির্যাতনের বিচার। 

স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি যেন ইতিহাস বিকৃতি করতে না পারে, যুদ্ধের ভয়াবহতা সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে, ২০১৪ সালের ১৭ মে খুলনায় গণহত্যা জাদুঘরের যাত্রা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় জাদুঘরটি গড়ে তোলা হয় খুলনার সাউথ সেন্ট্রাল রোডে। যেখানে লাইব্রেরি, গবেষণাগারসহ আর্কাইভে আছে বধ্যভূমি সংক্রান্ত তথ্যভান্ডার, আলোকচিত্র ও বিভিন্ন গ্রন্থ।

১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট উপ-পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান বলেন, “মাত্র কয়েক ঘণ্টায় প্রায় ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করে। যে কারণে আমরা মনে করি, খুলনা হলো এধরনের জাদুঘর তৈরির করার বিশেষ জায়গা।”

গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, গণহত্যার আন্তর্জাতিক আইনী স্বীকৃতির জন্য রাষ্ট্রকেই নিতে হবে উদ্যোগ। 

ইতিহাসবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, “বেসরকারি উদ্যোগকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সহায়তা করা উচিত। যেটি তারা করছেনা। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাস্তবে সেটি, যে আমেরিকাতে একজন বললো এখানে একটি গণহত্যা হয়েছে ওইভাবে। কিন্তু আইনী স্বীকৃতি যেটা আমরা চাচ্ছি, সে ব্যাপারে রাষ্ট্রকে এগুতে হবে। সেটা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।”

এই ইতিহাসবিদের মতে, সারাদেশে গণহত্যা, বধ্যভূমি ও নির্যাতনের ইতিহাস সংরক্ষণ আজ জরুরি। এতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস উঠে আসার পাশাপাশি উত্তর প্রজন্মের মাঝে মুক্তিসংগ্রামের মর্মবাণী প্রতিভাত হবে। জানতে পারবে তারা ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি শুধু চারটি বর্ণ নয়, এর পেছনে আছে লাখো মানুষের দুঃখবেদনা, অশ্রু, রক্ত, ক্ষোভ, নির্যাতন আর অপমানের নিদারুন গল্প। 

এএইচ