ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

নেইমারের কান্না, কাঁদলো বিশ্ব

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:০৯ এএম, ১০ ডিসেম্বর ২০২২ শনিবার | আপডেট: ০৩:২৯ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০২২ শনিবার

কাতার বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল ব্রাজিল। মার্কুইনোসের পেনাল্টি শুট আউটের শট পোস্টে লাগতেই যবনিকা পড়ে গেল ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে চার চারটি গোলের পর সাম্বা নাচের যে ঝলক দেখিয়েছিল ব্রাজিল। সেই দলটাই ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারের পর হাউ হাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়ল। কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়লেন নেইমার। এ যেনো স্বপ্নভঙ্গ। অধরা রয়ে গেল ‘মিশন হেক্সা’।

ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলের ব্যবধানে হেরে মাঠেই কান্নায় ভেঙে পড়েন দলটির সুপারস্টার নেইমার। মহাতারকার এ কান্না বিশ্ব ব্রাজিলিয়ান ভক্তদের হৃদয়কে করেছে আহত। তারাও সুপারস্টারের কষ্টের অংশিদার হয়ে বিশ্ব মঞ্চ থেকে সকল উচ্ছ্বাস তুলে নিলেন। 

শুক্রবার কাতারের এডুকেশন স্টেডিয়ামে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ের খেলার ১৫ মিনেটে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন নেইমার। কিন্তু সেই লিড বেশি সময় ধরে রাখতে পারেনি ব্রাজিল।

মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে পেটকোভিচের গোলে সমতায় ফেরে ক্রোয়েশিয়া। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ ব্রাজিলের।

পেনাল্টিশুটাউটে ক্রোয়েশিয়ার পক্ষে প্রথমে শট করতে আসেন নিকোলা ভ্লাসিক। তার শট ঠেকাতে পারেননি ব্রাজিলের গোলরক্ষক অ্যালিসন। কিন্তু ব্রাজিলের প্রথম শটটি নিতে এসে ব্যর্থ হলেন রদ্রিগো। গোলরক্ষক লিভাকোভিচ ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন।

এরপর লোভরো মাজের, ক্যাসেমিরো, লুকা মদ্রিচ, পেদ্রো, মিসলাভ ওরসিক গোল করেন দু’দলের হয়ে। ব্রাজিলের হয়ে চতুর্থ শটটি নিতে এসে মার্কুইনহোস বাম পাশের বারে লাগিয়ে গোল বঞ্চিত হলেন। সঙ্গে সঙ্গে বিজয়ের আনন্দে, উল্লাসে মেতে ওঠেন ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলাররা। আর এর মধ্য দিয়ে চার বছরের দীর্ঘ অপেক্ষা শুরু হলো নেইমারদের। 

এদিকে, একরাশ দুঃখ বুকে করে মাঠ থেকে বেরিয়ে আসছেন নেইমার, ঠিক সেই সময় ধরা পড়ল এক অসাধারণ মুহূর্ত। কিছুক্ষণ আগেই যে দলের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হল সেই ক্রোয়েশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার ইভান পেরিসিচের পুত্র দৌড়ে এল মাঠে। তার বাবা যখন সতীর্থদের সঙ্গে ব্রাজিল বধের সেলিব্রেশনে মত্ত, ঠিক সেই সময় তার ছোট্ট ছেলে মাঠে ঢুকল। তবে পেরিসিচের ছেলে বাবার দিকে না গিয়ে দৌড়ে গেল তার স্বপ্নের নায়ক নেইমারের দিকে।

