এমবাপ্পের ফ্রান্স কি পারবে পেলের ব্রাজিল হতে?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:১৪ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০২২ সোমবার | আপডেট: ১২:১৮ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০২২ সোমবার
বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স। ২০১৮ বিশ্বকাপের পর আবারও। গত ছ’টি বিশ্বকাপে এই নিয়ে চতুর্থ বার। ইতিহাস বলছে, সেমিফাইনালে কোনোবারই আটকানো যায়নি ফ্রান্সকে।
গত ২৪ বছরে তারা যে কয়বার সেমিফাইনালে উঠেছে, প্রতিবারই ফাইনাল খেলেছে। এরমধ্যে ২০০৬ বিশ্বাকপ বাদে দুইবার কাপও জিতেছে। এবারও কিলিয়ান এমবাপ্পে-জিরুদরা যেভাবে খেলছেন, তাতে কাপ জেতার যোগ্য দাবিদার তারা। সেক্ষেত্রে পর পর দু’বার বিশ্বকাপ জয়ের নিরিখে ব্রাজিলকে ছোঁবে ফ্রান্স।
৬০ বছর আগে এই কীর্তি গড়েছিল পেলের ব্রাজিল। ফ্রান্সের সামনে হাতছানি রয়েছে টানা দু’বার বিশ্বকাপ জেতার।
সন্দেহ নেই, বিশ্বকাপের আগেই ট্রফির দাবিদার হিসাবে খেলতে নেমেছিল ফ্রান্স। কিন্তু অনেকেই তাদের এতদূর চলে আসা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। তার পিছনে মূল কারণ ছিলো একের পর এক ফুটবলারের চোট।
বিশ্বকাপের আগে প্রায়ই খবর আসতো, চোটে ছিটকে গেছেন ফ্রান্সের কেউ না কেউ। বাড়তে বাড়তে চোটের সংখ্যা বিশ্বকাপের আগেই গিয়ে দাঁড়ালো পাঁচে। পল পগবা, করিম বেনজেমা, অ্যাঞ্জেলো কন্তে, প্রেসনেল কিমপেম্বেরা।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই চোট পেয়ে ছিটকে যান লুকাস হার্নান্দেজ। তারপরেও কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ফ্রান্সের খেলা দেখে মনেই হয়নি, তাদের দলে কোনো ফুটবলারের খামতি রয়েছে। প্রতিটা পজিশনেই রয়েছেন একাধিক ফুটবলার।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, পর পর দু’বার বিশ্বকাপ জিতে ব্রাজিলের যে দলটি সেরা ছিলো, ফ্রান্সের এই দলটি কি তাদের সমকক্ষ? নাকি তার থেকেও বেশি?
যদিও এমন প্রশ্নের উত্তর পাওয়া কঠিন। কেননা, এক-এক প্রজন্মে এক-একটা দল সেরা থাকে। পেলের সময়ে তার দলই সেরা ছিলো। প্রচুর প্রতিভা ছিলো সেই দলে। তাদের মধ্যে কেবল পেলেই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পান। যদিও তার পাশে ছিলেন একজন করে ভাভা, ডিডি ও গ্যারিঞ্চা। এই ফ্রান্স দলেও সেটা দেখতে পাওয়া যাবে। এখানেও এমবাপ্পেকে নিয়ে মাতামাতি হয়। কিন্তু আতোয়ান গ্রিজম্যান, অলিভিয়ের জিরুদের কথাও ভুলে গেলে চলবে না।
১৯৫৮-র বিশ্বকাপে খেলার সময় পেলে নেহাতই ১৭ বছরের উঠতি ফুটবলার। কিন্তু সেই দলে ছিলেন গ্যারিঞ্চা, মারিয়ো জাগালো, নিলটন সান্তোস, ভাভা, ডিডির মতো প্রতিভাবানরা। তাইতো পেলে গ্রুপ পর্বের প্রথম দু’টি ম্যাচে না খেললেও ব্রাজিলের পারফরম্যান্সে কোনো প্রভাব পড়েনি। সবচেয়ে কম বয়সে ব্রাজিলের হয়ে ফাইনালে গোল করে নজির গড়লেও, সেই ব্রাজিল দলের সক্ষমতা ছিল পেলেকে ছাড়াই বিশ্বকাপ জেতার। গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করা ছাড়া আর কোনো হোঁচট ছিল না ব্রাজিলের। সেমিফাইনাল এবং ফাইনালের দুই প্রতিপক্ষ ফ্রান্স এবং সুইডেনকে পাঁচটি করে গোল দেয় তারা।
