ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

যেসব কারণে কাতার বিশ্বকাপ ব্যতিক্রম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:০২ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০২২ শনিবার

মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমির দেশ কাতারে আয়োজিত বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। মরুভূমির দেশ কাতারের এই বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসে ব্যতিক্রম। কারণ অনেক নতুনত্বের জন্ম দিয়েছে এবারের বিশ্বকাপ।

যে কারণে কাতার বিশ্বকাপ অনন্য-
শীতকালে বিশ্বকাপ:
ফিফা বিশ্বকাপের আগের সব আসরই অনুষ্ঠিত হয়েছিল জুন-জুলাইয়ে। তবে নজিরবিহীনভাবে এবার সেটা পাল্টে গেছে। খেলা হচ্ছে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে। মূলত কাতারের মরুভূমির তপ্ত জলবায়ুর কারণেই এবারের আসর শীত মৌসুমে সরিয়ে আনা হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম বিশ্বকাপ:
কাতারই মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ, যারা ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে। শুধু মধ্যপ্রাচ্যই নয়, আরববিশ্বেও কাতারই প্রথম। এশিয়ায় অবশ্য এটি দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। প্রথমবার হয়েছিল ২০০২ সালে, যৌথভাবে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে।

প্রথম টেকনো বল:
কাতার বিশ্বকাপে ব্যবহার করা হচ্ছে অ্যাডিডাসের তৈরি বল ‘আল রিহলা’। বাংলায় যার অর্থ ‘ভ্রমণ’। চামড়ায় তৈরি বলটিতে আছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। বলের নিখুঁত গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য এর ভেতরে ৫০০ হার্জ আইএমইউ সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

যে তথ্য ব্যবহার করে নিখুঁত সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর)। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রযুক্তিসম্পন্ন বল ব্যবহার করা হয়েছে এবারই প্রথম।

প্রথম সেমি-অটো অফসাইড প্রযুক্তি:
২০১৮ বিশ্বকাপে ভিএআর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। কাতারে অফসাইডের সিদ্ধান্ত হচ্ছে আরও নিখুঁত। চালু হয়েছে সেমিঅটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি। প্রতিটি স্টেডিয়ামের ছাদের নিচের অংশে ১২টি ট্র্যাকিং ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

কোনো খেলোয়াড় অফসাইড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও ম্যাচ অফিশিয়ালদের কাছে অফসাইড সংকেত চলে যায়। গত বছর ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ এবং ফিফা আরব কাপে সেমি-অটো অফসাইড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে বিশ্বকাপ ফুটবলে এই প্রথম।

ফুটবলারদের জন্য ডেটা অ্যাপ:
ফুটবলারদের পারফরম্যান্সের আরও বিশ্লেষণী ও নিখুঁত তথ্য পেতে সংযোজন করা হয়েছে ডেটা অ্যাপ। ৩২টি দলের প্রতিটি ফুটবলার ম্যাচের পর নিজের খেলাসম্পর্কিত তথ্যগুলো দেখতে পারছেন। ডেটার মধ্যে থাকছে ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ কোন মুহূর্তে তিনি কেমন খেলেছেন, বল পায়ে কেমন ছিলেন, কতটুকু কী প্রচেষ্টা ছিল।

প্রথম ‘অল গ্রিন’ যানবাহনব্যবস্থা:
কার্বন-নিরপেক্ষ বিশ্বকাপ আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল কাতারের সুপ্রিম কমিটি ফর ডেলিভারি অ্যান্ড লিগ্যাসি। এ জন্য যাতায়াতে পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক বাসের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। ইলেকট্রিক বাসগুলো ৪৪টি মেট্রোলিংক এবং ৪৮টি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট রুটে চালানো হচ্ছে। আয়োজক কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য, বিশ্বকাপের মাধ্যমে চালু হওয়া পরিবেশবান্ধব যানবাহনব্যবস্থা কাতারের যাতায়াতব্যবস্থায় টেকসই হবে।

প্রথম ‘আঁটসাঁট’ বিশ্বকাপ: 
কাতার বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামগুলো একটি অপরটির খুবই কাছাকাছি। মাত্র ৫৫ কিলোমিটার জায়গার মধ্যে আটটি স্টেডিয়ামের অবস্থান। ভৌগোলিকভাবে এটিই সবচেয়ে ‘আঁটসাঁট’ জায়গার বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ ইতিহাসে আর কখনো এত অল্প জায়গার মধ্যে সব ভেন্যু ছিল না।

স্বল্প জায়গার মধ্যে সব কটি মাঠের অবস্থান থাকায় খেলোয়াড়দের ভ্রমণক্লান্তি কমেছে। খেলোয়াড়দের জন্য এটা স্বপ্নের মতো ব্যাপার। আগের বিশ্বকাপেও প্রচুর ভ্রমণ করতে হয়েছিল। ম্যাচের পর আবার প্রস্তুত হয়ে ওঠাটা সহজ নয়।

প্রথম নারী রেফারি:
এবারই প্রথম ছেলেদের বিশ্বকাপে নারী রেফারি ম্যাচ পরিচালনা করছেন। ৬৪টি ম্যাচের জন্য মোট ৩৬ জন প্রধান রেফারির মধ্যে নারী আছেন তিনজন। ছেলেদের বিশ্বকাপে রেফারিং করা নারীদের মধ্যে রয়েছেন জাপানের ইয়োশিমি ইয়ামাশিতা, ফ্রান্সের স্টিফানি ফ্রাপার্ট ও রুয়ান্ডার সালিমা মুকানসাঙ্গা।

এ তিনজনের পাশাপাশি অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ব্রাজিলের নিউজা বেক, মেক্সিকোর কারেন ডিয়াজ মেদিনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাথরিন নেসবিত।

সব মিলিয়ে ভিন্নধর্মী এক বিশ্বকাপ দেখছে বিশ্ব।
এসএ/