ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

পাকিস্তানী বাহিনীকে হটিয়ে এই দিনে মুক্ত হয় অবরুদ্ধ কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০২:৩৩ পিএম, ৬ ডিসেম্বর ২০২২ মঙ্গলবার

আজ ৬ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম হানাদারমুক্ত দিবস। এই দিনে বাংলার দামাল ছেলের সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানী বাহিনীকে হটিয়ে অবরুদ্ধ কুড়িগ্রামকে মুক্ত করে। সেই দিন থেকে ৬ ডিসেম্বর দিনটি হানাদারমুক্ত দিবস হিসেবে পালন করে আসছে কুড়িগ্রামবাসী।

এ উপলক্ষে দিনব্যাপী শহীদি আত্মার মাগফেরাত কামনা, পুষ্পাঞ্জলি অর্পণসহ নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন। 

জানা যায়, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে কুড়িগ্রামের রয়েছে গৌরোবজ্জ্বল ইতিহাস। দেশমাতৃকার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১০ মার্চ জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রয়াত আহম্মদ হোসেন সরকারকে আহবায়ক ও আহাম্মদ আলী বকসীকে যুগ্ম আহবায়ক করে মহকুমা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। সে দিন থেকেই তাদের নেতৃত্বে কুড়িগ্রামের মুক্তিকামী মানুষ যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। 

বাংলার দামাল ছেলেরা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে হটিয়ে অবরুদ্ধ কুড়িগ্রামকে হানাদারদের কবল থেকে ৬ ডিসেম্বর মুক্ত করে।

জেলা মুক্তি যোদ্ধা কমান্ড অফিসের তথ্যমতে, মুক্তিযুদ্ধে জেলায় প্রায় ৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন এবং শহীদ হন ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় কুড়িগ্রাম ৬নং সেক্টরের অধীনে ছিল। এপ্রিলের ৭ ও ১৪ তারিখ দুই দফা পাকিস্তান হানাদার বাহিনী কুড়িগ্রাম আক্রমণের চেষ্টা করে দখলে নিতে ব্যর্থ হয়। 

২০ এপ্রিল তিনদিক থেকে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে কুড়িগ্রাম দখলে নেয় পাকিস্তানীরা। এরপর ৯ মাস ধরে তারা এ এলাকার মানুষের উপর নির্যাতন করে। তারা একের পর এক গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। বিভিন্ন স্থানে বাঙালি নারীদের ধর্ষণ ও স্বাধীনতাকামী মানুষদের নির্যাতন করার জন্য গড়ে তোলে একাধিক ক্যাম্প। 

তারা একেরপর এক এলাকায় গণহত্যা চালায়। তার স্মৃতিচিহ্ন আজও বয়ে বেড়াচ্ছে জেলার মানুষজন। তবে সে সময় কুড়িগ্রাম মহকুমার রৌমারী ও ফুলবাড়ী মুক্তাঞ্চল ছিল।

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বলেন, একেরপর এক যুদ্ধে যুবকরা থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে। প্রতিশোধের আগুন তাদের মনকে নাড়া দেয়। তারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন।

আগস্ট মাসব্যাপী মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা কায়দায় সম্মুখযুদ্ধকে বেগবান করে তোলেন। মিত্রবাহিনীর সহায়তায় হেলিকপ্টারের সাহায্যে গোলাবর্ষণে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পর্যুদস্ত হলে নভেম্বরে একের পর এক এলাকা মুক্ত হতে থাকে। এরপরে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ৬ ডিসেম্বর।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, ৬ ডিসেম্বরের স্মৃতি আজও মনকে নাড়া দেয়। সেদিন বিজয়ের আনন্দে মানুষ আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ৫ ডিসেম্বর রাতে চতুর্দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা কুড়িগ্রাম শহর ঘিরে ফেলে পাকিস্তান বাহিনীর উপর আক্রমণ শুরু করলে হানাদাররা পিছু হটতে বাধ্য হয়। তারা ট্রেনযোগে এমনকি পায়ে হেঁটে রংপুরের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায়।  ৬ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম সম্পূর্ণরূপে হানাদার মুক্ত হয়। গোটা মহকুমার মানুষ আনন্দ উল্লাস করে স্বাগত জানায় মুক্তিযোদ্ধাদের।

বীর প্রতিক আব্দুল হাই সরকার বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশের সূর্য সেনারা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সোনার বাংলাদেশ গড়তে অপশক্তির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব এখন আমার-আপনার সবার। নতুন প্রজন্ম যেন সব স্তরে মহান স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারে এই আশা করছি।

এএইচ