স্বপ্নের নায়ককে একবার ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে এটি। নেইমারের দিকে ছুটে যাওয়ার সময় ছোট ছেলেটিকে আটকানোর চেষ্টা করে সিকিউরিটি। তবে নেইমার বারণ করার পর, ক্রোয়েশিয়ার জার্সি পড়ে খুদে ফ্যান এগিয়ে আসে নেইমারের দিকে। তাকে হেরে যাওয়ার সমবেদনা জানায় জুনিয়র ইভান। কান্না ভেজা চোখেই নেইমার জড়িয়ে ধরেন খুদে ফ্যানকে। এক মুখ হাসি আর রোমাঞ্চ নিয়ে ফিরে যায় আগামী প্রজন্ম। মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে এই মিষ্টি মুহূর্তের ছবি।

ম্যাচ হরে শুধু কী নেইমার কাঁদলেন? না, কাঁদল গোটা ব্রাজিল আর বিশ্বের কোটি কোটি হলুদ জার্সির সমর্থকরা। তবে পেরিসিচের ছেলের সঙ্গে নেইমারের সাক্ষাতের মুহূর্তটি সবকিছুকে ছাপিয়ে গেল। হয়তো কাতারের মাটিতেই শেষ বিশ্বকাপ খেলে ফেললেন নেইমার। বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা গোল করে ফুটবল সম্রাট পেলের কীর্তি ছোঁয়ার পরেও একটা টাইব্রেকারে যাবতীয় স্বপ্ন ওলট-পালট হয়ে গেল।

বিশ্ব মঞ্চে থাকছেন না নেইমার, কিন্তু তার প্রতি ভক্তদের যে আবেগ তা থেকে যাবে বছরের পর বছর। এরও অবশ্য কারণ রয়েছে। ব্রাজিলের মগি দাস ক্রুজেসে এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নেইমার। তার উত্থানও অন্যসব ফুটবল গ্রেটদের মতোই। দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে ফুটবলকে ধ্যান-জ্ঞান ও পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি।

নেইমারের বাবা নেইমার সিনিয়রের’ও ইচ্ছা ছিলো ফুটবলার হউয়ার, কিন্তু দারিদ্র্যের গ্যাঁড়াকলে সে স্বপ্ন পুরণ হয়নি তার। ভাগ্যান্বেষণে ব্রাজিলের মধ্যাঞ্চলের শহর সাও ভিনসেন্ট থেকে ১৯৯২ সালে সাও পাওলোর মগি দাস ক্রজেস শহরে এসেছিলেন তিনি। ওই দুঃসময়ে সিনিয়র নেইমারের ভালবাসার প্রতীক হিসেবে ঘর আলো করে আসে জুনিয়র নেইমার। এরপর স্বপ্নের পরিধি বেড়ে যায় তার। নিজের অপূর্ণ ইচ্ছা ছেলেকে দিয়ে পূরণের স্বপ্ন দেখতে থাকেন। এ কারণে অভাবের সংসার হলেও ছেলেকে এর আঁচ লাগতে দেননি। সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন উত্তরসূরির চাওয়া পূরণ করতে। ছোট্ট ছেলের প্রতিভা ক্ষুরধার হওয়ায় কাজটাও সহজ জয়। যার প্রমাণ মেলে স্থানীয় ‘পর্তুগীজা সানটিস্টা’ ফুটবলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শনের মধ্যদিয়ে। তখনই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, ব্রাজিলের বস্তি থেকে ফুটবিশ্ব শাসন করতে আসছে আরও একজন বিস্ময়বালক। মূলত সাও পাওলোর রাস্তায় ফুটবল খেলতে খেলতে ফুটবলের সঙ্গে প্রেম হয়ে যায় সেদিনের ছোট্ট নেইমারের। নেইমারের বিস্ময়কর উত্থানের শুরু ২০০৩ সাল থেকে। ওই বছর তিনি কিশোর প্রতিভা হিসেবে ক্লাব সান্তোসে যোগ দেন। পেশাদার ফুটবলের সঙ্গে তখন থেকেই পরিচিতি ব্রাজিলের বর্তমান স্বপ্নদ্রষ্টার। সেদিনের নেইমার আজ বিশ্বের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়। 

এসএ/