মরক্কোর তারকা আশরাফ হাকিমি ও তার মায়ের গল্প
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:০৯ পিএম, ৭ ডিসেম্বর ২০২২ বুধবার
প্রথমবার আরব দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেরা আটে জায়গা করে নিয়েছে মরক্কো। কাতার বিশ্বকাপে মরক্কো দলটি নিয়ে যতবার আলোচনা হয়েছে, ততবার এসেছে আশরাফ হাকিমির নাম। হাকিমি দলটির সবচেয়ে বড় তারকা।
সবচেয়ে বড় মুহূর্তে তিনি নিজের স্নায়ু নিয়ন্ত্রণে রেখে পেনাল্টি শট নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেছেন। আর তাতেই স্পেনকে হারিয়ে বিশ্বকাপের শেষ আটে জায়গা করে নিয়েছে মরক্কো।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটে জয়-পরাজয় নিষ্পত্তি না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও কোনো দল গোল না পাওয়ায় নিশ্চিত হয় টাইব্রেকারের। আর সেই পেনাল্টি শুটআউটে খেই হারায় স্পেন।
আশরাফ হাকিমির ওপর দায়িত্ব পড়লো, তিনি গোল করলেই মরক্কো কোয়ার্টার ফাইনালে।
তিনি গোল করলে।, হাকিমির ঠাণ্ডা মাথার পেনাল্টিকে ফুটবলের ভাষায় বলা হয় ‘পানেনকা’। আলতো ছোঁয়ায় গোলকিপারকে পরাস্ত করেছেন হাকিমি।
স্পেনের গোলকিপার উনাই সিমন ততক্ষণে ঝাঁপ দিয়েছেন, মাটিতে বসেই দেখেছেন বল এখনো ভেসে যাচ্ছে, জালে জড়াচ্ছে।
হাকিমির গোল এতো পরিপূর্ণতা পেতো না যদি না তাদের গোলকিপার ইয়াসিন বুনো দুটি পেনাল্টি ফিরিয়ে না দিতেন। বুনো গতরাতে নায়কোচিত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন ম্যাচজুড়ে।
আর তাতে স্পেনের কোচ লুইস এনরিকের ‘১০০০ পেনাল্টি’ অনুশীলন মাঠে মারা গেল।
এমন এক ফুটবলারের পায়ে জয় পেল মরক্কো যার জন্ম মাদ্রিদে। যিনি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলেছেনও। এখন খেলছেন ইউরোপের অন্যতম বড় ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের হয়ে।
ইতিহাসে প্রথম আরব দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপের সেরা আটে জায়গা করে নিয়েছে মরক্কো। মাত্র চতুর্থ আফ্রিকান দেশ হিসেবে এই পর্যায়ে এসেছে দেশটি। এর আগে ১৯৯০ সালে ক্যামেরুন, ২০০২ সালে সেনেগাল এবং ২০১০ সালে ঘানা কোয়ার্টার ফাইনালে এসেছিল।
কিন্তু এর বেশি কোনও দলই যেতে পারেনি।
আশরাফ হাকিমি গোল করার পর ছুটে গেলেন গ্যালারির সেই কোণে, যেখানে তার মা আছেন। বেলজিয়ামের বিপক্ষে মরক্কোর স্মরণীয় জয়ের পরেও এই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল।
ইন্টারনেটের সবচেয়ে আলোচিত ছবির একটি ছিল আশরাফ হাকিমি ও তার মায়ের এই ছবি। মায়ের সঙ্গে আদর বিনিময় করলেন এবং খেলা শেষে মায়ের গল্প বললেন। যেই গল্প ছুঁয়ে গেছে ফুটবল সমর্থক এবং ফুটবলের বাইরেও অনেকের মন।
বিবিসি স্পোর্টসের প্রেজেন্টার মিমি ফাওয়াজ টুইটারে লিখেছেন, “আশরাফ হাকিমির মায়ের সঙ্গে আরও একটি দারুণ ছবি। স্পেনকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে হাকিমি ছুটে গেছেন মায়ের কাছে। তার বাবা-মা’র ত্যাগ সম্পর্কে কথা বলেছেন হাকিমি।”
চব্বিশ বছর বয়সী আশরাফ হাকিমি বলেছেন, তার মা মানুষের বাড়ি পরিস্কার করে অর্থ উপার্জন করতেন একটা সময়। হাকিমির মায়ের নাম সৈয়দা মৌহ। হাকিমির বাবা ছিলেন হকার।
হাকিমি বলেন, “আমরা যে পরিবার থেকে এসেছি, আমাদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। আমি এখন প্রতিদিন তাদের জন্য লড়াই করি। যারা আমার জন্য ত্যাগ শিকার করেছেন। আমার ভাইয়েরা এমন অনেক সুবিধা পাননি, যা আমার সফলতার জন্য দেয়া হয়েছে।”
হাকিমি একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মরক্কোর এই জাতীয় দলের। যিনি স্পেনের বদলে মরক্কোর হয়েই খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চাইলেও তিনি স্পেনেও খেলতে পারতেন। (সূত্র: বিবিসি বাংলা)
এএইচ