ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

ইতিহাস গড়া মরক্কোর রহস্য ফাঁস!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:৫০ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০২২ সোমবার

কাতার বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়েছে মরক্কো। আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ ফুটবলের সেমিফাইনালে পৌঁছেছে হাকিমি-বোফালরা। অবশেষে জানা গেলো আফ্রো-আরবিয় দেশটির এই অভূতপূর্ব সাফল্যের নেপথ্য কাহিনী!

মরক্কোর কাতার বিশ্বকাপের সেমিতে পৌঁছানোর পেছনে অবদান রয়েছে বিদেশে জন্ম নেওয়া এক ঝাঁক ফুটবলারের।

জানা গেছে, দলটির ২৬ জন ফুটবলারের মধ্যে ১৪ জনেরই জন্ম ভিন দেশে। কাতার বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ৩২টি দলের মধ্যে যা সব চেয়ে বেশি।

আসুন, জেনে নেওয়া যাক, ওই ১৪ জনের কার জন্য কোন দেশে?

ইয়াসিন বোনো: মরক্কোর একাধিক জয়ের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনোর। কানাডায় জন্ম তার। চলতি বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলে ফেললেও মাত্র একটি গোল হজম করেছেন তিনি। তাহলে বুঝতেই পারছেন, প্রতিপক্ষের জন্য কতটা 

আসরাফ হাকিমি: দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার আসরাফ হাকিমির জন্ম স্পেনের মাদ্রিদে। ক্লাব ফুটবলে লিওনেল মেসি, নেইমার, কিলিয়ান এমবাপ্পের সতীর্থ মরক্কোর আক্রমণ ভাগের অন্যতম ভরসা। 

সোফিয়ান ও সোফওয়ান: মিডফিল্ডার সোফওয়ান আমরাবতের জন্ম নেদারল্যান্ডসে। দলের আরেক মিডফিল্ডার সোফিয়ান বোফালের জন্ম ফ্রান্সে। 

এছাড়া বেলজিয়াম, জার্মানি, ইটালিতে জন্ম নেওয়া ফুটবলাররাও বিশ্বকাপে খেলছেন মরক্কোর হয়ে। 

১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপের আগে বিদেশে জন্ম নেওয়া মরক্কান বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের জন্য জাতীয় দলের দরজা খুলে দিয়েছে দেশটির সরকার। তারপর থেকেই ক্রমশ উন্নত হয়েছে মরক্কোর জাতীয় দলের পারফরম্যান্স।

রয়্যাল মরক্কান ফুটবল ফেডারেশন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধি রেখেছে প্রতিভা খুঁজে বের করার জন্য। বিদেশে জন্ম নেয়া মরক্কান বংশোদ্ভূত প্রতিভাবান কিশোরদের মরক্কোর হয়ে খেলার জন্য উৎসাহিত করেন তারা। 

আর এভাবেই মরক্কো পেয়েছে হাকিম জিয়াসকে। নেদারল্যান্ডসে জন্ম তার। পেশাদার ফুটবলে পা রাখার সময় দু’দেশের ফুটবল সংস্থার সঙ্গে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এক রকম দরাদরিও করেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত জন্মভূমিকে ছেড়ে বেছে নিয়েছেন মাতৃভূমিকে। 

আমরাবতও জুনিয়র পর্যায়ে নেদারল্যান্ডসের হয়ে কয়েকটি ম্যাচ খেললেও পরে বেছে নিয়েছেন মরক্কোকে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার বাবা-মা দু’জনেই মরক্কোর মানুষ। আমার পরিবারের অন্যরাও মরক্কোয় থাকেন। ছোট থেকে যখনই মরক্কোয় দাদা-দাদির কাছে যেতাম, একটা অন্যরকম অনুভূতি হতো। সবটা বলে বোঝাতে পারবো না। মনে হতো নিজের বাড়িতে এসেছি। আমার জন্ম নেদারল্যান্ডসে। নেদারল্যান্ডসেই আমার সব কিছু। তবুও মরক্কো আমার মনের বিশেষ জায়গায় রয়েছে।’

অন্য দেশে জন্ম নেওয়া প্রতিভাবান কিশোরদের মরক্কোর হয়ে খেলার জন্য উৎসাহিত করা কতটা সহজ? মরক্কোর হয়ে গত নয় বছর ধরে প্রতিভা খোঁজার কাজ করছেন বেলজিয়ামের ফুটবল কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুই। নিজেও অতীতে মরক্কোর হয়ে খেলেছেন। 

মরক্কো দলের কোচ বলেন, ‘‘এই বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত খুবই কঠিন ছিলো। সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুলতেন, কেন অন্য দেশে জন্ম নেওয়া ছেলেদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? মরক্কোয় জন্ম নেওয়া ফুটবলারদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। কেন ওদের নিয়েই জাতীয় দল তৈরি করা হচ্ছে না? কিন্তু এখন আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি যে, বিশ্বের সব মরক্কানই মরক্কোর জন্য। জাতীয় দলের হয়ে খেলার সময় সবাই-ই মরক্কোর জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত। মরক্কোর জন্য নিজেদের সেরাটা দিয়ে লড়াই করে। আমি এখন কোচিং করাই। আমার জন্ম ফ্রান্সে। কিন্তু নিজের দেশের থেকে বেশি জায়গা আর কিছুর জন্য নেই আমার হৃদয়ে।’’

ফুটবলের শ্রেষ্ঠ মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করার জন্য মরক্কোর এই কৌশল নতুন কিছু নয়। বিশ্বের বহু দেশই অন্য দেশে জন্ম নেওয়া প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে। কাতার বিশ্বকাপে এমনই ৩৮ জন ফুটবলার খেলছেন যাদের জন্ম ফ্রান্সে। তাদের ১৭ জন খেলছেন ফ্রান্সের হয়ে। বাকিরা খেলছেন অন্য কোনও দেশের হয়ে। এমন খেলোয়াড়রা অংশগ্রহণকারী ২৮টি দলেই রয়েছেন।

এনএস//