ব্রাজিলের যে দলটি ১৯৫৮ বিশ্বকাপ জিতেছিলো, সেই দলের মোটামুটি সব ফুটবলারই ছিলেন চার বছর পরের বিশ্বকাপেও। সঙ্গে যোগ হন আমারিলদো, জেকিনহা, কৌটিনহোর মতো নাম। সেবারেও ব্রাজিল গ্রুপের একটি ম্যাচে ড্র করে। কিন্তু নকআউটে তারা ছিল অপ্রতিরোধ্য। কেউ তাদের ধারেকাছে আসতে পারেনি।
পর পর দু’বার বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার নজির ছিলো উরুগুয়ের। ১৯৩০ এবং ১৯৩৪ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল তারা। কিন্তু পর পর দু’বার ট্রফি জেতার নজির প্রথম গড়ে ব্রাজিলই। এখনও পর্যন্ত তাদেরই সেই কীর্তি অক্ষুণ্ণ রয়েছে। মাঝে ১৯৬৬-র বিশ্বকাপ বাদ দিলে, ১৯৭০-এ আবার বিশ্বকাপ জিতে পাকাপাকিভাবে জুলে রিমে ট্রফি ব্রাজিলে নিয়ে যান পেলেরা।
অর্থাৎ ১৯৫৮ থেকে ১৯৭০-এই ১২ বছরে ব্রাজিল দলের ধারেকাছে আসতে পারেনি কেউ। এতোটাই দাপট ছিলো ব্রাজিলের সেই দলটির।
পর পর দু’বার ট্রফি জেতার রেকর্ডের কাছে আরও একবার পৌঁছে গিয়েছিল ব্রাজিল। ১৯৯৪ বিশ্বকাপ জেতার পর ১৯৯৮-সালেও ফাইনালে ওঠে তারা। কিন্তু জিনেদিন জিদান নামক এক অতিমানব ফুটবলারের কাছে হার স্বীকার করতে হয় রোনাল্ডো নাজারিও, রিভালদো-কাফুদের।
১৯৮৬ বিশ্বকাপে মিশেল প্লাতিনির দলের তৃতীয় স্থানে শেষ করা ছাড়া ফুটবলে ফ্রান্সের অতীত সাফল্য সেভাবে বলার মতো নয়। ফরাসী ফুটবলের গৌরবজনক অধ্যায়ের শুরুটা হয় ১৯৯৮ বিশ্বকাপ থেকেই। সেবার ফ্রান্সকে কার্যত একাই ট্রফি দিয়েছিলেন জিদান। ট্রফি জয়ের অন্যতম দাবিদার ব্রাজিলের বিপক্ষে ফাইনালে হেডে করা জিদানের সেই দু’টি গোলই বিশ্বজুড়ে অগণিত সমর্থকের হৃদয় ভেঙে খানখান করে দিয়েছিল।
একইসঙ্গে, বিশ্ব ফুটবল জেনেছিল নতুন এক ইউরোপীয় দেশের উত্থানের কাহিনী। বিশ্বকাপ জয়ের দু’বছর পরই ইউরো কাপও জেতে ফ্রান্স। সেই একই দল। সেই একই দাপট। ২০০২-সালে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিলেও ২০০৬-এ আবার ফাইনাল খেলে ফ্রান্স। পরের তিনটি বিশ্বকাপ বাদ দিয়ে ২০১৮-সালে আবার বিশ্বকাপ ওঠে তাদের ঘরে। এবার সব ঠিকঠাক থাকলে কাতারেও ট্রফি উঠতে পারে ফ্রান্সের হাতেই।
ফ্রান্সের এই দলটা খেলে টিমগেম। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এমবাপ্পেকে কড়া মার্কিং করা হলো। কিন্তু খেলা বের করে নিয়ে গেলেন গ্রিজম্যান, জিরুদরা। কমপ্যাক্ট ফুটবল বলতে যা বোঝায়, এই দলটির খেলা হচ্ছে সে রকমই। পুরোপুরি টিমগেমের ওপর নির্ভরশীল তারা। তাইতো কন্তে, পগবার মতো ফুটবলার ছিটকে যাওয়া সত্ত্বেও ভেঙে পড়েনি দেশমের শিষ্যরা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই গতিতে খেলে গেছে গোটা দল।
তাইতো পেলের সেই ব্রাজিল দলের মতো ফ্রান্সের এই দলটিও ক্ষমতা রাখে কাপ জেতার।
এনএস//