ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের সাফল্য নিয়ে শঙ্কা (ভিডিও)
প্রতিনিধিদের খবর
প্রকাশিত : ০১:১৫ পিএম, ৮ ডিসেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার
আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের সাফল্য নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বেঁধে দেয়া দামে চাল সরবরাহে গড়িমসি করছেন মিল মালিকরা। ধান সংগ্রহেও কৃষকদের কাছ থেকে মিলছে না তেমন সাড়া। এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার দুই ভাগও পূরণ হয়নি।
গত ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি গুদামে ধান-চালের মজুদ ছিল ১৩ লাখ ১২ হাজার ৩৬১ মেট্রিক টন। যার মধ্যে ১৩ লাখ ১০ হাজার টন চাল ও ২ হাজার ৩৬১ টন ধান। পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও খাদ্য-নিরাপত্তা জোরদারে চলতি আমন মৌসুমে আরও ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্য সরকারের।
কিন্তু এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ২ শতাংশও অর্জিত হয়নি। চলতি মাসের ৬ তারিখ পর্যন্ত মাত্র ১৩ মেট্রিক টন ধান ও ৮ হাজার ৮৮০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে খাদ্য অধিদপ্তর। ৪২ টাকা কেজি দরে চাল ও ২৮ টাকায় ধান সরবরাহে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না মিল মালিক ও কৃষকরা।
নওগাঁর মিল মালিকরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামে চাল সরবরাহ করলে কেজিতে লোকসান হবে ৫ থেকে ৬ টাকা। জেলার বেশিরভাগ চালকল এখনও চুক্তিবদ্ধ হননি।
নওগাঁর মজুমদার অটোরাইস মিল মালিক নিপেন মজুমদার বলেন, “সরকার কেজিতে দাম দিয়েছে ৪২ টাকা আর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা কেজি। আমার ৫শ’ টন বরাদ্দ দিয়েছে। গত তিন বছর ধরে সরকারকে সহায়তা করে আমরা নিঃশেষ হয়ে গেছি। আমাদের মিল বন্ধ হয়ে গেছে।”
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, “প্রতি কেজি চালের উপর ৫ টাকা প্রনোদনা দাবি করেছি। এই দাবি মানলে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল সরকারের খাদ্য গুদামে দিতে সক্ষম হবো।”
চলতি আমন মৌসুমে রংপুরের ৮ উপজেলায় ৭২২ জন মিল মালিকদের মাধ্যমে ১৫ হাজার ৮শ’ ৩০ মেট্রিক টন চাল এবং ৯ হাজার ৪৩ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে খাদ্য বিভাগ। তবে এখন পর্যন্ত ১৫ জন মিলার চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রিয়াজুর রহমান রাজু বলেন, “যে ধান আমরা নিয়ে থাকি তা সরাসরি কৃষকের মাধ্যমে নিয়ে থাকি। এভাবেই এবার ৮ উপজেলা থেকে ধান সংগ্রহ করবো।”
রংপুরের চালকল মালিকরা জানিয়েছেন, প্রতি কেজি চালের উৎপাদন খরচ প্রায় ৪৬ টাকা। যা সরকারি নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি।
রংপুর জেলা চালকল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রিপন চৌধুরী বলেন, “৪৬ টাকা কেজি কিন্তু সরকার দাম নির্ধারণ করেছে ৪২ টাকা। তার মধ্যে অফিস খরচ, ক্যারিং খরচসহ ১ টাকা বাদ যায়। থাকে ৪১ টাকা।”
নাটোরে এবার ৪ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন ধান ও ৬ হাজার ৮৭২ মেট্রিক টন চাল ক্রয় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে খাদ্য বিভাগ। জেলায় ১৪২ মিলারের মাত্র ১০ জন জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বলেন, সরকার দর নির্ধারণ করার পরই কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন।
নাটোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এসএম সাইফুল ইসলাম বলেন, “সরকার দর নির্ধারণ করার মাধ্যমে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাক এটা খাদ্যবিভাগের অন্যতম লক্ষ্য।”
দিনাজপুরে ১৯৬টি অটোরাইস মিলের মধ্যে ৬০ থেকে ৬৫টি মিল চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা খাদ্য বিভাগ।
সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমন খাদ্য সংগ্রহ অভিযান শেষ হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি।
এএইচ